ডিসি সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার দাবি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ডিসিদের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে মিটিং, পরিদর্শন, সেসব হাসপাতালে কর্মকর্তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য রাখা, সেবামানের প্রতি লক্ষ্য রাখার বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশনাকে এক ক্যাডারের দায়িত্বে অন্য ক্যাডারের অযাচিত হস্তক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করেছে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার এসোসিয়েশন।

রোববার বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আ. ম.সেলিম রেজা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ দাবি করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, অত্র এসোসিয়েশন ডিসি সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কর্তৃক স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি তদারকি, জেলা-উপজেলা হাসপাতাল পরিদর্শন ইত্যাদি সংক্রান্ত দেওয়া বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করছে এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সর্বাধিক গতিশীল প্রশাসনিক কাঠামো তৈরির মাধ্যমে সরকারের নীতিসমূহ দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার Bangladesh Civil Services (Reorganisation) Order, 1980 ও তদ্বপরবর্তীতে বিভিন্ন সংশোধনী দ্বারা ২৮টি ক্যাডার সৃজন করেন এবং Bangladesh Civil Service Recruitment Rules, 1981 দ্বারা নিয়োগপ্রদান করে একই বিধিমালার 2(f) ধারায় উল্লেখিত শিডিউলভূক্ত বিভিন্ন পদে পদায়ন প্রদান করেন। সুতরাং, প্রতিটি ক্যাডারের কার্যপরিধি সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট এবং কোনোভাবেই একটি ক্যাডারের দায়িত্বে অন্য ক্যাডারের অযাচিত হস্তক্ষেপের বিধিগত সুযোগ নেই।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়,স্বাস্থ্য প্রশাসনের উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা, জেলায় সিভিল সার্জন, বিভাগে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) এবং অধিদপ্তরে মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য)- স্বাস্থ্য প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন, সেবামান যাচাই কিংবা উপস্থিতি তদারকি ইত্যাদির জন্য সংশ্লিষ্ট ক্যাডারেই প্রশাসনিক পদ রয়েছে। তথাপি ডিসি সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কর্তৃক ডিসিদের উপজেলা ও জেলা হাসপাতাল পরিদর্শন ও উপস্থিতি তদারকি করার স্বপ্রণোদিত অযাচিত উপদেশে অত্র ক্যাডারের কর্মকর্তারা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সব ক্যাডারের মাঝে একমাত্র স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাকেই ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রামে পদায়ন করা হয়। কিন্তু এই ক্যাডারের জন্য জেলা কিংবা উপজেলায় কোনো নুন্যতম পরিবহন ব্যবস্থা নেই। নুন্যতম পরিবহন ব্যবস্থার আওতাবিহীন এই ক্যাডারকে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাতায়াতের ব্যবস্থা করে অত্যন্ত কঠিন বাস্তবতায় নিরিখে দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই অন্য ক্যাডার কর্তৃক স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি তদারকির মতো স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হেয় বক্তব্যে অত্র এসোসিয়েশন তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো ধরনের অতিরিক্ত প্রণোদনা ব্যতিরেকেই এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে সামনে রেখে স্বাস্থ্যবিভাগ ৩৬৫ দিন, ২৪ ঘন্টাই জনগণকে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। বর্তমান স্বাস্থ্য বিভাগীয় প্রশাসনিক কাঠামোতেই নির্ধারিত সময়ের বহুপূর্বেই এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছিল। তদুপুরি, অন্য প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারিদের উপস্থিতি তদারকি করার নির্দেশনা এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রাকে ব্যহত করবে বলে অত্র এসোসিয়েশন মনে করে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকারের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণার্থে ‘গণকর্মচারি শৃঙ্খলা (নিয়মিত উপস্থিতি) অধ্যাদেশ, ১৯৮২ সহ আপাত বিদ্যমান অসংখ্য বিধিমালা রয়েছে। প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরপ্রধানকে শক্তিশালীকরণ করে সমস্যার আশু সমাধান সম্ভব। কিন্তু সমস্যার মূলে সংস্কার ব্যতীতই এধরনের নির্দেশনা হতাশাজনক ও জ্ঞানহীনতার পরিচয় বলে অত্র এসোসিয়েশন মনে করে।

বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার এসোসিয়েশনের দাবি, এই ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ ইউনিয়ন থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে অত্যন্ত সীমিত জনবল ও প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট ব্যতিরেকেই অত্যন্ত ঝুঁকির মাঝে তাদের বিশেষায়িত জ্ঞান, দক্ষতা ও নিষ্ঠা দিয়ে প্রতিটি হাসপাতালে সরকার কর্তৃক স্বীকৃত শয্যা সংখ্যার বাইরেও বহুগুণ রোগীকে সেবা প্রদান করে কর্মক্ষম রাখছেন এবং অর্থনীতির মূল ধারায় কর্মক্ষম জনবল সংযুক্ত করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখছেন। কিন্তু প্রায়শই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ দ্বারা এধরনের হেয় বক্তব্য প্রকাশিত হতে দেখা যায় যা সরকারের সবচেয়ে কম সুবিধাপ্রাপ্ত এই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য অত্যন্ত হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে।