ট্রাকের চেয়ে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের ভাড়া বেশি, শুরুতেই আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক:

এক ট্রাক আম ঢাকায় পৌঁছাতে খরচ হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা। রাজশাহীর গ্রাম-গঞ্জে থেকেও ব্যবসায়ীরা ট্রাক লোড করে নির্দিষ্ট আড়তগুলোতে পৌঁছাতে পারছেন। আবার এক ট্রাকে অন্তত ১৬ হাজার কেজি আম পরিবহণ করা হচ্ছে। এতে কেজিপ্রতি গড়ে গড়ে খরচ হচ্ছে প্রায় ৯০ পয়সা। কিন্তু সেখানে এক ট্রাক সমান আম ঢাকায় ট্রেনে পাঠাতে খরচ হচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। এরপর রয়েছে আম বুকিংয়ের ঝামেলা। স্টেশনে পৌছাঁনোর ঝামেলা। আবার স্টেশন থেকে সংগ্রহ করার ঝামেলা। পাশাপাশি সময়ক্ষেপণ।

এসবকিছু মাথায় নিয়ে রাজশাহী থেকে একদিনেই ট্রেনে আম পাঠানো থেকে আগ্রহ হারিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে আমসহ কৃষিজাত পণ্য পরিবহণেও শুরু থেকেই মার খাবে ট্রেন। এতে করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ নামের কৃষি পণ্য পরিবহণের জন্য পশ্চিমাঞ্চলে যুক্ত হওয়া ট্রেনটি দ্রুত বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও শঙ্কা রয়েছে।

তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য এই ট্রেন সুবিধা বয়ে এনেছে। কারণ কুরিয়ার খরচের চেয়ে অন্তত অর্ধেক খরচে এ আম পরিবহন করা যাচ্ছে।

রাজশাহীর দুর্গাপুরের আমচাষি ও পাইকারী ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন জানান, তিনি জেলার দুর্গাপুরের আমগাছী বাজারে আম কেনার জন্য আড়ত করেছেন। সেখান থেকে আম কিনে সরাসরি ঢাকায় পাঠাচ্ছেন ট্রাকে করে। একটি ট্রাকে আম যাচ্ছে অন্তত ১৬ হাজার কেজি। তাতে খরচ হচ্ছে ১৪-১৫ হাজার টাকা সর্বোচ্চ।

এই আম ঢাকার আড়তে একেবারে গিয়ে পৌঁছাচ্ছে। ফলে রাস্তায় আর নতুন করে কোনো খরচ হচ্ছে না। কিন্তু আমগাছী বাজার থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় আম পাঠাতে হলে সেটিকে গাড়ীতে করে আগে রাজশাহীর হরিয়ান স্টেশনে নিয়ে যেতে হবে। এর জন্য বাড়তি ভাড়া দিতে হবে। আবার স্টেশনে গিয়ে রয়েছে বুকিং করার ঝামেলা। আম নামানো এবং ট্রেনে ওঠানোর জন্য প্রতি ক্যারেটে (২৫ কেজি আম থাকে একেকটিতে) অন্তত ৩০ টাকা করে কুলি খরচ।

এরপর কেজিপ্রতি এক টাকা ১৭ পয়সা করে ট্রেন ভাড়া দিতে হবে। সেই আম ঢাকায় পৌঁছানোর পরে ঢাকার স্টেশনের কুলিদের আবার ট্রেন থেকে নামানো এবং গাড়িতে তুলে দেওয়ার জন্য ক্যারেট বা কার্টনপ্রতি ৩০ টাকা করে চার্জ দিতে হবে। সেখান থেকে গাড়িতে করে আম নিয়ে যেতে হবে আড়তে।

এভাবে খরচের হিসেবে করতে গেলে এক ট্রাক সমপরিমাণ আম ঢাকায় পৌঁছাতে হলে অন্তত ২৫ হাজার টাকা খরচজ হবে। এরপর রয়েছে বাড়তি ঝামেলা এবং সময়ক্ষেপণ। কিন্তু একটি ট্রাক রাজশাহী থেকে সন্ধ্যায় রওনা দিলেও সকাল হতে হতেই আড়তের দরজায় গিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে। তারপর খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সেই আম সকাল সকাল বিক্রি করা যাচ্ছে। কিন্তু ট্রেনে আগেরদিন পাঠালে পরের দিন সকাল সকাল সেই আম বিক্রি করা সম্ভব নয় স্টেশন থেকে নিয়ে গিয়ে।

জেলার বানেশ্বর বাজারের আম ব্যবসায়ী বাবু বলেন, ‘বানেশ্বর হাট থেকে বা এই এলাকার বাগান থেকে আম কিনে আমরা সরাসরি ঢাকায় পাঠাতে পারছি। কিন্তু চারঘাটের সরদা স্টেশনে নিয়ে যেতে আলাদা খরচ যেমন আছে, তেমনি বাড়িত ভাড়াসহ অন্যান্য খরচও আছে। এসব মাথায় রেখে আমরা বড় ব্যবসায়ীরা ট্রেনে করে আম ঢাকায় পাঠাতে পারছি না।’

ঢাকার ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, ‘যারা অল্প আম পাঠাচ্ছেন, তাদের জন্য ট্রেন সুবিধা। কারণ ১০-২০ মণ আম ট্রাকে করে একসঙ্গে পাঠাতে বা কুরিয়ার করতে বেশি খরচ হবে। কিন্তু এই অল্প আম দিয়ে তো ট্রেন চলবে না। ট্রেন চালাতে হলে যারা পাইকারী ব্যবসায়ী তাদের আমের দিকে ট্রার্গেট করতে হবে। তবেই ট্রেন লোড হবে। আর সেটি করতে হলে আমের ভাড়া অন্তত অর্ধেকে নামাতে হবে কেজিপ্রতি। তাহলে খরচ বাঁচলে মানুষ ট্রেনের দিকে ছুটবে।’

এদিকে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেন অনেকটা আর্শিবাদ হয়ে এসেছে বলে দাবি করেছেন রাজশাহীর পবার আম ব্যবসায়ী অনিক।

তিনি বলেন, আমি প্রতিবছর কুরিয়ারে করে ঢাকায় আম পাঠায়। এবারো এতে পাঠাচ্ছি শুরু থেকেই। এতে করে প্রতিকেজি আম ঢাকায় পাঠাতে ১০-১৫ টাকা নিচ্ছে। এই অবস্থায় ট্রেনে আম পাঠাতে খরচ হচ্ছে এক টাকা ১৭ পয়সা। যদিও আম স্টেশনে পৌঁছাতে আবার স্টেশন থেকে নিয়ে যেতে আলাদা খরচ হচ্ছে। তারপর কুলি খরচ। কিন্তু তার পরেও কেজিপ্রতি অন্তত ৫ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।’

এদিকে গত শুক্রবার থেকে রেলসেবায় যুক্ত হয় নতুন কৃষিপণ্যবাহী ট্রেন ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেন। ওইদিন বিকেলে ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর স্টেশন থেকে যাত্রা শরু করে। এরপর রাজশাহী স্টেশন হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ১ ও ২ নামের ট্রেন দুইটি সপ্তাহে ৭ দিনই এই রুটে আম-সবজিসহ বৈধ পণ্যসামগ্রী নিয়ে যাতায়ত করছে। স্টেশনের দূরত্ব ভেদে ভাড়া পড়বে সর্বনিম্ন ১ টাকা ১০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৩০ পয়সা।

এদিকে জানা যায়, শুক্রবার প্রথম দিনে ঢাকায় যায় মাত্র ৪৫ হাজার কেজি আম। তবে ট্রেনের প্রতিটি বগিতে অন্তত ৪৫ হাজার কেজি আম পরিবহণ করা যাবে। সেখানে গত শুক্রবার প্রথমদিনে ৫টি বগিতে গেছে মাত্র সাড়ে ১০ হাজার কেজি আম। ফলে গোটা ট্রেনটিই প্রায় ফাঁকা যায় বলে দাবি করেছেন রেলওয়ে সূত্র।

এদিকে ট্রেনের ভাড়া বিষয়ে জানতে চাইলে পশ্চিম রেলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ফুয়াদ হোসেন আনন্দ বলেন, ট্রেনের খরচ বিবেচনা করে এই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন ট্রেনটি কতটুকু সফল হবে তার ওপর নির্ধারণ করবে পরিবর্তি ব্যবস্থা।

স/আর