ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ডেক্সামেথাসোন নিলে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে

করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসায় ডেক্সামেথাসোনকে কার্যকর হিসেবে বলছেন বিজ্ঞানীরা। তবে ওষুধটি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করলে মারাত্মক শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যাদের অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে বিবিসি বাংলাকে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডেক্সামেথাসোন ব্যবহারে ভেন্টিলেটারে থাকা রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি এক-তৃতীয়াংশ কমানো যাবে।

আর যাদের অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার এক-পঞ্চমাংশ কমানো যাবে।

তারা বলছেন, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে কোভিড ১৯ রোগীদের চিকিৎসায় এই ওষুধ বিশালভাবে কাজে লাগতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টায় মানুষের শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন শরীরের ভেতর যে ক্ষতিগুলো হয়, এই ডেক্সামেথাসোন সেই ক্ষতি কিছুটা প্রশমন করতে পারবে বলে তারা পরীক্ষায় দেখেছেন।

আর এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশের কিছু এলাকায় ওষুধের দোকানে এই গ্রুপের ওষুধের বিক্রি তুলনামূলকভাবে বেড়ে গেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ঢাকার কয়েকটি ফার্মেসিতে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন ওষুধ তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান কমদামি এই স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ তৈরি করে এবং ফার্মেসিতে এই জাতীয় ট্যাবলেটের খুচরা মূল্য এক থেকে দুই টাকার মধ্যে।

তীব্র উপসর্গসহ করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ডেক্সামেথাসোন জাতীয় ওষুধ বাংলাদেশে মার্চ মাস থেকেই ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক বিল্লাল আলম।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ চিকিৎসার যে প্রথম গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়, সেখানেই উল্লেখ করা হয় যে তীব্র উপসর্গসহ কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ডেক্সামেথাসোন গ্রুপের স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে।’

বিল্লাল আলম জানান, এই জাতীয় ওষুধ কোন ধরণের রোগীকে কী মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে, তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া প্রয়োগ করলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

শ্বাসকষ্ট জাতীয় সমস্যার ক্ষেত্রে, নিউমোনিয়া হলে, তীব্র অ্যাজমা থাকলে অনেকসময় চিকিৎসকরা এই ধরণের ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

বিল্লাল আলম বলেন, ‘মানুষ মারা যাওয়ার আগেও অনেকক্ষেত্রে শেষ চেষ্টা হিসেবে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়ে থাকে।’

তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিল্লাল আলম বলেন, ‘স্টেরয়েডের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে হাইপার টেনশন, পেপটিক আলসার হতে পারে এবং ডায়াবেটিসের তীব্রতা বৃদ্ধি করতে পারে।’

এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ গ্রহণ করলে মুখে, পেটে বা পায়ে পানি আসতে পারে, কিডনি বিকল হতে পারে এবং লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে জানান তিনি।

আর যাদের অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও এই ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে মন্তব্য করেন বিল্লাল আলম।

তিনি বলেন, ‘কিডনি বা লিভারের সমস্যা বা ডায়বেটিস যাদের রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুরুতর হতে পারে।’

এছাড়া শরীরে কোনো ধরনের ইনফেকশন থাকলে এই ওষুধ ব্যবহারে ইনফেকশন বেড়ে যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন মেডিসিনের এই অধ্যাপক।

মূলত কোন মাত্রায় এই ওষুধ কোন ধরনের রোগীর জন্য ব্যবহার করতে হবে, সেই বিষয়টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামতের সাপেক্ষে নির্ধারণ না করা হলে এসব স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা।