তবুও রামেকে নবজাতক চুরি!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পুরো রামেক হাসপাতালের জুড়ে ৭৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা। রয়েছেন, ১০০ আনসার সদস্য ছাড়াও কাজ করেন নিরাপত্তা কর্মীরা। এতোগুলো চোখ ফাঁকি দিয়ে নবজাতক চুরি! এমন চুরির ঘটনা রহস্য সৃষ্টি করেছে। হাসপাতালটিতে এমন নবজাতক চুরির ঘটনা নতুন নয়। যদিও গাইনি ওয়ার্ডগুলো থাকে আনসার পাহারায়। এমন অবস্থায় রোগি ও তাদের স্বজনদের নিরাপত্তায় এতো আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

চিকিৎসাধীন রোগির স্বজনরা বলছেন, শুধু গেটেই নিরাপত্তা জোরদার। তাই পাস ছাড়া হাসপাতালের ভেতরে কোনো রোগি ও তাদের স্বজনরা প্রবেশ করতে পারেন না। তার পরেও নবজাতক চুরি হচ্ছে। তাহলে ওয়ার্ডগুলোতে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

হাসপাতালটির উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, ‘শুধু গাইনি ওয়ার্ডগুলো ঘিরে ৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। আর পুরো হাসপাতাল জুড়ে ৭৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। আর চুরি হওয়া নবজাতকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলে তিনি জানান।’

জানা গেছে, শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হাসপাতালের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তিন দিনের নবজাতক চুরির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় সন্তানকে ফিরে পাওয়া নিয়ে ওই দম্পতির মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। তারা নাড়ি ছেঁড়া ধন ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে- চুরি যাওয়া নবজাতকের মা শিল্পী রবিদাস সিজারিয়ানের মাধ্যমে কন্যা শিশুটির জন্ম দিয়েছিলেন। এটি ওই দম্পতির প্রথম সন্তান। তার স্বামী মাসুম রবিদাস। মাসুম রবিদাস পেশায় মুচির কাজ করেন। তিনি জানান, ‘চুরির সময় ঘুমিয়ে ছিলেন তার স্ত্রী। আর তিনিও ছিলেন না পাশে।’

তিনি আরও জানান, ‘বুধবার (২০ জানুয়ারি) রাত ৮:৫৬ মিনিটে জন্ম নেয় তাদের কন্যসন্তান। এর পরে রাতে মিনি ওটিতে ছিলেন মা-সন্তান। বারান্দায় পাহারায় ছিলেন নিজেই। সকালে ওয়ার্ডে দিয়েছেন চিকিৎসক। সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলো। আমি (মাসুম) সকালে বাজারে গিয়েছিলাম। সেখানে শ্বাশুড়ি মা ফোন দিয়ে বলে ‘বাবু’ হারিয়ে গেছে। আমি হাসপাতালে এসে শুনি সত্য। আমার মা হারিয়ে গেছে। এখনও খুঁজে পেলাম না তাকে।’

রাজপাড়া থানার (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানান, নবজাতকে উদ্ধারের চেষ্টায় হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। সব থানাকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, নবজাতকে উদ্ধারের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।

জানা গেছে- এর আগেও হাসপাতালটিতে নবজাত চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় তদন্ত কমিটিও করার মত ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে ২২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নবজাত চুরির ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগি গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাট পৌর এলাকার শনশনি পাড়ার তরিকুল ইসলামের স্ত্রী রুবিনা বেগম।

ভর্তির পরদিন দুপুরে রুবিনা সিজার করে কন্যাশিশুর জন্ম দেন। ওয়ার্ডে আনার পরে নবজাতকটি চুরি হয়।
এই ঘটনা তদন্তে সেই সময়ে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান আবদুল মোমেনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকালে প্রসবের পর রাতেই হাসপাতালের ২২ নম্বর ওয়ার্ড (গাইনি) থেকে নবজাতক চুরি হয়। ভুক্তভোগিরা জেলার বাগমারা উপজেলা সমাসপুর এলাকার তোফাজ্জলের স্ত্রী রোজিনা। রোজিনা কন্যাসন্তান প্রসবের পরে ২২ নম্বর ওয়ার্ডে শিশু ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সন্ধ্যায় নানী শাহিদা শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়ার জন্য ২২ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ে যান। সেখানেই শিশুটিকে চুরি হয়।

রামেক হাসপাতালের আনসার কমান্ডার দুলাল আলী জানান, ‘তাদের ১০০ আসনার সদস্য কাজ করেন হাসপাতালে। তারা গেটসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।

স/আ