ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় মানতে রাজি না সরকার

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশে ডেঙ্গু নিয়ে জনমনে উদ্বেগ যেমন বাড়ছে, সেই সাথে এ ধরণের বিপজ্জনক পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে সেই প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে। অভিযোগের তীর প্রধানত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং সরকারের দিকে। অনেকেই সরসারি তাদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলছেন।

বিশেষজ্ঞদের অনেকেও বলছেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে যথাসময়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলেই এই পরিস্থিতি হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কোনা কারণ নেই, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৩৯০ জন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন গত ২৪ ঘন্টায়। এই তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের হিসাব অনুযায়ী এ নিয়ে এবছর সাড়ে নয় হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

বেসরকারিভাবে এই সংখ্যা আরও অনেক বলা হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ভিড় বেড়েই চলেছে। আতঙ্ক আর উদ্বেগের পরিস্থিতি কেন হলো, এর জন্য দায়ী কে – এসব প্রশ্ন এখন উঠছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহীনা তাবাসসুম বলেছেন, এডিশ মশা মারার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কারণে পরিস্থিতি এত খারাপ হয়েছে বলে তার ধারণা।

“মশা দ্বারা এটা একজন থেকে আরেকজনের মাঝে ছড়াচ্ছে। এটা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াচ্ছে না। এখানে ট্রান্সমিশন সাইকেলটা বন্ধ করতে চাইলে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।এটাতে ব্যর্থতা আছে, যারই ব্যর্থতা হোক।”

সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং সংক্রমণ ব্যধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ড: সনিয়া তাহমিন বলছিলেন, ২০০০ সালে ডেঙ্গু ভাইরাস ধরা পরার পর থেকে বাংলাদেশে এর চিকিৎসা এগিয়েছে। কিন্তু মশা মারায় ব্যর্থতা থাকলে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে তিনি মনে করেন।

“আমরা প্রিভেশন না করে আমরা ট্রিটমেন্টের দিকে নজর দিয়েছি। কিন্তু প্রেভেশনের ব্যাপরটায় হেলথ সেক্টর যেটা করতে পারে বা করছি আমরা, সেটা হচ্ছে, ডাক্তারদের ট্রেনিং দিচ্ছি। মানুষকে সচেতন করছি। কিন্তু মশা মারতে না পারলে সমাধান হবে না। সিটি করপোরেশনের এটা দায়িত্ব ছিল। আমি বলবো এই ম্যানেজমেন্টে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।”

এখন ব্যর্থতার অভিযোগের ক্ষেত্রে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার প্রশ্ন অনেকে জোরালোভাবে তুলছেন।

রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মশা মারার ঔষধের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও নানা প্রশ্ন উঠছে। তবে ঢাকার দুই মেয়র ব্যর্থতার অভিযোগ মানতে রাজি নন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলামও অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, সময়মতোই তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

“এখানে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম। অন্য দেশের সাথে তুলনা করলে এটা দেখা যায়। থাইল্যান্ডে বা ভারতে আমাদের থেকে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে প্রতিদিনই মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছে এবং ভাল হচ্ছে। আবার নতুন নতুন কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছে। পরিস্থিতি মহামারি রূপ নেয়নি। নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।” কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাসময়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অনেকে বলেছেন, এই ব্যর্থতার দায় সরকারের।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম বলেন, “আমি এই বিষয়ের সাথে একমত না। কারণ মশাতো নিধন হচ্ছে। মশার ডেনসিটি যথেষ্ট কমেছে। এটা সবাই স্বীকার করবেন। এখন এডিস মশাটা পরিস্কার পানিতে বাড়ির আঙিনায় বা ভিতরে জন্মায়। এজন্য আমরা মানুষকে সচেতন করার কর্মসূচিও জোরদার করেছি।”

“মশা মারা ঔষধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও আমরা সেই প্রশ্নের কোন ভিত্তি পাইনি।” এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকার দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের মন্তব্য নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।

ফলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলন করে পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য তুরে ধরেন। “আমাদের জনগণ ডেঙ্গু নিয়ে আতংকে আছে, উদ্বেগের মধ্যে আছে। আসলে কাজটা আমাদের সমন্বিতভাবে করতে হবে।”

ওবায়দুল কাদের উল্লেখ করেন যে, সরকার এখন পরিস্থিতি সামাল দিতে মশার মারা অভিযান জোরদার করার পাশাপাশি তাদের পদক্ষেপে সাধারণ মানুষকেও সম্পৃক্ত করতে চাইছেন।