বৃহস্পতিবার , ১৭ অক্টোবর ২০২৪ | ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

‘ট্রাইব্যুনালে পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের নাম জানাবে না প্রসিকিউশন’

Paris
অক্টোবর ১৭, ২০২৪ ১০:২৬ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

জুলাই-আগস্টে গণহত্যার অভিযোগের তদন্ত চলমান থাকাবস্থায় প্রথম কার্যদিবসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচার চলাকালে ট্রাইব্যুনালে মোবাইল ফোন কিংবা কোনও ধরনের ইলেকট্রিক ডিভাইস নিষিদ্ধ ছিল। এ নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিবাদ জানালেও হয়নি কোনও সুরাহা। পাশাপাশি শুনানি শেষে পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের নাম জানানো হবে না বলেও সরাসরি জানিয়ে দেয় প্রসিকিউশন পক্ষ।

গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর প্রথমবারে মতো বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ শুরু হয়। এদিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম মামলার আবেদন পড়ে শোনান। এ সময় সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধনী, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে গুম, খুন, তথ্য-প্রযুক্তি আইনে হওয়া মামলার পরিসংখ্যান, অর্থপাচারের পরিসংখ্যান এবং সর্বশেষ ছাত্র আন্দোলনে বল প্রয়োগের তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

চিফ প্রসিকিউটর ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে তদন্তে গণহত্যার প্রাথমিক অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামিরা প্রভাবশালী। এখনও দেশের বিভিন্ন স্থানে আসামিদের লোকজন বিভিন্ন পজিশনে আছে। তাই আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া মামলার তদন্তকাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করছি।’ একপর্যায়ে আদালত জানতে চান—রাষ্ট্রীয়ভাবে আসামিদের অবস্থান জানেন কিনা। জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘না’। তারপর আদালত চিফ প্রসিকিউটরের আবেদন মঞ্জুর করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। আর ১৮ নভেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ রেখে এই সময়ের মধ্যে আসামিদের আদালতে হাজির করতে বলেন।

পরে ট্রাইব্যুনাল থেকে বেরিয়ে তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের নানান প্রশ্নের মুখোমুখি হন। তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে পরিচালিত ম্যাসাকার, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ যারা করেছিলেন, তাদের শীর্ষে ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমরা আজকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদনে আমরা জুলাই-আগস্ট মাসে যে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, সেসবের বিস্তারিত কোর্টের সামনে উপস্থাপন করেছি। একইসঙ্গে একটি সরকার কীভাবে দানবীয় সরকারে পরিণত হলো, কীভাবে নিরস্ত্র সাধারণ ছাত্রদের গুলি করে মারলো—তার প্রেক্ষাপটও আদালতের সামনে তুলে ধরেছি এবং আমরা আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম—যাতে এই অপরাধগুলো এত বিস্তৃত মাত্রায় সারা বাংলাদেশজুড়ে সংঘটিত হয়েছে, এই অপরাধের আসামি যারা তারা অসম্ভব প্রভাবশালী, তাদের গ্রেফতার করা না হলে তদন্তকাজ পরিচালনা করাটা অসম্ভব কঠিন।’

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘তাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ, এমনকি শহীদ পরিবারের সদস্যরাও কথা বলতে সাহসী হচ্ছেন না। সেজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমরা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছিলাম। আদালত আমাদের আবেদন মঞ্জুর করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে তাকে গ্রেফতার করে এই ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আরেকটি আবেদনে আওয়ামী লীগের তদানীন্তন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ আমরা আপনাদের (সাংবাদিকদের) জন্য বলছি—৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়েছি। সেই প্রার্থনাও মন্জুর হয়েছে। কিন্তু আপনারা জানেন যে এই অপরাধীরা এখনও রাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে। তাদের নাম আপনাদের সামনে প্রকাশ করছি না, তাদের গ্রেফতার নিশ্চিত করার স্বার্থে। আমরা তাদের নামগুলো প্রকাশ করছি না। তাদের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল এবং আগামী ১৮ নভেম্বর তাদের আদালতে সামনে হাজির করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন।’

এ সময় উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা আসামিদের নাম জানতে চাইলে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘একটি বিষয় স্পষ্ট করে দেই, ১৮ নভেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ। কিন্তু এর আগে গ্রেফতার করামাত্রই আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। আমরা আদালতে শুনানিকালে কয়েকটি নাম বলেছি, ওই নামগুলোই আপনারা লিখতে পারেন। কিন্তু এর বাইরে কোনও নাম আমরা বলছি না।’

পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের মধ্যে কোনও সাংবাদিক আছেন কিনা জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চাচ্ছি না। আজকে যাদের নাম গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে তাদের নাম উপস্থাপন করেছি। পরবর্তী সময়ে আমরা আরও অনেকের বিষয়ে আদালতে শুনানি করবো।’

আদালতের সামনে কী আবেদন করা হয়েছে, তার জবাবে তিনি বলেন, ‘ইংলিশে যে আবেদনটি করেছি সেটি একটি, বাংলাতেও আবেদন করেছি—এটি হচ্ছে আমাদের তদন্ত সংস্থা, আমাদের কাছে যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির জন্য অনুরোধ করেছেন, সে আবেদনের সারসংক্ষেপ। আপনারা শুনেছেন।’

আসামিদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে জানতে চাইলে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ক্ষেত্রে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে ওয়ারেন্ট জারির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘এই যে একটি সরকার গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটালো সাধারণ মানুষের ওপর, এটা তো হঠাৎ করে একদিনে সংঘটিত হয়নি। আমি এর পটভূমি বর্ণনা করেছি—ওয়ান ইলেভেনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর ২০০৮ থেকে কীভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রিমিনালাইজ করা হয়েছে, বিচার বিভাগকে কীভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, দলীয়করণ করা হয়েছে, কীভাবে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে, কীভাবে সাইবার সিকিউরিটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে ভিন্নমতকে দমন করা হয়েছে, কীভাবে বিরোধীদলীয় নেতাদের কণ্ঠরোধের জন্য তাদের হত্যা করা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা করা হয়েছে, বিচারিক হত্যা করা হয়েছে, গুম-অপহরণ, কীভাবে আয়নাঘর তৈরি করা হয়েছে, কীভাবে র‌্যাব ফোর্সকে ডেথ স্কোয়াডে পরিণত করা হয়েছে—এই পটভূমিগুলো আদালতের সামনে তুলে ধরেছি। বিডিআর বিদ্রোহ, শাপলা চত্বরে যে গণহত্যা তার পটভূমি আমরা উল্লেখ করেছি। এভাবে আজকেই যে একটি গণহত্যা করেছে তা কিন্তু নয়, পেছন থেকেই এক দানবীয় শক্তি কোনও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নয়, একটা অপরাধী হিসেবে রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক জনগণের বিরুদ্ধে একের পর এক মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। এই পটভূমি উল্লেখ করে সর্বশেষ জুলাই- আগস্টের পটভূমি আদালতের সামনে তুলে ধরেছি।’

গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করেন—আপনারা (আইনজীবীরা) যখন আদালতে কোনও পিটিশন দেন, তখন সেটি পাবলিক ডকুমেন্ট হয়ে যায়। আজ ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের মোবাইল নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অথচ সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগেও আমরা মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করি। কিন্তু এই ট্রাইব্যুনালে আমরা মোবাইল নিয়ে যেতে পারবো কিনা? জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এগুলো (ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা অভিযোগ) রাজনৈতিক মামলা না। আইনত মামলার ডকুমেন্টস আপনারা পাবেন। আমরা যারা মামলা পরিচালনা করছি আমারও মোবাইল জমা রাখছি। প্রতিবাদ (গণমাধ্যমকর্মীদের) জানানোই সমাধান নয়। আমি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গিয়েছি। লাইভ সম্প্রচার বা এ সংক্রান্ত বিষয়ে এখনও আমাদের অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও পর্যাপ্ত হয়নি। এখন যা হচ্ছে তা সাময়িক, পরবর্তী সময়ে ট্রাইব্যুনাল হয়তো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’

তদন্ত কার্যালয়ে যখন অভিযোগ হয়েছিল— তখন আমরা অভিযুক্তদের নাম জানতে পেরেছিলাম। কিন্তু আপনাদের স্ট্যান্ড কী আমাদের একটু স্পষ্ট করবেন? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘দেখুন, আদালতের সব ডকুমেন্ট পাবলিক নাও হতে পারে। কারণ, এটি একটি বিশেষ আদালত। অপরাধীদের তালিকা যদি আমরা গণমাধ্যমে প্রকাশ করি, যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হচ্ছে, হয়তো কেউ এখন সার্ভিসে আছেন, তারা তো পালিয়ে যাবে। তাহলে উদ্দেশ্য হবে হতাশার। তাই এমনটা যেন না হয়, সেজন্য নামগুলো মিডিয়াতে না আসার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছিলাম। আপনারা জানেন, আইনে ক্যামেরা ট্রায়েলের পর্যন্ত ব্যবস্থা আছে। তাই আদালত আমাদের অনুমতি দিয়েছেন— এটা (পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের নাম) গোপন রাখার জন্য। সুতরাং, এটি বিচারের স্বার্থে আদালতের এই আদেশ কার্যকর করার জন্য, এটি (নাম) প্রকাশ করা যাবে না। যতটুকু আমরা বলেছি, তার বাইরে কোনও নাম প্রকাশ করা যাবে না।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

সর্বশেষ - জাতীয়