ডেল্টা ঠেকাতে সুইডেনে তৃতীয় ডোজ দেওয়া হবে

বিশ্বে বর্তমানে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্ট সংক্রমণের বিরুদ্ধে যেসব ভ্যাকসিন ব্যবহার হচ্ছে, সেগুলো মানবদেহে কিছুটা দুর্বল সুরক্ষা দিচ্ছে বলে গবেষকরা দাবি করছেন। এ কারণে সুইডেনে স্বাস্থ্যগতভাবে যারা ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী, তাঁদের দেহে আগামী শীতেই তৃতীয় কভিড ভ্যাকসিন ডোজ প্রয়োগের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক হতে পারে বলে জানিয়েছেন সুইডেনের রাষ্ট্রীয় প্রধান মহামারিবিদ এন্ডার্স টেগনেল। তবে বাকি ঝুঁকিহীন জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে তিনি জানান।

ইসরায়েলি গবেষকদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, যারা ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজই নিয়েছেন, তাঁদের দেহে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে ৬০ শতাংশের কিছু বেশি সুরক্ষা বা এন্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। অর্থাৎ যারা ইতিমধ্যে ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজই গ্রহণ করেছেন, তাঁদের ১০ জনের মধ্যে চারজন ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হতে পারেন। তবে এই সিদ্ধান্তে উপনিত গবেষকরা এও বলেছেন যে, দুই ডোজ টিকা দেওয়ার ফলে এখনো গুরুতর সংক্রমণের বিরুদ্ধে ভালো সুরক্ষা পাওয়া যাচ্ছে, যা ৯০ শতাংশেরও বেশি এবং স্বস্তিদায়ক বলে মন্তব্য করেছেন এন্ডার্স টেগনেল।

ইতিমধ্যে এমন গবেষণাও রয়েছে যেখানে দেখা যায় যে, টিকা দেওয়া ব্যক্তিরাও ভাইরাস বহন করতে সক্ষম। বিষয়টি এমন যে, সমস্যার যত বেশি গভীরে যাওয়া যাচ্ছে, ততবেশি সংবেদনশীল পদ্ধতিগুলিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। স্বভাবত কারণেই হাসপাতালে কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যার দিকে নজর রাখা এবং গুরুতর অসুস্থ রোগীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখাটাই এখন একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মনে করছে সুইডেনের স্বাস্থ্য বিভাগ। ইসরায়েলের গবেষণালব্ধ ফলাফলগুলি মূলত যুক্তরাজ্যের পূর্ববর্তী প্রতিবেদনগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে, যেখানে দেখা যায় যে দু’টি টিকা এখনো করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্ট দ্বারা সংক্রামিত গুরুতর অসুস্থদের বিরুদ্ধে ভালো সুরক্ষা দেয়। পরবর্তীতে গবেষণায় এমনও দেখা গেছে যে, তৃতীয় ডোজ নেওয়ার পর দেহে সুরক্ষার পরিমাণ আরো বাড়িয়ে তোলে। এরপরে বর্তমানের প্রচলিত ভ্যাকসিনগুলোর আধুনিকরণে এমনভাবে বিকাশ করা হচ্ছে, যা নতুন ধরনের করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে বিকল্প ভ্যাকসিনরূপে সংযোজিত হবে।

ইসরায়েলের সংবাদ মাধ্যম হোরিউইটজ জানায় যে, সেদেশের সরকার পুরো জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় ডোজ দেওয়া উচিত কিনা সে ব্যাপারে বিবেচনা করছে। ইসরায়েলের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সম্প্রতি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা হ্রাসের কথা জানিয়ে বলেছে যে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে যারা টিকার দু’টি ডোজই গ্রহণ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে কভিড-১৯ এর লক্ষণসহ সংক্রমণ এবং রোগের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের সুরক্ষা হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৬৪ শতাংশ যা উদ্বেগজনক। ইসরায়েলে বর্তমানে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। গত এক মাসে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা একক অঙ্ক থেকে বেড়ে প্রায় ৪৫০-এর কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে জানা যায়। স্বভাবত কারণেই তৃতীয় ডোজ টিকা দেওয়ার ব্যাপারে জোরেশোরেই চিন্তা-ভাবনা চলছে ইসরায়েলে।

সুইডেনের রাষ্ট্রীয় প্রধান মহামারিবিদ অ্যান্ডার্স টেগনেল সুইডেনের জন্য ইসরায়েলের মতো একই রকম মূল্যায়ন করছেন। বিশেষ করে অতিরিক্ত সংবেদনশীল এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী এবং বৃদ্ধাশ্রমে বসবাসকারীদের তৃতীয় টিকা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি এবং তা আগামী শীতকালেই শুরু করা হবে বলে তিনি আশা করেন। তবে এরপর সুইডেনের পুরো জনগোষ্ঠীকেই তৃতীয় টিকা দেওয়া হতে পারে বলে টেগনেল মনে করেন। ৯ জুলাই সুইডেনের জনস্বাস্থ্য সংস্থার রেজিস্ট্রার অনুযায়ী সুইডেনে মোট ৯,০৮৬,৬০৭টি ভ্যাকসিন ডোজ ব্যবহার করা হয়েছে। ১৮ বছরের বেশি বয়সের জনসংখ্যার মোট ৬৭,৪ শতাংশ অর্থাৎ ৫৫২৩৮৭৬ জন কমপক্ষে একটি ভ্যাকসিনের ডোজ পেয়েছেন এবং ৪২,৯ শতাংশ অর্থাৎ ৩৫৬২৭৩১ জন দু’টি ডোজ পেয়েছেন।

চলতি সপ্তাহে ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ফাইজার জানিয়েছে যে, তাদের তৈরি টিকাটি ’তৃতীয় ডোজ’ হিসেবে ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে আবেদন করবে। কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফাইজার জানায় যে, অত্যন্ত ভয়ংকরভাবে সংক্রামক ডেল্টা ভেরিয়েন্টটি যেভাবে বাঁধাহীনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তা রোধ করতে হবে এবং সাম্প্রতিক গবেষণাগুলির ফলাফল অনুযায়ী দ্বিতীয় ভ্যাকসিনের ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পরে সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি আবারও বেড়ে যাওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ দুইকে সামাল দেওয়ার জন্য তৃতীয় ডোজ প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে বলে জানায় ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানি ফাইজার।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ