কতগুলো জীবন থেমে গেলো। যারা বেঁচে যাবেন, তাদের যন্ত্রণা আর হাহাকার থাকবে সারাজীবন। নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণের পর এখন পর্যন্ত সন্দেহ, গ্যাসের লিকেজেই ঘটেছে প্রাণঘাতি ওই ঘটনা।
এদিকে রাজধানী ও আশপাশে অনেক এলাকা আছে, যেখানে মাটি না খুঁড়ে শিশুরাও বলে দিতে পারে লাইনে লিকেজ, বিপদ আছে। এরকমই এক জায়গা দেখিয়ে এক শিশু বলে, ‘এক বছর ধরে এখানে গর্ত করা ও গ্যাস বের হচ্ছে। কেউ যদি সিগারেট খেয়ে এখানে ফেলে তাহলে আগুন ধরে যাবে। অনেক দুর্গন্ধও আছে।’
টঙ্গীর ভাদাম রোডের ভাঙ্গাচোড়া সড়কের মতই এর নিচ দিয়ে তিতাস গ্যাসের যে পাইপ বসানো হয়েছে তাও দুর্বল ও মরচেপড়া। এখান দিয়ে চলার সময় গ্যাসের গন্ধ নাকে এসে লাগে। আর বৃষ্টি হলে বুদবুদ আকারে তা বের হতে থাকে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘বৃষ্টি হলে এখান থেকে বুদবুদ আকারে গ্যাস বের হয়। কেউ দিয়াশলাই জ্বালিয়ে ওখানে ফেললে আগুন আর ধোয়ার মত হয়।’
বিতরণ প্রতিষ্ঠান তিতাসের হিসেবে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় মোট ১০ লাখ রাইজার রয়েছে। এই ব্যবস্থার ৭ ভাগ রাইজারে লিকেজ পেয়েছে তারা। তবে, অগুনতি অবৈধ সংযোগ এবং মরচেধরা পুরোনা লাইন এই হিসাবে বাইরে।
তিতাস গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী আব্দুল ওয়াব বলেন, ‘যেহেতু আমাদের যে ক্যারিয়ার গ্যাস, সেটায় বিস্ফোরক থাকে তাই আমরা এমএস পাইপটা ব্যবহার করি। এই পাইপ আবার মাটির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যেটা অল্প সময়ে মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। যার জন্য আমরা পাইপের ওপর র্যাপিং করে দেই। এই র্যাপিংটা যদি থার্ড পার্টি ড্যামেজ করে দেয়, তখন তো আমরা মাটির ভেতর থেকে এটাকে সেভ করতে পারিনা। অপরিকল্পিত বাড়িঘরে অপরিকল্পিত এই ইউটিলিটি লাইনগুলো বসানোর জন্যই আমরা আজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। প্রায় ৪ লক্ষ রাইজার আমরা অনুসন্ধান করেছি। এরমধ্যে ৭ শতাংশের বেশি রাইজারে আমরা লিকেজ পেয়েছি। আর কোন লিকেজ আসছে কিনা তার জন্য এই ৪ লক্ষ রাইজারকে আমরা মনিটরিং করছি।’
তবে, নিয়মিত তদারকি করা হয়, তিতাসের এমন দাবিতে আস্থা নেই ভোক্তা অধিকার সংগঠন-ক্যাবের। সংগঠনটির জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক সামসুল আলম বলেন, ‘একটা রাইজার থেকে ১০-১২টা কানেকশন দিয়ে তারা পয়সা নিচ্ছে। ৭০ হাজার লিকেজ থাকলে তারা শুধু জনগণকেই গ্যাস দিচ্ছেনা, ঢাকার বায়ুমন্ডলেও তারা গ্যাস বিলিয়ে দিচ্ছে। যে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমাদের সেবা করার কথা, সেই নেটওয়ার্কের এরকম বিপর্যয় করে, মৃত্যুফাঁদ করে আমাদের জীবন দিতে হচ্ছে। আমরা বলছি এ ঘটনা হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে।’
গ্যাস লিকেজ এবং অবৈধ সংযোগের ফলে প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে। যার চুড়ান্ত দায় নিতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের।