ঢাকায় নতুন এক জাদুঘর

স্বর্ণখচিত জুতা
সিল্কের কাপড়ে বানানো জুতার ওপর সোনার পাতের নকশা। কোথাও গোলাকার বা চারকোনা সোনার টুকরা ব্যবহার করে নকশা করা হয়েছে। জাদুঘরের সভাপতি জিনাত পারভীন বললেন, ‘জুতা মায়ের পায়ে একটু বড় হতো। সামনে তুলা দিয়ে পরতেন।

kalerkantho

সোনায় মোড়া শাড়ি
ওড়নার সারা গায়ে সোনার পাতের নকশা। জমিনের মাঝখানে কোথাও ছয় পাপড়ির ফুল, কোথাও বা চার পাপড়ির। পাড় ও আঁচলের কোনায় বড় বড় ফুল-পাতার নকশা। সিল্কের শাড়িটি ভাঁজ করার কারণে বেঁকে গেছে শক্ত সোনার পাত। একই কাপড়ের ব্লাউজের গলা, হাতা ও ওড়নায় সোনার কারুকাজ দেখার মতো। ৮০ বছর আগের ব্লাউজ, কিন্তু দেখলে মনে হবে, ফ্যাশনের দিক থেকে এখনকার চেয়েও এগিয়ে। খাটো হাতার নিচের দিকে ইঞ্চি চারেক বাড়তি কাপড় ঝোলানো। স্বর্ণখচিত এই শাড়ি, একলাই (নতুন বউয়ের মুখ ঢেকে রাখার রুমাল)), জুতা ও শেরোয়ানি আনা হয়েছিল মুম্বাই থেকে।

kalerkantho

বৈচিত্র্যে ভরা জীবন জাহানারার
জন্ম ১৯৩০ সালে, ঢাকার ইমামগঞ্জে, এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। গৃহশিক্ষকের কাছেই পড়ালেখার হাতেখড়ি। তৎকালীন মুসলিম গার্লস স্কুলে পড়ছিলেন। স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই বসতে হয়েছিল বিয়ের পিঁড়িতে। ১৯৪১ সালে। বিয়ে হয় পুরান ঢাকার আরেক সম্ভ্রান্ত পরিবার মৌলানা আল্লা বক্স সরকারের ছেলে ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া সংগঠক মনসুর রহমানের সঙ্গে। আল্লা বক্স ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের এমএলএ। তিনি ঢাকা পৌরসভার নির্বাচিত কমিশনার, মুসলিম লীগের সদস্য এবং পঞ্চায়েত সরদার। এমন এক পরিবারের পুত্রবধূ হওয়ার সুবাদে জাহানারা খাতুনের জীবন ছিল বৈচিত্র্যে ভরা। ব্রিটিশ শাসন, দেশভাগ এবং বাংলাদেশ—এ অঞ্চলের বহু উথান-পতনের সাক্ষী ছিলেন তিনি। যত্ন করে আগলে রেখেছিলেন জীবনভর পাওয়া জিনিসপত্র। সঙ্গে যোগ হয়েছিল দুই শতাধিক বছরের পুরনো নামিদামি ও ঐতিহ্যবাহী দ্রব্যসামগ্রী। ২০০১ সালে তিনি মারা যান।

kalerkantho

এত্ত বড় থালা
জাদুঘরের ডান পাশের দেয়ালে ওপরের দিকে টাঙানো এ রকম বেশ কয়েকটি থালা। পিতলের তৈরি। এই থালা দিয়েই তখন উৎসবে-পার্বণে আত্মীয়বাড়িতে নানা কিছু পাঠানো হতো। একটা নয়, এ রকম শত শত থালা বোঝাই করে ঘোড়ার গাড়িতে করে তৈরি করা খাবার পাঠানো হতো। বিয়ের আগে পাঠানো হতো ছেলের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ি, আর বিয়ের পর মেয়ের বাড়ি থেকে ছেলের বাড়ি। কেউই খালি থালা ফেরত দিত না। যে বাড়িতে জিনিসপত্র পাঠানো হতো তারাও থালায় কিছু একটা ভরে দিত।

kalerkantho

অমূল্য রতন
আস্ত একটা মসলিন শাড়ি নাকি ছোট্ট আংটির ভেতর দিয়ে প্রবেশ করানো যায়—যুগ যুগ ধরে এমন কথা বাংলার মানুষ শুনেছে। তা বাস্তবে করে দেখিয়েছেন জাহানারা খাতুন। ২০০০ সালে। তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা দুর্লভ শাড়িটি উপহার দিয়েছেন জাতীয় জাদুঘরে। ১৯৩০ সালে তাঁর স্বামী মনসুর রহমান সোনারগাঁ থেকে শাড়িটি সংগ্রহ করেন। গয়না, ব্যবহার্য সামগ্রী, ঘর সাজানোর নানা উপকরণসহ তিন হাজারের বেশি অমূল্য রতন আগলে রেখেছেন তাঁর সন্তানরা। স্বর্ণালংকার, কাঠের আসবাব তো আছেই, আরো আছে মাথাসহ বিশাল হরিণের শিং, দেয়ালঘড়ি, হরেক রকম হারিকেন, লোহার সিন্দুক, পানদান, রুপার তৈরি পানের বাটা, গোলাপজলদানি, পানের কৌটা, সিন্দুক, হ্যাজাক লাইট, নানা তৈজস ইত্যাদি। কাঠ ও ধাতব উপাদানে তৈরি ফিলিপস ব্র্যান্ডের একটি রেডিও আছে, যার উচ্চতা ২১ সেন্টিমিটার, দৈর্ঘ্য ৩৪ সেন্টিমিটার। ষাটের দশকে দেশে খুব অল্প মানুষের ঘরেই শোভা পেত টেলিভিশন। তখনকার ফিলিপস ব্র্যান্ডের সাদা-কালো একটি টেলিভিশনও আছে। আছে জাহানারা খাতুনের পড়ার টেবিল-চেয়ার। মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধবিমান থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাঁদের বাড়ির ছাদ। সে সময় একটা গুলি লাগে জাহানারার পড়ার টেবিলে। গুলির দাগসহ সেই টেবিলটিও সংরক্ষিত আছে জাদুঘরে। এটিসহ পাঁচ শতাধিক নিদর্শন দেখতে পাবেন জাদুঘরে গেলে। ঠিকানা : ২৫ বংশাল রোড, ঢাকা।

kalerkantho

রুশ সামায়ার কেটলি
১৮৯০ সালের। উচ্চতা ৪০ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ১৭ সেন্টিমিটার। কেটলিটি ছোট চারটি পায়ার ওপর দাঁড়ানো। পায়ার ওপরেই আগুন ধরানোর যন্ত্র। তারপর পানি রাখার পাত্র। ওপরে পানি দেওয়ার জন্য চোঙ। দুই পাশে ধরার জন্য দুটি হাতল। কেটলির সামনে নিচের দিকে কল। দেখতে এখনকার ট্যাপকলের মতো।

kalerkantho

চামড়ার ব্যাগ
হরিণ, বাঘ ও সাপের চামড়ায় তৈরি চারটি পার্সও আছে। এই পার্সটির পুরোটা সাপের চামড়ায় মোড়ানো।

kalerkantho