ডাকসু নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেলে লড়াইয়ের প্রস্তুতি ইশা’র

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু)নির্বাচনে অংশ নেবে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন (ইশা ছাত্র আন্দোলন)। ডাকসু  নির্বাচনে এককভাবে পূর্ণ প্যানেলে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন দল ইসলামী আন্দোলনের  ছাত্র সংগঠন ইশা। নারী, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী, ভিন্ন ধর্মালম্বীসহ ২৫ সদস্যের একটি প্যানেলেও প্রস্তুত করেছে সংগঠনটি।

জানা গেছে, ডাকসু নির্বাচন হবে ১১ মার্চ। ডাকসুর সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান গত বুধবার নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করেন। ১১ মার্চ সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলবে।

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বরাবরই সক্রিয় ছিলো ইশা ছাত্র আন্দোলন। ২০১৮ সালের  ১৫ অক্টোবর ডাকসু নির্বাচনে সব ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবিতে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ ফজলুল করীম মারুফের নেতৃত্বে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল  উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তাদের দাবি ছিলো, ডাকসু নির্বাচনে সব ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও ক্যাম্পাসে সকল ছাত্র সংগঠনের সহ-অবস্থানের পরিবেশ তৈরি।

গত বছর থেকে ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ইশা ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছিলো। গত বছর থেকেই সংগঠনটি ডাকসু নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুতি শুরু করে। এ লক্ষে ঢাবি শাখার বিভিন্ন হল কমিটি পুনর্গঠন করে তারা। তবে নারী হলগুলোতে কোন কমিটি নেই এ ছাত্র সংগঠনটির। এছাড়া, সমমনা কয়েকটি ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠনের সঙ্গেও বৈঠক করে তারা।

ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ার অভিযোগ ইশা ছাত্র আন্দোলনের। সংগঠনটির নেতাদের অভিযোগ,  ঢাবি কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার বৈঠক ও যোগাযোগ করার পরেও ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে  ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।  সব ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণে অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে ঢাবি কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়, তাহলে এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যাত হবে। তখন ডাকসু নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলবে ইশা ছাত্র আন্দোলন।

এসব দাবিতে ২৩ জানুয়ারি ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশ করে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। যদিও তাদের এ মিছিলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় বাম ছাত্র সংগঠনগুলো।

ইসলামী আন্দোলনের ছাত্র সংগঠন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন ১৯৯১ সালের ২৩ আগষ্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদেরও। দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমাদ বলেন,  ‘অনেক বছর পর ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে।  ইশা ছাত্র আন্দোলন আগে কখনও ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, এবারই প্রথম। আমরা আশাবাদী ইশা ইতিবাচক সাড়া সৃষ্টি করতে পারবে। আমরাও তাদের নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা করবো।  ইশা ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’

ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে ইশা ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ ফজলুল করীম মারুফ  বলেন, ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে আমরা প্রস্তুত।  এখন পর্যন্ত আমরা জানি না সংসদের কত সদস্যদের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হবে। তবে আমরা ২৫ জনের একটি কমিটি প্রস্তুত রেখেছি।

প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বলেন, মুক্ত চিন্তার অভয়ারণ্য ঢাবি, তাই ক্যাম্পাসে সকল মতের উন্মুক্ত চর্চা নিশ্চিত করতেই হবে। আমরাও এ চিন্তা থেকে একটি প্যানেল প্রস্তুত রাখছি। আমাদের প্যানেলে ইসলাম ধর্ম ছাড়াও অন্য ধর্মের ছাত্র থাকবেন, নারী সদস্য থাকবেন, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর প্রতিনিধিও থাকবেন।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন শেখ ফজলুল করীম মারুফ। তিনি বলেন, ‘ডাকসু গঠনতন্ত্র অনুসারে ঢাবির যে কোন ছাত্র নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। গঠনতন্ত্র অনুসরণ করা হলে কোন শঙ্কা নেই। তবে আমাদের শঙ্কা হচ্ছে, ভিসি নির্বাচনের আচরণ বিধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মতামত চেয়েছেন। কয়েকটি ছাত্র সংগঠন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক মতাদর্শের ছাত্র সংগঠনকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না দিতে ভিসি ও প্রক্টোরিয়াল বডির কাছে  আবেদন জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করবে না, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

তবে কোন ধরণের প্রতিবন্ধকতা আসলে আন্দোলনও আইনি লড়াই করবেন বলেও জানান শেখ ফজলুল করীম মারুফ।

প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালের পর ডাকসু নির্বাচন নির্বাচন হয়নি।