ঢাকায় ছাত্রী ধর্ষণ: এত দেরিতে তদন্ত কি সম্ভব?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ঢাকার অভিজাত বনানী এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের এক অভিযোগ নিয়ে গত কদিন ধরে তোলপাড় চলছে।

 

অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশের ধনী দুই ব্যবসায়ীর ছেলেদের বিরুদ্ধে – তারা একটি হোটেলে পার্টিতে ঐ দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে।

 

ঘটনাটি ঘটার প্রায় দেড় মাস পর পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ শুরুতে মামলাটি নেয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।

 

এই ধরনের কোন অপরাধের পর দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলে সে অপরাধের তদন্ত করা কতটা কঠিন? কি ধরনের প্রযুক্তি তাতে ব্যবহার করা হয়? বাংলাদেশে এ ধরণের তদন্তের সক্ষমতা কতটা?

 

এই ঘটনায় ঐ দুই ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষায় একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষা ধর্ষণের ঘটনা তদন্তে এবং দোষীদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু দেড় মাস পর সেই পরীক্ষায় কতটুকু আলামত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে?

 

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবের প্রধান শরীফ আকতারুজ্জামান বলছেন, “এই ধরনের কোন অপরাধ বিশেষ করে সেক্সুয়াল অ্যাসল্টের ক্ষেত্রে শরীর থেকে আলামত সংগ্রহ করার নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে। সে সময়ের মধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষা হলেই ডিএনএ পরীক্ষার জন্য উপযোগী নমুনা পাওয়া যায়। তবে সময়টা যত পার হবে ততই তা পাওয়ার সম্ভাবনা কমতে থাকবে”

 

ধর্ষণের ক্ষেত্রে ডাক্তারি পরীক্ষার সেই সময়টুকু বলা হয় ৭২ ঘণ্টা। কিন্তু বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে ধর্ষণের ঘটনার পর সমাজে হেয় হওয়ার ভয়ে অনেকেই বিষয়টি চেপে যান।

 

তবে মি আকতারুজ্জামান বলছেন, সময় পেরিয়ে গেলেই যে সকল সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায় সেটি অবশ্যই নয়।

 

“ঘটনার সময় ভিক্টিমের পরনে থাকা পোশাক থেকে অনেক নমুনা পাওয়া যায়। সেগুলো ধুয়ে না ফেলে ল্যাবরেটরিতে পাঠালে তা থেকে এভিডেন্স পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেই ক্রাইম সিন থেকেও অনেক কিছু পাওয়া যেতে পারে। যেমন ঘরের আসবাব, বিছানার চাদর, বালিশ বা অপরাধীদের ব্যবহৃত কিছু জিনিস সেখানে পাওয়া যেতে পারে। সেগুলোও ডিএনএর সোর্স হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।”

কিন্তু এসব নমুনা সংগ্রহ ও তা সংরক্ষণ করার সক্ষমতা অথবা সেগুলো পরীক্ষা করার আধুনিক ফরেনসিক প্রযুক্তি বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কতটা রয়েছে?

 

ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ বিভাগের যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলছেন, “যথেষ্ট সন্তুষ্ট হওয়ার পর্যায়ে হয়ত আমরা নাই। আমরা ধীরে ধীরে প্রশিক্ষিত হচ্ছি, আধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ ল্যাব প্রস্তুত হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, যেমন জঙ্গিদের সনাক্ত করার ক্ষেত্রে। আমরা এক্ষেত্রে ধাপে ধাপে অগ্রসর হচ্ছি।”

 

তবে তিনি বলেন, দেরিতে অভিযোগ আসলে আলামত হারিয়ে যাওয়া সহ ঘটনার তদন্ত ও প্রমাণে বেশ কিছু জটিলতা সৃষ্টি করে। তিনি বলছেন, “সময় চলে গেলে ঘটনার গুরুত্ব যেমন বাড়ে অথবা কমে, তেমনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্লু হারিয়ে যায় বা পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায়না। তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায় তাৎক্ষনিকভাবে সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ না করা হলে তাদের পাওয়া যায়না, অনেক সময় তারা নিজেরাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।”

 

তিনি আরো বলেন, “বেশী দেরীতে এলে প্রশ্ন তৈরি হয় কেন তারা দেরিতে এলো। হয়ত তার কোন যৌক্তিক কারণ ছিলো, হয়ত সে ঘটনা গুরুত্ব বুঝতে পারে নি বা কারোর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে অবশ্য নারীরা সামনে আসেন না নানা সামাজিক কারণে।”

 

মানবাধিকার কর্মী আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নীনা গোস্বামী অবশ্য বলছেন সকল জটিলতা স্বত্বেও দেশের পুলিশ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বাধ্য।

 

তিনি বলছেন ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে মামলা দায়ের করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা বলা নেই। যেকোনো সময় ভুক্তভোগী গিয়ে পুলিশের কাছে মামলা করতে চাইলে পুলিশ সেটা নিতে বাধ্য।

 

“কিন্তু আমাদের এখানে যেটা হয় যে দেরীতে গেলে বিচার প্রার্থীকে তাকে শুরুতেই একটা হতাশা ঢুকিয়ে দেয়া হয়। তুমি দেরিতে আসছো তাতে সাক্ষী পাওয়া যাবে না এসব বলে। কিন্তু তদন্তকারীর কৃতিত্বটাই হলো সেটি প্রমাণ করা। দুশো বছরের পুরনো নিয়মে আমরা বলে দেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসতে হবে বা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হতে হবে। সেটা যদি কেউ না পারে তাহলে কি সে বিচার পাবে না? ”

সূত্র: বিবিসি বাংলা