ডেঙ্গু আক্রান্ত ৭ বছরের ছেলেকে হারিয়ে এক মায়ের হৃদয়স্পর্শী স্ট্যাটাস

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ৫ জুলাই বিকাল ৪টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যায় সাত বছর বয়সী ইরতিজা শাহাদ প্রত্যয়।ধানমণ্ডি মাস্টার মাইন্ড স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ত সে।

এর এক মাসের মাথায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেন প্রত্যয়ের মা চাঁদ সুলতানা চৌধুরানী। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উপকরকমিশনার পদে কর্মরত।

ছেলের মৃত্যুর শোকই যেখানে কাটিয়ে উঠতে পারছেন না, সেখানে স্ত্রীর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে দেখে আতঙ্কে কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না ডা. মো. শাহেদ রফি পাভেল।

তাদের কন্যাসন্তানটি নিয়ে এখন উদ্বিগ্ন পুরো পরিবার।

দেশে ডেঙ্গু রোগ যখন মহামারীতে রূপ নিচ্ছে, তখন নিজের ছেলের মৃত্যুর কথা জানিয়ে ফেসবুকে এক হৃদয়স্পর্শী স্ট্যাটাস দিয়েছেন এ রাজস্ব কর্মকর্তা।

ঢাকার মেয়রকে উদ্দেশ্য করে লেখা তার সেই স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-

‘মাননীয় মেয়র, আমি প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী (উপকরকমিশনার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) যার মাধ্যমে গত অর্থবছরে রাষ্ট্র ৬৬৫ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে পেরেছে। আমি রাষ্ট্রের দেয়া গুরুদায়িত্ব পালন করেছি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে।

কিন্তু মাননীয় মেয়র, রাষ্ট্র কি আমার বাচ্চার নিরাপত্তা দিতে পেরেছে?

ডেঙ্গুজ্বরে আমি আমার প্রাণের অধিক প্রিয় একমাত্র ছেলেকে হারালাম। এখন আমিও ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ছয় দিন ধরে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছি। আমার মেয়ের দুই বছর বয়সে একবার ডেঙ্গু হয়েছিল। আপনি কি নিশ্চয়তা দিতে পারেন আমার মেয়ের আর ডেঙ্গু হবে না? সদ্য ছোট ভাই হারানো আমার ছোট্ট মেয়ে তার মাকেও যখন হাসপাতালের বেডে দেখছে, তখন তার মনের অবস্থা অনুধাবন করার অনুভূতি কি আল্লাহপাক আপনাকে দিয়েছেন? নাকি আমার এই লেখাটিও আপনার কাছে একটি গুজব।’

উল্লেখ্য, স্কয়ার হাসপাতালে প্রত্যয়ের মৃত্যুর পর এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। রিপোর্টে বলা হয়, প্রত্যয়ের চিকিৎসার্থে স্কয়ার হাসপাতালকে মাত্র ২৪ ঘণ্টার চিকিৎসায় দুই লাখ ১০ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করতে হয়েছে সুলতানা চৌধুরানীকে।

তবু প্রত্যয়কে বাঁচানো যায়নি। এ জন্য হাসপাতালের চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসা ও অবহেলাকে দায়ী করেন প্রত্যয়ের বাবা ডা. মো. শাহেদ রফি পাভেল।

তিনি গণমাধ্যমে অভিযোগ করেছিলেন, ‘আমার বাচ্চার ক্রিটিক্যাল অবস্থা ছিল না। বরং ভালো তদারকির জন্য স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। শুধু স্কয়ার হাসপাতালের পিআইসিইউর কনসালট্যান্ট ডাক্তারের চরম অবহেলা আর কর্তব্যরত ডাক্তারদের অদক্ষতা এবং ভুলের কারণে আমার ছেলেকে মরতে হয়েছে।’

প্রসঙ্গত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৮৭০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এ সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনে এক হাজার ৫০ জন এবং ঢাকাসহ ৬৪ জেলায় ৮১৭ রোগী ভর্তি হয়েছেন।

ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে বেসরকারি সূত্র ও বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে অর্ধশতাধিক রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে অতিরিক্ত আইজিপির স্ত্রীসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।