তানোরে ‘করোনা’য় জিআর বৈষম্যে ১৫ হাজার প্রতিবন্ধী

তানোর প্রতিনিধি

সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীর তানোরে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেনারেল রিলিফ (জিআর) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই বরাদ্দ বিভাজনের ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিরা প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে বৈষম্য আচরণ করেছেন। ফলে তানোর উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার কর্মহীন প্রতিবন্ধীরা ঘরে বসে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। সরকারী ভাবে অথবা কোন হৃদয়বান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এতোটুকু সাহায্য ও সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যায়নি তাদের কাছে।

বৃহস্পতিবার সকালে তানোর পৌরসভায় উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর মেয়র মিজানুর রহমান উপস্থিত থেকে ৩৬০জনকে ১০ কেজি কওে চাল দেওয়া হয়। কিন্তু কোন প্রতিবন্ধীকে চাল দেওয়াহয়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় মানবিক সহায়তা হিসেবে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্ততর হতে গত ২৪ ও ২৮ মার্চ জেনারেল রিলিফ (জিআর) প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ৬০০ মেট্রিকটন চাল তানোর উপজেলায় সরকারী বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বরাদ্দের এসব চাল বিভাজন করে উপজেলার সাত টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ও দুই পৌরসভায় মেয়রদের তালিকা মোতাবেক প্রত্যেক অসহায় অসচ্ছল ব্যক্তিকে ১০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা। সেইমতে বরাদ্দের এসব চাল গত ৩০ মার্চ উত্তোলন করে ৩১ মার্চ বিতরণ করতে দেখা গেছে। কিন্তু সরকারি বরাদ্দের এসব রিলিফের চাল উপজেলার কোন প্রতিবন্ধীকে দেয়া হয়নি।

তবে, এনিয়ে তানোর আন্দোলন প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি সামশুল আলম বলেছেন, বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার আন্তরিক। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইউনিয়ন ও পৌর পরিষদের মেয়র ও চেয়ারম্যানরা সরকারি সাহায্য ও সেবা প্রদানে উদাসিন। দেশের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতা ও বৈষম্যতা কখনো মেনে নেয়া যায় না! বর্তমান সরকার করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় মানবিক সহায়তা হিসেবে ‘জিআর’ প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক অসহায় অসচ্ছল ব্যক্তিকে ১০ কেজি করে চাল পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতায় প্রতিবন্ধীরা বৈষমের স্বিকার। এহেন প্রেক্ষাপটে সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠানকে প্রতিবন্ধীদের পার্শ্বে দাঁড়ানোর আহবান জানান তিনি।

ওই সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক আলম আলী আক্ষেপ করে বলেন, অসহায় অসচ্ছল ব্যক্তি বলতে প্রথমে প্রতিবন্ধীকে বোঝায়। বর্তমানে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ঘরের বাইরে বের হতে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। একারণে প্রতিবন্ধীরাও টানা ১৪ দিন ধরে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে। অনেক প্রতিবন্ধীর কোন কর্মক্ষমতা নেই। ভিক্ষাবৃত্তি ও সাহায্য সহায়তার উপর নির্ভর করে তাদের জীবন চলে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘরে অবস্থান করায় অনেক প্রতিবন্ধীদের ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ হয়ে পড়েছে।

বেসরকারি এক সংস্থার জরিপ মতে, তানোরে প্রায় ১৫ হাজারের উর্দ্ধে বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধী রয়েছে। এদের মধ্যে শুধু দুই হাজারের মতো প্রতিবন্ধী সরকার থেকে ভাতা পায়। তাও আবার সাড়ে ৩ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।

উপজেলার বাঁধাইড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেছেন, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় মানবিক সহায়তা হিসেবে ‘জিআর’ প্রকল্পের আওতায় অসহায় অসচ্ছল ব্যক্তিকে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে ওইভাবে বলা হয়নি।

তানোর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মতিনুর রহমান বলেছেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতিবন্ধীদের মানবিক সহায়তার জন্য সরকার ও কোন জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

তানোর পৌর মেয়র মিজান বলেন, ৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলারদের তালিকা মোতাবেক চাল দেওয়া হয়েছে। এখানে প্রতিবন্ধীদের তালিকায় নাম নেয়। তবে আমি নিজ থেকে তানোর পৌর এলাকার প্রতিবন্ধীদের খুজে বের করে তাদের সাহায্য করবো।

তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেছেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় মানবিক সহায়তার জন্য ‘জিআর’ প্রকল্পের বরাদ্দের মধ্যে প্রতিবন্ধীরা থাকবে। ইউপি চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়ররা তালিকায় দিয়েছে সে মোতাবেক বিতরণ করা হচ্ছে। বিষয়টি আমি দেখবো।

স/অ