ডিজিটাল রাজস্ব জমায় ভোগান্তি

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব জমা দিতে নিয়মিতই ভোগান্তিতে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। মূলত ১ জানুয়ারি থেকে অনলাইনে রাজস্ব জমা বাধ্যতামূলক করার পর থেকেই এই ভোগান্তির শুরু; সপ্তাহে দুই-তিন দিন এই সমস্যা লেগেই থাকছে। ইন্টারনেট সার্ভার গতি ধীর হয়ে যাওয়াই এর জন্য দায়ী হলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, চট্টগ্রাম কাস্টমস, বাণিজ্যিক ব্যাংক কোনো পক্ষই বিষয়টি সমাধানে এগিয়ে আসেনি। উল্টো পরস্পরকে দোষারোপ করেই দায় সারছে তারা।

রাজস্ব আয়ে দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এই কাস্টম হাউস, যেখানে দিনে গড়ে ১৪২ কোটি টাকার বেশি জমা হয়। আর এই রাজস্ব জমার ওপর দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯২ শতাংশই নির্ভরশীল। কারণ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই এসব পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়।

রাজস্ব প্রদানে ভোগান্তির কারণে নির্ধারিত সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যছাড় করতে না পেরে বড় ধরনের মাসুল গুনছেন আমদানিকারকরা। দিনে দিনে পণ্যছাড় করতে না পারায় বন্দরে আটকা পড়ছে আমদানি পণ্য। এতে বন্দরের ভেতরেও কনটেইনারজট তৈরি হচ্ছে।

পণ্যছাড় প্রক্রিয়ায় আমদানিকারকের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। প্রতিদিনের ভোগান্তিতে তাঁরাই সরাসরি পড়েন। চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানি রিগ্যান বলেন, ‘আকিজ গ্রুপের একটি আমদানিপণ্য চালানের বিপরীতে গত সোমবার অনলাইনে রাজস্ব জমা দিতে যাই। সকালে আমার নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে রাজস্ব কেটে নেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বিকেল নাগাদও মোবাইলে নিশ্চিতকরণ বার্তা আসেনি, যেই বার্তা দেখিয়ে আমি বন্দরে গিয়ে পণ্যছাড়ের ইনডেন্ট বা অনুমতি নেব। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বার্তা যখন আসে তখন অফিশিয়াল কার্যক্রম প্রায়ই বন্ধ। ফলে বন্দরে গিয়ে বাকি কাজটা আমাকে করতে হয়েছে মঙ্গলবার। সেখানে সব প্রক্রিয়া শেষ করে পণ্যছাড় নিতে পেরেছি বুধবার। ’

তিনি আরো বলেন, ‘এর ফলে আমার মাঝখানে দুদিন সময় নষ্ট হলো। এতে বাড়তি বন্দর মাসুল গুনতে হয়েছে; আমদানিকারক যথাসময়ে পণ্য না পাওয়ায় পণ্য উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে। এই সমস্যা প্রায়ই ঘটলেও কোনো প্রতিকার এখন পর্যন্ত মেলেনি। অথচ আগের পদ্ধতিতে আমি দিনে দিনেই রাজস্ব জমা দিয়ে পণ্যছাড় করতে পারতাম। ’

কাস্টমস ব্যবহারকারীরা বলছেন, রাজস্ব পরিশোধের জন্য প্রথমে নিজস্ব ব্যাংকে গিয়ে একটি ফরম পূরণ করে রাজস্ব জমা দিই। সেই রাজস্ব আমার ব্যাংক থেকে অনলাইনে আরটিজিএস (রিয়েল টাইম গ্রস সিস্টেম) পদ্ধতির মাধ্যমে প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে যায়। সেখানে অনুমোদনের পর যায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সার্ভারে; রাজস্ব বোর্ড ভেরিফায়েড অনুমোদন শেষে সেটি পাঠানো হয় কাস্টমসের সোনালী ব্যাংক শাখায়। চূড়ান্ত অনুমোদন জানতে পারবেন গ্রাহকের কাছে একটি নিশ্চিত বার্তা পৌঁছার পর। সেই বার্তা পেতেই এখন গ্রাহকের যত ভোগান্তি। আর এই বার্তা ছাড়া পরবর্তী ধাপ আগানো যায় না।

কোন পর্যায়ে এই ভোগান্তি হচ্ছে এটা সঠিকভাবে জানা যায়নি উল্লেখ করে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার সালাউদ্দিন রিজভি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তবে কাস্টমসের অনলাইন পদ্ধতি এসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের সার্ভারে যে সমস্যা আছে সেটি সমাধানে ন্যাশনাল একটি টিম কাজ করছে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘রাজস্ব প্রদানে ভোগান্তির ঘটনা আমাদের শঙ্কার চেয়েও অনেক কম। নতুন একটি সিস্টেম প্রচলন করতে মাসদুয়েক সময় তো লাগেই। এখনো তো আমরা ২২ দিন পার করলাম। এর পরও আমরা যেমন শুক্রবার, শনিবার কাজ করে সেটি পুষিয়ে দিচ্ছি। ’ তবে রাজস্ব পরিশোধে আরেকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেটি হচ্ছে সোনালী ব্যাংক কাস্টম হাউস শাখায় গিয়ে রাজস্ব জমা দিলেই সঠিক সময়ে রাজস্ব প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।

আরেক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বলেন, ‘চট্টগ্রাম কাস্টমসের সোনালী ব্যাংক শাখায় যদি আমার অ্যাকাউন্ট থাকে তাহলে কোনো জটিলতা ছাড়াই কিভাবে যেন তাৎক্ষণিক অনুমতি পেয়ে যাই। এর মানে কি সব ব্যবসায়ীকে কাস্টমসের সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে? তিনি আরো বলেন, অনলাইন মানেই হচ্ছে যেকোনো প্রান্ত থেকেই রাজস্ব পরিশোধ করা সম্ভব। এখন নির্ধারিত ব্যাংকে যদি এই সুবিধা নিয়ন্ত্রিত থাকে তাহলে তো ওই ব্যাংকের কাছে আমরা জিম্মি হব।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ