ঢাকার চারপাশে রিং রোড, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ১৬ কোটি টাকা

বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকা। এর জনসংখ্যা প্রায় দেড় কোটি।

কোনো কোনা হিসাবে দুই কোটির ওপরে। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করে প্রায় ৪০ থেকে ৪৭ হাজার মানুষ। এ শহরে দিন দিন বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা। কিন্তু সেভাবে প্রশ্বস্ত হচ্ছে না ঢাকার সড়কগুলো। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৩০ মিলিয়ন ট্রিপ তৈরি হয়। এজন্য স্বাভাবিক গাড়ির তুলনায় বেশি গাড়ি চলে এলেই বেঁধে যায় যানজট। নষ্ট হয় লাখ লাখ কর্মঘণ্টা।

এই যানজট থেকে মুক্তির জন্য সরকারি-বেসরকারি অর্থায়নে ঢাকায় নির্মাণ করা হবে আউটার রিং রোড। এজন্য ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি অন ঢাকা আউটার রিং রোড ইস্টার্ন, ওয়েস্টার্ন অ্যান্ড নর্দান পার্ট’ নামের একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৩ লাখ টাকা। প্রকল্পটি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান অনুমোদন দিয়েছেন। জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২২ মেয়াদে ফিজিবিলিটি প্রকল্প চলমান থাকবে। এই প্রকল্পের ওপরই মূল প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের (সড়ক উইং) সিনিয়র সহকারী প্রধান মো. নাজমুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা আউটার রিং রোড ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী এ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন। এ প্রকল্পের ওপর নির্ভর করেই মূল প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের গাড়ি রাজধানীর ভেতরে প্রবেশ না করেই যাতায়াত করতে পারবে। রাজধানীতে গাড়ির চাপ সামলাতে এ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকার পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তর অংশে আউটার রিং রোড নির্মাণ করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় রিং রোড নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা, এলাইনমেন্ট যাচাইকরণ এবং বিনিয়োগ প্রকল্প প্রণয়নের জন্য প্রাথমিক নকশার প্রয়োজনীয় দলিলাদি প্রস্তুত করা হবে।

ঢাকা আউটার রিং রোডের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রণয়নের জন্য ১৪২ জনমাস স্থানীয় পরামর্শক সেবা সংগ্রহ করা হবে। প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিসহ কম্পিউটার সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করা হবে। পরামর্শক খাতে ১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ করা হবে। এ খাতে ৩৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। প্রকল্পের আওতায় একটি জীপ কেনা বাবদ ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় চার লাখ টাকার গ্যাস জ্বালানি, ৩ লাখ টাকার পেট্রোল, ২ লাখ টাকার কম্পিউটার সরঞ্জাম কেনা হবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, নানা কারণে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে সড়ক পরিবহনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। নগরীতে একটি বিশৃঙ্খল মিশ্রিত পরিবহন মাধ্যম সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া আন্তঃজেলা বাসগুলো আউটার রিং রোড অথবা বাইপাসের অভাবে ঢাকা শহরের ভেতরে যাতায়াত করে। ফলে শহরের মধ্যে জটলা তৈরি হয়। এই জন্যই প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার পূর্ব-পশ্চিমের তুলনায় উত্তর-দক্ষিণে গাড়ির চাপ বেশি। তাই শহরের চার পাশে ইনার রিং রোড ও আউটার রিং রোড নির্মাণ করা হবে। এজন্য রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশোধিত রুটটি হলো- হেমায়েতপুর-কালাকান্দি-তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু-মদনপুর-ভুলতা (ঢাকা বাইপাস হয়ে)-কড্ডা (গাজীপুর)-বাইপাইল (ঢাকা ইপিজেড)-হেমায়েতপুর। এ রুটের মোট দৈর্ঘ্য ১৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৪৬ কিলোমিটারে নতুন সড়ক নির্মাণ করতে হবে। উন্নয়ন করতে হবে অবশিষ্ট ৮৪ কিলোমিটার বিদ্যমান সড়ক।

জানা গেছে, নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর ও পূর্বাংশের সংযোগ স্থাপন করবে। পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা থেকে মুন্সীগঞ্জ ও মাওয়া হয়ে যাত্রাবাড়ী দিয়ে অসংখ্য যান ঢাকা শহরে প্রবেশ করবে। এতে যোগাযোগব্যবস্থা অসহনীয় করে তুলতে পারে। তাই সংশোধিত এসটিপিতে প্রস্তাবিত এলাইনমেন্টের মধ্যে রিং রোডের দক্ষিণ অংশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বলা হয়েছে।

সেখানে আরও বলা হয়, এ দক্ষিণ অংশ মানে হেমায়েতপুর-কালিকান্দি-মদনপুর অতিদ্রুত নির্মাণ করা উচিত। এই ৪৮ কিলোমিটার অংশের জন্য তিনটি রুটি প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এটি ঢাকা-আরিচা মহাসড়ককে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা শহরে না ঢুকে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে পারবে যানবাহন। যাত্রাকালে জ্বালানি সরবরাহ, যাত্রীদের বিশ্রাম ও পানাহাররের জন্য ১টি সার্ভিস এরিয়ার সংস্থানও রাখা হয়েছে।- বাংলানিউজ