ডিজিটাল ডিভাইসকে কীভাবে তথ্য চুরি থেকে নিরাপদ রাখবেন?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সাইবার নিরাপত্তা’ বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটু ভুলেই আপনি পড়ে যেতে পারেন কঠিন সমস্যার মুখে। তাই আমাদের সবার উচিত সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন হওয়া।

সাইবার নিরাপত্তা বলতে মূলত বুঝায় আমরা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য, কম্পিউটার, আমাদের বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল ডিভাইসকে- হ্যাকিং ও বিভিন্ন ধরনের আক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখা।

আমরা এখন সব সময় কোনো না কোনো নেটওয়ার্ক বেষ্টিত একটি পরিবেশে আমাদের স্মার্ট ডিভাইসগুলো সব সময় ইন্টারনেট জগতের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। সব কিছুতেই আমাদের ইন্টারনেট এক্সেস প্রয়োজন হয়। সাইবার নিরাপত্তা হল সব ধরনের সাইবার তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ডিভাইসের নিরাপদ ব্যবহার,তথ্যকে চুরির হাত থেকে রক্ষা, বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার থেকে নিরাপদ থাকা।

তবে আমাদের সাইবার নিরাপত্তার হুমকিগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে, এ জগতে আমাদের নিরাপদ থাকা মোটামুটি সহজ হবে।

সাইবার নিরাপত্তা হুমকি কী?

বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার সাইবার বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়। ম্যালওয়্যার কী হতে পারে, কী ধরণের ম্যালওয়্যার হতে পারে তা আমাদের জানতে হবে। ১। ভাইরাস: ভাইরাস এমন এক ধরণের প্রোগ্রাম যা সাধারণত অন্য সফ্টওয়্যারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। এটি সফটওয়্যার বা ফাইল শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ে।

২। অ্যাডওয়্যার: অ্যাডওয়্যার মূলত একটি ম্যালওয়্যার। এটি আপনাকে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন দেখাবে। না জেনে কোনো সফটওয়্যার ইন্সটল কিংবা ব্রাউসার প্লাগইন ইন্সটল করার মাধ্যমে অ্যাডওয়্যার ঢুকে পড়বে আপনার সিস্টেমে। তাই ট্রাস্টেড সোর্স ছাড়া সফটওয়্যার ও প্লাগিন ইন্সটল কখনই ঠিক নয়।

৩। র‍্যানসমওয়্যার: র‍্যানসমওয়্যার হচ্ছে একধরনের কম্পিউটার ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকারক সফটওয়্যার যা আপনার ডিভাইসে (মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে) গোপনে ইন্সটল হয়ে আপনার সমস্ত তথ্যকে এনক্রিপ্টেড করে দেবে এবং আপনার কম্পিউটার স্ক্রিনে তথ্য ডিক্রিপ্ট করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ মুক্তিপণ চেয়ে বার্তা প্রদর্শন করবে।

ধরা যাক আপনি ইন্টারনেট চালাচ্ছেন হঠাৎ করে একটা ই-মেইল আসল; সঙ্গে একটা অ্যাটাচমেন্ট আপনি অ্যাটাচমেন্টে ক্লিক করলেন আর সঙ্গে সঙ্গে আপনার কম্পিউটারের সমস্ত ডাটা এনক্রিপ্ট হয়ে যাবে। ফলে আপনি না পারবেন আপনার কম্পিউটার চালাতে না পারবেন আপনার তথ্য (ইমেজ ফাইল, ভিডিও ফাইল ইত্যাদি ডাটা ফাইল) আবার ব্যবহার করতে। আপনি তখন স্ক্রিনে দেয়া নির্দেশনা দেখবেন যাতে বলা থাকবে এত ডলার বিটকয়েন পে কর, তাহলে তথ্য ডিক্রিপ্ট করা হবে।

৪। ব্যাকডোর: হ্যাকাররা কোনো একাট সিস্টেমের ভেতরে প্রবেশের জন্য এমন কিছু কোড রেখে দিল যাতে ভবিষ্যতে সিস্টেমে তারা প্রবেশ করতে পারে। এমন অনেক ওয়েবস্ক্রিপ্ট রয়েছে- আপনি হয়তো তা ফ্রি দেখে সার্ভারে আপলোড করলেন, কিন্তু সেটার ভেতরে ব্যাকডোর রয়েছে। হ্যাকার আপনার সার্ভার রিসোর্স ব্যবহার করে আপনার সার্ভারের অথবা অ্যাডমিনের কন্ট্রোল তাদের আয়ত্বে নিয়ে নেবে।

৫। কি লগার: কি-লগার এমন একটি প্রোগ্রাম যা আপনার কম্পিউটারে বসে আপনার প্রতিটা কি-ষ্ট্রোক সংরক্ষণ করে তা কোনো একটি এফ.টি.পি.(ফাইল ট্রান্সফার প্রোটোকল) বা ই-মেইলে পাঠিয়ে দেবে। এতে আপনার টাইপ করা সব পাসওয়ার্ড ও গোপনীয় তথ্য অন্য কারো কাছে ফাঁস হয়ে যেতে পারে।যদি আপনার ফেসবুক, ইয়াহু, জি-মেইল বা অন্যান্য অ্যাকাউন্ট যদি একইবারে হ্যাক হয় তাহলে তা কি-লগার দ্বারাই সম্ভাবনাই বেশি।

৬। স্পাইওয়্যার: স্পাইওয়্যার মূলত আপনাকে স্পাই করবে। আপনার ইন্টারনেট এক্টিভিটিস থেকে শুরু করে সবকিছু।

৭। ট্রোজান হর্স: ট্রোজান এই সময়ের সব চেয়ে ভয়ঙ্কর ম্যালওয়্যার। এটা আপনার আর্থিক তথ্য চুরি করবে। আপনার সিস্টেমের রিসোর্স ব্যবহার করবে। ট্রোজান বড় কোনো সিস্টেম হলেও, সিস্টেমকে ডাউন করে দিতে সক্ষম।

৮। ফিশিং: অনেক সময় চমক প্রদ অফার দিয়ে ই-মেইল আসে আমাদের ব্যক্তিগত ই-মেইল অ্যাকাউন্টে। ব্যাংক, পরিচিত কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধুর নাম দেখেই আমরা মেইল খুলে বসি, ক্লিক দিয়ে দেই। ফিশিং ই-ইমেইলগুলো আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে। অপরিচিত/সন্দেহজনক ই-ইমেল ওপেন করা ঝুঁকিপূর্ণ।

৯. ফ্রি ওয়াই ফাই: বিমানযাত্রীদের সুবিধার্থে সাধারণত সব এয়ারপোর্ট, লাউঞ্জ, হোটেল ইত্যাদি জায়গাগুলোতে ফ্রি ওয়াই ফাইয়ের সুব্যবস্থা থাকে যা নিঃসন্দেহে উপভোগ্য। এসব ওয়াইফাই’ নেটওয়ার্কের জন্য একটি হটস্পট’ মেশিন লাগে। অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় এই হটস্পট’ মেশিনের ভাইরাস প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকে না।

ফলে, এই হটস্পট’-এর সঙ্গে সংযোগ থাকা মোবাইল বা ল্যাপটপেও সেই ভাইরাস ঢুকে যায়। এরমধ্যে এমন কিছু ভাইরাস থাকে যাদের কাজ হলো ডিভাইসের ভেতর থেকে যাবতীয় আপনার ব্যক্তিগত তথ্য এবং আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিং হিস্টরি, আপনার ফেসবুক, টুইটার, স্কাইপ বা জি-মেইলের মতো গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টগুলোর পাসওয়ার্ডসহ লগইন ডিটেইলস বেহাত হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে।

নিরাপদ থাকতে কিছু পরামর্শ’

১। ফ্রি ওয়াইফাই একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার না করাই ভালো।

২। আপনার অপারেটিং সিস্টেম আপ টু ডেট রাখুন।

৩। অবশ্যই অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করতে হবে। কখনই ক্র্যাক ভার্সন ব্যবহার করবেন না। (পরিচিত কোম্পানিগুলোর মাঝে পরিবর্তন করে করে ব্যবহার করতে পারেন)

৪। আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য অবশ্যই ব্যাকআপ রাখুন।

৫। ব্যক্তিগত তথ্য নেটওয়ার্ক সংযুক্ত যন্ত্রে না রাখাই ভালো।

৬। ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংকিংসহ সব আর্থিক তথ্য কোথাও ইনপুট দেয়ার আগে কয়েকবার চেক করে নিন কোন ওয়েবসাইটে দিচ্ছেন। পারসোনাল ফায়ারওয়াল থাকলে এ ক্ষেত্রে ভালো।

৭। যে কোনো ধরনের অ্যাড/বিজ্ঞাপনে ক্লিক দেবেন না।

৮। অপরিচিত ই-মেইল খুলবেন না। শুধু ই-মেইল ওপেন করার কারণেই আপনার তথ্য চলে যেতে পারে হ্যাকারের কাছে।

৯। পাসওয়ার্ড ব্রাউজারে অটো সেভ করে না রাখাই ভালো। অবশ্যই স্ট্রং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন

১০। ফাইল ফরমেট দেখেই ভাববেন না ওপেন করার কথা। যেমন ধরুন একটি পি ডি এফ ফাইল ওপেন করলেও আপনার নেটওয়ার্ক এ ম্যালওয়্যার ইন্সটল হয়ে যেতে পারে আপনার অজান্তে।

১১। সব শেষে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে সচেতন হতে হবে অনেক বেশি। অনেক সময় দেখা যায় ধর্মীয় অথবা মানবিক আবেগকে পুঁজি করে, জঙ্গি অথবা চরমপন্থি গোষ্ঠী আপনাকে ব্যবহার করছে আপনার অজান্তে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক একটি ঘটনার তদন্তে উঠে এসেছে এই চমকপ্রদ তথ্য।