ট্রাক চালকদের জন্য চার মহাসড়কে হচ্ছে বিশ্রামাগার

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া একটি বিশেষ নির্দেশনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী ট্রাক চালকদের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রংপুর এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হবে।

বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এসব বিশ্রামাগার নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। এতে ব্যয় হবে ২২৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে।

জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধে একাধিক একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মহাসড়কের পাশে চালকদের জন্য বিশ্রামাগার তৈরির নির্দেশনা দিয়েছিলেন। যাতে চালকরা ক্লান্ত হয়ে পড়লে এসব বিশ্রামাগারে রেস্ট নিতে পারেন। চা-নাশতা খেতে পারেন। রিফ্রেসড অবস্থায় গাড়ি চালাতে পারেন। সেই নির্দেশনা মেনেই এ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তালিকায় থাকা ১১টি উন্নয়ন প্রকল্প উপস্থাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দেখা যাক পরে এর বাইরে কোনো প্রকল্প যায় কিনা।’

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেটি পালন করতে দেশে প্রথম বারের মতো এ ধরনের বিশ্রামাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হল। বিশ্রামাগারগুলো এমন হবে যে, সেগুলো সার্ভিস সেন্টার তৈরি করা হবে। উন্নত দেশের মতো এসব বিশ্রামাগারে খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানো, ফুয়েলিং এবং শপিংয়ের ব্যবস্থাসহ আধুনিকসহ সুযোগ-সুবিধা থাকবে। বিশ্রামাগারগুলোতে একই সময়ে কমপক্ষে ৫০টি ট্রাক দাঁড়াতে পারবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যাত্রীবাহী বাসের জন্য বিভিন্ন স্থানে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা আছে। তাই ট্রাকের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।’

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, দেশের প্রধান মহাসড়কগুলোতে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসচালক ও যাত্রীদের স্বল্প বিরতি নেয়ার মতো ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু দূরপাল্লার ট্রাক চালকদের জন্য কোনো বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা নেই। ফলে চালকরা অনেক সময় সড়কের পাশে ট্রাক থামিয়ে রেখে বিশ্রাম নেন, যা পক্ষান্তরে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি করে। অথবা দ্রুত বিশ্রাম নেয়ার জন্য বিপজ্জনক গতিতে গাড়ি চালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।

এ কারণে মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। বর্তমানে কোনো চালকের একটানা ৫ ঘণ্টার বেশি বেশি গাড়ি না চালানো, ট্রাক চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম, ঘুমানো, চালক পরিবর্তন এবং যানবাহনের বিভিন্ন যান্ত্রিক সমস্যাগুলো দূর করার জন্য মহাসড়কের পাশে বিশ্রামাগার জরুরি। এসব বিশ্রামাগারে পর্যাপ্ত পার্কিং সুবিধা, চালকদের রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা, বিনোদনের জন্য টিভি, ওয়াশ রুম, চা, কফিসহ পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যা চালকদের ভ্রমণজনিত ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করার মাধ্যমে স্বস্তিদায়ক পরিবেশের সৃষ্টি করবে।

এসব বিবেচনায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। গত ২৩ এপ্রিল প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ এবং মাগুরা জেলায় এসব বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হবে।

ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস জানান, প্রকল্পটির মাধ্যমে দেশের চারটি মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের জন্য আধুনিক সুবিধা সংবলিত বিশ্রামাগার স্থাপন করা হবে। এতে চালকরা স্বস্তিদায়কভাবে গাড়ি চালাতে পারবেন। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে।