ঢাকা থেকে সাইকেল চালিয়ে আসা সেই করোনা রোগী সুস্থ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ঢাকা থেকে সাইকেল চালিয়ে বরগুনায় আসা সেই করোনা রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সুস্থ করোনা রোগীর নাম মনিরুজ্জামান বাদশা। তার গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের খাজুরা। এ পর্যন্ত বরগুনায় পাঁচজন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এখনও ২৩ রোগী চিকিৎসাধী।

বুধবার বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের প্রধান চিকিৎসক কামরুল আজাদ বলেন, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ১৬ দিন চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার দুপুরে তাকে সুস্থতার ছাড়পত্র দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর পর বরগুনা জেলা পুলিশ তাদের নিজস্ব পরিবহনে ওই ব্যক্তিকে তার নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেয়।

তিনি বলেন, যথাসময়ে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা পাওয়ায় ওই ব্যক্তি সুস্থ হয়েছেন।

উপসর্গ অনুযায়ী আমরা তাকে চিকিৎসা দিয়েছি। আমাদের সাধ্য অনুযায়ী তাদের সংস্পর্শে থেকে চিকিৎসা দিয়েছি। তবে আমরা সব থেকে বেশি যা করেছি, তা হলো তাকে মানসিক ভাবে সাহস দিয়েছি। ভেঙে পড়তে দেইনি। সবসময় উৎসাহ যুগিয়েছি।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সুস্থ হয়ে বাড়িফেরা বাদশা ঢাকার সাভারের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। গত ৫ এপ্রিল তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়।

এর পর দেশব্যাপী চলমান অঘোষিত লকডাউনের মধ্যে একটি সাইকেলে করে ৭ এপ্রিল বরগুনার নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন বাদশা। সাইকেলে তিন দিনের যাত্রা শেষে ১০ এপ্রিল সন্ধ্যায় বরগুনার নিজ বাড়ি পৌঁছান তিনি।

কিন্তু স্বজনদের অনুরোধ উপেক্ষা করে অসুস্থ শরীরে চিকিৎসা না নিয়ে বাড়িতে আসায় তাকে ঘরে ওঠতে দেয়নি তার স্ত্রী। পরে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেন বাদশা।

পরে খবর পেয়ে পুলিশ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে বাদশা সাইকেল চালিয়ে বরগুনা আসার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বাদশাকে ঘিরে পুরো দেশজুড়ে নানা আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়।

আরও জানা যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ১২ এপ্রিল সন্ধ্যায় ওই ব্যক্তিকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে বরগুনা জেলা পুলিশ। এর পর ওই দিনই তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

দুদিন পর ১৪ এপ্রিল তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এর পর থেকেই বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন মনিরুজ্জামান বাদশা।

এদিকে করোনাযোদ্ধা বাদশা বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন। তিনি শুধু এ টুকু বলেছেন– অসুস্থ অবস্থায় এমনিভাবে দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়া ঠিক হয়নি। এ জন্য তিনি লজ্জিত এবং এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. সোহরাব উদ্দিন খান যুগান্তরকে বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি রোগীদের সাধ্যমতো সেবা দেয়ার। করোনা ভাইরাসের নির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও লক্ষণ দেখে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। সার্বক্ষণিক তাদের নজরদারিতে রেখেছি।

এসব কারণে আমরা এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে সুস্থ করে তুলতে সক্ষম হয়েছি। এই কৃতিত্ব বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সব চিকিৎসক, টেকনোলজিস্ট, ওয়ার্ড ইনচার্জ এবং নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা।

বরগুনায় এখন পর্যন্ত ৩০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে চার নারী ও তিনজন শিশু রয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন দুজন।

সূত্র: যুগান্তর