তাইওয়ান নিয়ে আমেরিকার আসলে নীতিটা কী?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরকে কেন্দ্র করে চীন, তাইওয়ান এবং আমেরিকার মধ্যে এখন উত্তেজনা তুঙ্গে।

পেলোসির ওপর ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীন। জলবায়ু, সামরিক, মাদক চোরাচালান বন্ধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত করেছে তারা। সেই সঙ্গে তাইওয়ানের চারপাশে শনিবার তৃতীয় দিনের মতো সামরিক মহড়া চালাচ্ছে। এ কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক দেশের এয়ারলাইনস তাইওয়ানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলছে।

চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড তাইওয়ান প্রণালিতে মহড়া চালাচ্ছে। তারা বলছে, সেনাদের সক্ষমতা যাচাইয়ে তাইওয়ানের উত্তর, দক্ষিণ-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে আকাশ ও সমুদ্রে এই মহড়া চলছে।

আসুন জেনে নেওয়া যাক ‘চীন, তাইওয়ান ও আমেরিকা’- এই তিন দেশের দীর্ঘ সম্পর্কের ইতিহাস কতটা যথেষ্ট জটিল।

দুই দেশের জন্ম

১৯৪৯ সালে চীনের গৃহযুদ্ধের পর দু’টি স্বঘোষিত চীনা রাষ্ট্রের জন্ম হলো। পিপলস রিপাবলিক অব চায়না (পিআরসি) বা গণপ্রজাতন্ত্রী চীন এবং তাইওয়ান ভিত্তিক রিপাবলিক অব চায়না (আরওসি)। পিআরসি’র ঘোষণা হলো বেইজিংয়ে, করলেন মাও জেদং।

দীর্ঘদিনের স্থিতাবস্থা

পিআরসি’র নিয়ন্ত্রক হলো চীনা কমিউনিস্ট পার্টি। কিন্তু তাইওয়ানের ক্ষেত্রে তাদের কোনও নির্দেশ চলে না। তাইওয়ানের শাসকরা ১৯৯০ থেকে গণতান্ত্রিক পথে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। তাদেরও পিআরসি’র উপর কোনও প্রভাব নেই। বহুদিন ধরে এই স্থিতাবস্থা চলেছিল।

অবস্থার পরিবর্তন

২০০৫ সালে অবস্থার পরিবর্তন হলো। চীন বিচ্ছিন্নতা-বিরোধী আইন পাস করলো। সেখানে বলা হলো- তাইওয়ান যদি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে, তাহলে চীনা সেনাবাহিনীর সেখানে গিয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার আছে। এরপর চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়লো।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

১৯৭০-এর প্রথমভাগ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক স্তরে তাইওয়ানের পরিচিতি ছিল রিপাবলিক অব চায়না হিসাবে। কিন্তু ১৯৭১ সালে জাতিসংঘে ভোটাভুটি হলো এই নিয়ে যে, পিআরসি বা গণপ্রজাতন্ত্রী চীনই একমাত্র সেখানে থাকবে। এরপর ভ্যাটিকান-সহ মাত্র ১৪টি দেশ তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেয়।

আমেরিকার সিদ্ধান্ত

১৯৭৯ সালে আমেরিকা জানায়, তারা একমাত্র গণপ্রজাতন্ত্রী চীনকেই স্বীকৃতি দিচ্ছে। কিন্তু মার্কিন কংগ্রেসে তাইওয়ান রিলেশনস আইন পাস হয়। সেখানে বলা হয়েছে, তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে যাবে আমেরিকা। ওই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে আমেরিকা দায়বদ্ধ থাকবে।

মার্কিন পার্লামেন্ট সদস্যদের মত

দলমত নির্বিশেষে মার্কিন পার্লামেন্ট সদস্যরা মনে করেন, তাইওয়ান যেন বেইজিংয়ের কাছে আত্মসমর্পন না করে। ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময়, আমেরিকা ও তাইওয়ান হাত মিলিয়ে কমিউনিস্ট চীনের বিরোধিতা করেছে। চীনের যত উত্থান হয়েছে, আমেরিকা ততই তাইওয়ানের পাশে থেকেছে।

পেলোসির সফর

মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে গিয়ে বলেছেন, “আমাদের প্রতিনিধিদল তাইওয়ান এসে একটা কথা স্পষ্ট করে দিতে চায়, তা হলো- আমরা কখনওই তাইওয়ানকে পরিত্যাগ করব না। আমাদের দীর্ঘ সম্পর্ক নিয়ে আমরা গর্বিত।”

চীনের দাবি

চীন দাবি করে, তাইওয়ান তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তারা বারবার ‘ওয়ান চায়না’ বা ‘এক চীন’ নীতির কথা বলে। যেভাবে হংকং এখন চীনের অংশ, সেইভাবেই তাইওয়ানকেও নিজেদের অংশ করতে চায় চীন। কিন্তু তাইওয়ানের বক্তব্য- হংকংয়ের ক্ষেত্রে দুই পক্ষই তাতে রাজি ছিল। কিন্তু তাইওয়ান কখনওই চীনের সঙ্গে মিশে যেতে রাজি নয়। তারা আলাদা অস্তিত্ব বজায় রাখতে চায়।

জনগণ বিভক্ত

চীনের সঙ্গে মিশে যাওয়া নাকি স্বাধীনতা ঘোষণা, কোনটা করা উচিত, তা নিয়ে তাইওয়ানের সাধারণ মানুষ বিভক্ত।

অনড় চীন

তাইওয়ান সরকার এখন নিজেদের আইল্যান্ড অব তাইওয়ান বলে। এতে চীনের প্রবল আপত্তি। তাদের দাবি, আগের মতো রিপাবলিক অব চীন বলা উচিত। বেইজিং তাইওয়ানের আলাদা জাতীয় সংগীত ও পতাকাও মানে না।

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন