তলিয়ে যাচ্ছে আড়িয়ল বিল, ধান কাটায় অনিশ্চয়তা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

আড়িয়ল বিলের প্রায় ২৪ হাজার একর জমির পাকা ধান কাটা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এদিকে প্রতি বছরের স্বাভাবিক নিয়মে আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই পানিতে তলিয়ে যাওয়া শুরু হবে বিলটির বিস্তীর্ন অঞ্চল। বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় সেই আশঙ্কাই করছেন কৃষকরা।

করোনাভাইরাসের কারণে দেশব্যাপী অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় এ অনিশ্চয়তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। শ্রমিক সংকটে দিশেহারা কৃষকদের কাপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও ঢাকার দোহার নবাবগঞ্জের প্রায় ২৬ হাজার একর আয়তনের আড়িয়ল বিলে প্রায় ২৪ হাজার একর জমিতেই ধান চাষ হয়। এখন এ ধান কেটে গোলায় তুলতে না পারলে আগামী বছর তা দেশের খাদ্য উদ্বৃত্ত ঘাটতি হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিলটিতে প্রতিবছর ধান উৎপাদনের পরিমান প্রায় ৪০ হাজার টন। বৈশাখ মাসের প্রথম দিকে ধান কাটা শুরু হয়ে তা ১৫ দিনের মধ্যে শেষ করতে হয়। তা না হলে বিলের অধিকাংশ জমি নীচু হওয়ায় বৃষ্টি ও বর্ষার নতুন পানিতে ধান তলিয়ে যায়।

গত দুই দিনে বৃষ্টি হওয়ায় আড়িয়ল বিলেন শ্রীনগর, শ্যামসিদ্ধি, গাদিঘাট, মত্তগ্রাম, মুন্সীর হাটি, ষোলঘর, সমসাবাদ, কেয়টখালী, মাইজপাড়া, হাঁসাড়া, লস্করপুর, পুটিমারা, আলমপুর, শ্রীধরপুর, বাড়ৈখালী, মদনখালী, কালাইমারা, মরিচ পট্টি সহ বিলপাড়ের কৃষকদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

শ্রীনগর উপজেলার গাদিঘাট গ্রামের প্রান্তিক চাষী নাজিমউদ্দিন মোড়ল জানান, প্রতিবছর ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও নাওডোবা থেকে এই এলাকায় অন্তত দেড়-দুইশ ট্রলার নিয়ে শ্রমিকরা ধান কাটতে আসে। একটি ট্রলারে শ্রমিকদের ১৫-২০ জনের একটি দল থাকে। তারা চুক্তিতে ধান কাটে বলে চাষীদের তেমন বেগ পেতে হয়না। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে তারা এখন আসতে পারছেনা।

একই এলাকার ওয়াসেক ঢালী বলেন, বছরের এই সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আড়িয়ল বিলের ধান কাটতে শ্রমিকরা শ্রীনগর এসে জড়ো হয়। ছোট চাষীরা সেখান থেকে দিন মজুরী ও ৩ বেলা খাবারের বিনিময়ে ৪-৫জন করে শ্রমিক এনে ধান কেটে ঘরে তুলে। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় এবার আর এই সুযোগ নেই। কিন্তু ধানতো ঘরে তুলতে হবে।

মুন্সীর হাটি গ্রামের বর্গাচাষী সোহরাব শেখ বলেন, ৭ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ধার দেনা করে সার, নিরানী, কিটনাশকের টাকা জোগার করেছি। প্রায়দিনই জমিতে গিয়ে ফলন দেখে আসতাম। এখন বাড়িতে বসে বিলের পাকা ধান দেখি। এই ধান কিভাবে কাটব? ধান ঘরে তুলতে না পারলে ধার শোধ করব কিভাবে আর সারা বছর সংসারইবা চালাবো কিভাবে তা চিন্তা করলে কিছু ভাল লাগে না।

বাড়ৈখালী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি কায়সার আহমেদ রনি জানান, বিলে তার অনেক জমি রয়েছে। প্রান্তিক কৃষকরা এগুলোতে ধান চাষ করেছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে তারা এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। সরকার তাদের শ্রমিকের ব্যবস্থা করে দিতে পারলে মানুষগুলো বাঁচতে পারবে।

শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসের উপ সহকারী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, আড়িয়ল বিলের শ্রীনগর অংশে প্রায় ৯ হাজার ৬শ একর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে এখানে শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে।

শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াহিদুর রহমান জিঠু জানান, তার বাড়ি আড়িয়ল বিলের পাড়ে। বিলের ধানের ওপর নির্ভর করে যে সকল চাষীদের সারা বছর সংসার চলে তারা খুব চিন্তায় পড়ে গেছে। ধান কাটার জন্য এখনই শ্রমিক আনার সুযোগ করে দিতে না পারলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তা তলিয়ে যেতে পারে। তাতে বহু কৃষক পথে বসে যাবে।

শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আড়িয়ল বিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মোঃ মসিউর রহমান মামুন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশে এমনিতেই খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে, তার ওপর আড়িয়ল বিলের ধান কৃষক ঘরে তুলতে না পারলে এই অঞ্চলে খাদ্য সংকট আরো প্রকট হতে পারে। ধান কাটা নিয়ে কৃষকরা খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে নীতি নির্ধারকদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি। ধান কাটার জন্য শ্রমিক আনার বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে বড় আকারের ক্ষতি হয়ে যাবে।