ড. কামাল শীর্ষ পদে থাকবেন কিনা প্রশ্নে যা বললেন মন্টু

গণফোরামের গৃহবিবাদ এখন ওপেন সিক্রেট।  এটি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় থেকেই শুরু।  নির্বাচনের সময় ও পরবর্তী সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেওয়া ড. কামাল হোসেনের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা।  এ নিয়ে দলটির নেতাদের ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ দানা বেঁধেছিল।

সবশেষ দলের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন যাকে সংগঠনের নিউক্লিয়াস ভাবা হয় তার ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন নেতাকর্মীদের একাংশ।  তাকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করেছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরামের একটি বর্ধিতসভা হয়। এই সভায় ছিলেন না দলের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেন।

সভাপতিত্ব করেন দলটির নির্বাহী সভাপতি ড. আবু সাইয়িদ। এদিন দলটির শীর্ষ নেতাদের বড় একটি অংশ এবার সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বের প্রতি। তাকে বাদ দিয়েই নতুন করে দলটিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।

এই প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু ও একাদশ নির্বাচনের আগে গণফোরামে যোগ দেওয়া ড. আবু সাইয়িদ। আরও রয়েছেন আরেক নির্বাহী সদস্য সুব্রত চৌধুরী। বর্ধিতসভা থেকে ড. কামাল হোসেনকে গণফোরামের সভাপতির পদ থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।  শুধু তাই নয়, বর্ধিতসভা থেকে তিনটি কমিটি ঘোষণা করা হয়।

একই সঙ্গে আগামী ২৮ ও ২৯ মে ঢাকায় দুদিনব্যাপী গণফোরামের কাউন্সিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।

বর্ধিতসভায় ২১ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি, গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে আহ্বায়ক করে ১০১ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি এবং মোস্তফা মহসিন মন্টুকে আহ্বায়ক করে ২০১ সদস্যের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটিও গঠন করা হয়।

গণফোরামের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠিত স্টিয়ারিং কমিটিতে বিবদমান দুই অংশের নেতাদের রাখা হলেও অপরাংশ তাদের এ তালিকা মানতে নারাজ। ঘোষিত কমিটির সদস্যরা হলেন– মোস্তফা মহসিন মন্টু, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মোকাব্বির খান এমপি, জগলুল হায়দার আফ্রিক, জামাল উদ্দিন আহমেদ, মহসিন রশিদ, আ ও ম শফিকউল্লাহ, মহিউদ্দিন কাদের, মোশতাক আহমদ, অ্যাডভোকেট সেলিম আকবর, আইয়ুব খান ফারুক, খান সিদ্দিকুর রহমান, হাসিব চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মো. হেলাল উদ্দিন, আব্দুল বাতেন খান, আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর, লতিফুল বারী হামিম, সাইদুর রহমান, মুহাম্মদ রওশন ইয়াজদানী।

বর্ধিতসভা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে মহসিন মন্টু বলেন, গণফোরামের আগামী কাউন্সিলে কাউন্সিলররা সিদ্ধান্ত নেবেন ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি হিসেবে রাখা হবে কিনা। তিনি বলেন, আগামী কাউন্সিলে পরবর্তী নেতৃত্ব ঠিক করা হবে।

সভাপতির পদ থেকে ড. কামাল হোসেনকে অপসারণ প্রসঙ্গে মোস্তফা মহসিন মন্টু আরও বলেন, গণফোরাম গণতান্ত্রিক দল। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গণতন্ত্র আনতে হলে দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হয়।  ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি বানিয়েছিলেন কাউন্সিলররা। আগামী কাউন্সিলে তারাই (কাউন্সিলর) সিদ্ধান্ত নেবেন দলটির পরবর্তী সভাপতি কে হবেন। এ সময় বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, আমরা নতুন নির্বাচন দাবি করছি। সরকারবিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করেছে। নতুন নির্বাচন না দিলে স্বৈরাচারী এ সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, দেশে আজ আইনের শাসন নেই, সাংবিধানিক শাসন নেই। যে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, আজ সে বৈষম্যের কশাঘাতে মানুষ দিশেহারা।

 

সুত্রঃ যুগান্তর