তরুণদের উদ্যোগী হতে হবে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

প্রতিবার বিজয় দিবস বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী নতুন তাৎপর্য নিয়ে সামনে আসে। এবারের তাৎপর্য কী? এবারের বাস্তব অবস্থার বৈশিষ্ট্যই বা কী?

 

রাজনৈতিক দল, দলাদলি, ক্ষমতার লড়াই আছে। তবে অনেক কিছুই যেন কাল্পনিক। দেশে সরকারি দলের বাইরে আর কোনো দলের রাজনৈতিক চিন্তা, বক্তব্য, কর্মসূচি নেই। জনগণের কাছে নেই কোনো কমিটমেন্ট। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এসব কথার কি কোনো অর্থ আছে? জনগণের কাছে কী আবেদন আছে এসব বড় বড় বুলির? স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রচারমাধ্যমের সহযোগিতা নিয়ে হুজুগ তৈরি করা হয়। মানুষ হুজুগে মাতে। স্বার্থান্বেষীরা স্বার্থ হাসিল করে নেয়। একসময় বলা হতো হুজুগে বাঙালি। বিএনপি পরিচিত হয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি বলে। প্রচারজগতে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিরূপে খুব সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।

 

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বক্তব্য কী? আওয়ামী লীগ অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচার করে। তারা বলে দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন চলছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মোট জাতীয় আয়, মাথাপিছু গড় আয় বাড়ছে। রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামো উন্নয়ন দ্রুত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীসহ বিভিন্ন উদযাপন উপলক্ষে জাঁকজমকের সঙ্গে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে আসছে। এগুলাতে আওয়ামী লীগের কমিটমেন্ট আছে। প্রচার প্রচারণা বেড়েই চলেছে। প্রায় দুইশত বছর আগে এক কবি লিখেছিলেন ‘এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গ ভরা’। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় তিনি লিখেছিলেন ‘ভারতের প্রিয় পুত্র হিন্দু সমুদয়/ উচ্চমুখে বস করে ব্রিটিশের জয়’। এখনকার করায়ত্ত সময়ের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সাড়া দিয়ে থাকে।

 

তবে ১৯৮০-এর দশক থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত কালে তাদের যে সক্রিয়তা ছিল, তা এখন অবদমিত হয়ে গেছে। আর দুই বছর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। পরিস্থিতি খুব শান্ত দেখা যাচ্ছে। শান্ত পরিস্থিতি আর শান্তি কাম্য। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে দল চালাচালি আছে। তাতে অশান্তি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। জঙ্গিবাদের যে কর্মকাণ্ড চলছিল, তা দমন করতে সক্ষম হয়েছে সরকার। মনে হয় সরকার ধর্মের পক্ষে-বিপক্ষে মাতামাতি করতে চায় না। সরকার স্ট্যাটাস ক্যু রক্ষা করে চলতে চায়।

 

ডানপন্থী-বামপন্থী সব দলই বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সব প্রতিষ্ঠান মার্কিন অনুসৃত নীতি মেনে নিয়ে স্ট্যাটাস ক্যু রক্ষা করে চলতে চায়। ছক বাঁধা বক্তব্যের বাইরে ভিন্ন কোনো বক্তব্য বাম-ডান কোনো দলের মধ্যেই নেই। যে, যে দলই করেন সবাই নেতানেত্রীর মুখ চেয়ে কথা বলেন। পরিবারতন্ত্র, ধর্মের পুনর্জীবন ইত্যাদি চলছে গণতন্ত্রের নামে। কোথাও কোথাও কখনো কখনো দুষ্কৃতকারীরা দুর্বল, দরিদ্র, হিন্দু বাড়ি ও হিন্দু মন্দির লুট করছে। আইন প্রয়োগ করে কঠোরভাবে এসব অপশক্তিকে শাস্তি দেওয়া দরকার।

 

রাজনৈতিক মহল থেকে এসব ঘটনাকে সাম্প্রদায়িকতা বলে এবং এসব দুষ্কৃতকারীদের সমাদর করে সাম্প্রদায়িক বলে, সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করার জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতা কী? যত্রতত্র সাম্প্রদায়িকতা কথাটা ব্যবহার ঠিক নয়। গণতন্ত্রকে সফল করা দরকার। কিন্তু গণতন্ত্র বিষয়ে চিন্তা অত্যন্ত দরিদ্র। এই অবস্থার মধ্যে এবার বিজয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। নানা প্রশ্ন নানাজনের মধ্যে জেগেছে।

 

চলমান উদার গণতন্ত্রের পরিবর্তে সর্বজনীন গণতন্ত্র ও উন্নত শক্তিশালী রাষ্ট্রব্যবস্থা আমাদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় তত্ত্ব আমাদের উদ্ভাবন করতে হবে। রাজনীতিকে দুর্নীতিমুক্ত করার কর্মনীতি গ্রহণ করতে হবে। সর্বজনীন গণতন্ত্রের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন কাঠামোর ও ভিন্ন চরিত্রের রাজনৈতিক দল লাগবে। দল থেকে নেতৃত্ব গঠিত হয়। রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রবিরোধী হলে, শিক্ষাব্যবস্থা গণবিরোধী হলে, রাজনৈতিক দলের সর্বজনীন চিন্তা না থাকলে, বিচার যদি বাইরের নির্দেশে ও প্রভাবে পরিচালিত হয়, তাহলে স্বাভাবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না।

 

দুনিয়াব্যাপী শত জাতির রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সর্বজনীন গণতন্ত্র অবলম্বন করে পুনর্গঠিত করা, আর জাতীয়তাবাদ ও তার সম্পূরক আন্তর্জাতিকতাবাদ অবলম্বন করে বিশ্ব ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করা খুব জরুরি। এই দুটি কাজই এখন বিশ্বব্যাপী সময়ের দাবি। কিন্তু কায়েমি স্বার্থবাদীরা পৃথিবীর কোথাও এ নিয়ে চিন্তা করছেন না। তাঁরা স্ট্যাটাস ক্যু রক্ষা করার মতো করে অবিচারের প্রতিবাদ করছে মাত্র। এ নিয়ে দরকার সমর্থক, গঠনমূলক এবং আন্তর্জাতিক আন্দোলন। প্রত্যেক জাতির মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে আন্দোলন চালাতে হবে।

 

এ ধরনের চিন্তা ও কাজ আমাদের এই কথা ও কাজ থেতে আরম্ভ করা যেতে পারে। তরুণরা এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে পারেন। আমার মনে হয় এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল।

 

লেখক : সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সূত্র: এনটিভি