ট্রাকচাপায় হিমেল নিহত: রাবির বাতাসে ভাসছে এখনো পোড়া গন্ধ

রাবি প্রতিনিধি:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ট্রাকচাপায় শিক্ষার্থী হিমেল নিহতের প্রতিবাদে ট্রাকে দেওয়া বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আগুন নিভে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু ট্রাক পোড়ার সেই গন্ধ এখনো ভাসছে বাতাসে। এই পোড়া গন্ধ যেন নিঃশব্দে হিমেলের মৃত্যুর ঘটনার করুণ বর্ণনাকেই ঈঙ্গিত দিচ্ছে।

মাহমুদ হাবিব হিমেল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। একইসঙ্গে রাবি সাংস্কৃতিক জোটের দপ্তর সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।

গত মঙ্গলবার (০১ ফেব্রুয়ারি) রাতে ক্যাম্পাসে শহীদ হবিবুর রহমান হলের দিক থেকে মোটরসাইকেলে ক্যাম্পাসের মেইন গেটের দিকে যাচ্ছিলেন হিমেল ও তার বন্ধু রায়হান রিমেল। এ সময় নির্মাণ সামগ্রী বহনের কাজে নিয়োজিত একটি ট্রাক তাদেরকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই হিমেল মারা যান। আহত হন রায়হান প্রামাণিক। এতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নির্মাণকাজে ব্যবহৃত পাঁচটি ট্রাকে অগ্নি সংযোগ, উপাচার্য ভবন ঘেরাও, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেয় এবং নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ভাঙচুর ও আগুন দেয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অগ্নিসংযোগের বিষয়টি জানতে পারলেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলায় সেখানে আগুন নেভাতে যায়নি। আগুনে বিকট শব্দে ফাটছিল ট্রাকের চাকাগুলো। ট্রাকের ট্যাংকে থাকা জ্বালানীর জন্য আগুনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। তাই ঘটনার পরদিন সকাল পর্যন্তও পুড়ছিল ট্রাকগুলো। রাত থেকেই ধোঁয়া আর ট্রাক পোড়ার গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে ক্যাম্পাসে।

গতকাল শুক্রবার (০৪ ফেব্রু) বিকালে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি যেতেই নাকে পোড়া গন্ধ অনুভব হতে শুরু হয়। কাছাকাছি পৌঁছুতে কটু গন্ধটাও বাড়ছিল। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, একটি গাছের নিচে দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া মোটর সাইকেলটি পড়ে আছে। এর চারপাশে একটি করে ইটের প্রাচীর। গাছটিতে লেখা ‘হিমেল সরণী’।

খানিকটা উত্তর দিকে হিমেল যেখানে ট্রাকে চাপা পড়েছিলেন সেই জায়গাটিও ইট দিয়ে ঘেরা। প্রাচীরের মধ্যে সহপাঠী ও শুভাকাক্সক্ষীদের দেওয়া গোলাপের কয়েকটি পাপড়ি সেখানে পড়ে আছে। নিকটেই শহীদ হবিবুর রহমান হলের মাঠে পুড়িয়ে দেওয়া ট্রাকগুলো। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ট্রাকের বেশ কয়েকটি চাকা থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। অনেকেই আবার পোড়া ট্রাকগুলো দেখতে ভীড় করছিলেন।

হিমেলের সহপাঠীরা জানান, বন্ধু হিমেলের এমন বিদায় মেনে নেওয়ার মতো না। হিমেলকে হারিয়ে তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তারা এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। হিমেলের খুব কাছের বন্ধু ছিলেন প্রশান্ত। তারা একসঙ্গে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যুক্ত ছিলেন। তিনি বলছিলেন, আমরা একসঙ্গে অনেক কাজ করেছি। হিমেল খুবই পরিশ্রমী ছেলে ছিল। ওর সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমার।

এদিকে, হিমেলের নিহতের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে তিন দিনব্যাপী ‘শিল্পীর প্রতিবাদ তাঁর শিল্পকর্মে’ শীর্ষক আর্টক্যাম্পের দ্বিতীয় দিন বৃষ্টির কারণে স্থগিত করা হয়। আজ (০৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। চারুকলা অনুষদের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আলামিন ইসলাম রওনক জানান, হিমেলকে নিয়ে তুলির আঁচড়ে স্মৃতিচারণ করা হচ্ছে। তাকে ট্রাক পিষে মেরেছে, আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এই কষ্টকে রং তুলির মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে আজ (গতকাল) কর্মসূচি করা হয়নি।’

দুর্ঘটনায় আহত রায়হান প্রামাণিকের অবস্থা এখন অনেকটাই ভাল। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে তিনি এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল ডরমিটরিতে অস্ত্রপোচার পরবর্তী বিশ্রামে আছেন। তিনি বলছিলেন, ট্রাক দেখে আমরা থেমে গিয়েছিলাম। ট্রাক যখন আমাদের একেবারেই কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিল তখন আমরা চিৎকারও দেই। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রাকের ধাক্কায় আমরা পড়ে যাই।

স/আর