ডাবলু সরকারের অপসরণ দাবিতে উত্তাল রাজশাহীর রাজপথ


নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের অপসরণ দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠছে রাজপথ। ডাবলু সরকারের অপসরণ দাবিতে গত তিনদিন ধরে ‘রাজশাহী আওয়ামী পরিবার’ ও ‘সচেতন রাজশাহীবাসীর’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হচ্ছে। ডাবলু সরকারকে জামায়াত-বিএনপির মদদ দাতা ও পৃষ্টপোষক বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগেরই একটি পক্ষ লাগাতার এ আন্দোলন করে যাচ্ছে।

তবে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলছেন, দলের হাইকমান্ডের এ বিষয়টি দেখা দরকার। কারণ এ আন্দোলনের জন্য দলের মধ্যে বিশৃংখলা দেখা দিতে পারে। কারণ সামনে জাতীয় নির্বাচন রয়েছে। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বিষয়টি জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে। যার কারণে এটি হাইকমান্ডের দেখা উচিৎ।

আন্দোলনের অংশ হিসাবে আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে ‘রাজশাহী আওয়ামী পরিবারের’ ব্যানারে নগরীর কোর্ট এলাকায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। এই বিক্ষোভ মিছিল থেকেও দ্রুত ডাবলু সরকারকে অপসরণের দাবি জানানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী আওয়ামী পরিবারের ব্যানারে নগরীর কোর্ট এলাকার শহীদ মিনার চত্ত্বরে লোকজন জড় হয়। সেখানে তারা প্রথমে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কোর্ট শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে দিগন্ত প্রসার ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।

এরআগে মানববন্ধনে বিক্ষোভকারীরা বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ডাবলু সরকার আওয়ামী লীগ করলেও তিনি জামায়াত-বিএনপির সাথে আতাত করে চলেন। জামায়াত-বিএনপির মদদদাতা হিসাবে তিনি চিহ্নিত। স্বাধীনতার পক্ষের দল আওয়ামী লীগে এমন বিএনপি-জামায়াত মদদ দাতা নেতা বিপদজ্জনক। অতিদ্রুত তাকে আওয়ামী লীগ থেকে অপসরণ করতে হবে।

আজকের মানববন্ধনেও ডাবলু সরকারের ছবিতে ক্রস চিহ্ন এঁকে দেওয়া হয়।

বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রমৈত্রী, কেন্দ্রীয় কমিটি সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাড. আবু রায়হান মাসুদ, রাজপাড়া থানা সাবেক কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বুলবুল, সাবেক ছাত্রনেতা সিরাজি কয়েল, সাবেক ছাত্রনেতা ও ক্রীড়া সংগঠক এস এম রবিউল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা বেলায়েত হোসেন বেলালসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

এরআগে শনিবার (৪ মার্চ) ‘রাজশাহী আওয়ামী পরিবারের’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়। এদিন দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর জিরোপয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করা হয়েছে। এ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন থেকেও ডাবলু সরকারকে দল থেকে বহিস্কারের দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে ডাবলু সরকারকে অপসারণসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে ব্যানার ও ফেস্টুন প্রদর্শন করা হয়। এতে লেখা ছিল ‘ডাবলু সরকারের নোংরা ভিডিও, রাজনীতিতে অশনিসংকেত ও সমাজের জন্য বিপজ্জনক’, ‘অবিলম্বে ডাবলু সরকারকে রাজনীতি থেকে অপসারণ করতে হবে’, ‘নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত রাজনীতির দুষ্টক্ষত ডাবলু সরকারকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এছাড়া তার ছবিতে ক্রস চিহ্ন এঁকে দেওয়া হয়। কয়েকজনের হাতে ওই ছবি সংবলিত ফেস্টুনে লেখা ছিল ‘ডাবলুর পেছনের গডফাদার কে, রাজশাহীবাসী জানতে চায়’, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী, নির্বাচনের বছরে কারও দ্বারা দল বিব্রত হয়, এমন কাউকে এক সেকেন্ডও দলে রাখা যায় না। ’

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে ‘কলঙ্ক’ আখ্যা দিয়ে এদিন বক্তারা বলেন, এ দাগ যেন রাজশাহী আওয়ামী লীগ, সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও প্রধানমন্ত্রীর গায়ে না লাগে। নির্বাচনের বছরে যেন কারও কাছে বিব্রত হতে না হয়। তাই ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তার আগে গত বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের অবসারণ দাবিতে ‘সচেতন রাজশাহীবাসীর’ ব্যানারে নগরীর জিরোপয়েন্টে মানববন্ধন করা হয়। এদিন মানববন্ধন চলাকালীন সময়ে কিছু ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়ে মানববন্ধনের বাধা দেয় ও ব্যানার ছিনিয়ে নেয়। এসময় মানববন্ধনকারীদের সাথে তাদের ধাক্কা-ধাক্কির ঘটনাও ঘটে।

বৃহস্পতিবার যারা হামলা করে বিক্ষোভ থেকে ব্যানার কেড়ে নিয়েছিল, তাদের কড়া সমালোচনা করা হয়। ডাবলু সরকারের সমালোচনা করে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমরা চাই না, আগামী নির্বাচনে আমাদের ওপর কোনো ধরনের কলঙ্ক নেমে আসুক। বিরোধী দল কোনো দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দিক। এই ধোঁয়া তুলে জামায়াত-শিবির চক্র আমাদের চরিত্র নিয়ে কোনো কথা বলুক, তা চাই না।

ডাবলু সরকারের উদ্দেশ্যে বক্তারা আরো বলেন, যে ভিডিও প্রকাশ পেয়েছি সেটি যে আপনার নয়, সেটি আপনি আজও প্রমাণ করতে পারেন নি। পরে ডাবলু সরকারের ভাই সেডু সরকারকে উদ্দেশ করে বক্তারা আরো বলেন, আপনি রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) চাকরি করেন। অফিস চলাকালে কীভাবে এসে আমাদের কর্মসূচিতে হামলা করলেন? রুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছে আপনার বিরুদ্ধে আমরা আইনি নোটিশ পাঠাব।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি ডাবলু সরকারের একটি ৩ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের আপত্তিকর ভিডিও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণেই রাজশাহী মহানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।