তবে কি বন্ধ হয়ে যাবে বৃষ্টির পড়াশোনা?

আমানুল হক আমান:
জন্মের পর থেকেই জীবনের সঙ্গে প্রতিটি মূহুর্ত লড়াই করে চলেছে। তবুও লেখাপড়ার হাল ছাড়েনি। পিছু সরেনি লড়াই থেকে। বড় হওয়ার স্বপ্নকে ঘিরেই সংগ্রাম করে যাচ্ছে। নিজের চেষ্টায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলায় প্রথম হয়েছে সাদিকা ইয়াসমিন বৃষ্টি। তার ফলাফলে খুশি হয়েছে পরিবারসহ স্কুলের শিক্ষক ও প্রতিবেশিরা। তবে অর্থাভাবে সেই আনন্দ এখন বিষাদে পরিণত হচ্ছে তার। আগামির পুরোটা পথ তার অনিশ্চিত। দারিদ্রতার কারনে আগামী দিনের উচ্চ শিক্ষার খরচের চিন্তায় বাবা-মা ও তার চোখ মুখে হতাশার ছাপ। এবার কি বন্ধ হয়ে যাবে বৃষ্টির পড়াশোনা?

 
সাদিকা ইয়াসমিন বৃষ্টির বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের হাজিপাড়া গ্রামে। বাবা শহিদুল ইসলাম একজন দিনমুজুর। মা নাসিমা বেগম গৃহিনী। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে বৃষ্টি ছোট। অভাবের কারণে বড় ভাই নাসির ও বোন হাসিকে পড়া-লেখা করাতে পারেনি পরিবার। বৃষ্টির বড় ভাইয়ের আয়ে চলে সংসার। তাদের জমি বলতে বাড়ি ভিটাটুকুই। কিন্তু এখন উচ্চ শিক্ষার খরচ বহন করাটা পরিবারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে।

 
বৃষ্টির বাবা-মা জানে না জিপিএ-৫ কী। তবে তারা জানান, মেয়ে ভালো ফলাফল করেছে। সে আরও পড়তে চায়। তাই তারা এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খরচ নিয়ে। স্বল্প আয়ে চলে চার সদস্যের পরিবার। মা নাসিমা শুধু এইটুকু জানেন লেখা-পড়া করতে গিয়ে তার মেয়েকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।

 
২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে বৃষ্টি। এসএসসি পরীক্ষার মতো স্কুল জীবনের সব পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা বৃষ্টি ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে গরিব অসহায়দের সেবা করতে চায়। কারও কাছে একটু আর্থিক সহযোগিতা পেলে হাসি ফুটাবে বৃষ্টির মুখে।

 
সাদিকা ইয়াসমিন বৃষ্টির ভাষ্যে, প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পড়া-লেখা করেছি। পাশাপাশি প্রতিবেশী ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়েছি। আবার কখনও কখনও মায়ের সাথে হাতের কাজ করেছি। এই আয় থেকে নিজের পড়া-লেখা খরচের পাশাপাশি সংসারে খরচ করেছি।

 
মনিগ্রাম বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোয়ারুল ইসলাম বাবুল সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, উপজেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে বৃষ্টি। আগামীতে অর্থের অভাবে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা বড়ই কষ্টের। বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীর চেয়ে আলাদা মেধা সম্পূর্ণ ছিল বৃষ্টি। তবে তার জন্য সমাজের শিক্ষানুরাগী কোন সুহৃদ ব্যাক্তির একটু সহযোগিতা পেলে তার উচ্চ শিক্ষার পথ নিশ্চিত হতে পারে।

স/শ