শাহিনুল আশিক:
বরাবরের মতো এবরাও নির্ধারণ ছিলো পশুর চামড়ার দাম। কোরবানির দিন দুপুর থেকে কেনা-বেচা শুরু হয় পশুর চামড়া। পাড়া-মহল্লা ঘুরে ব্যবসায়ী ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কিনেছেন চামড়া। তবে এবছরও পশুর চামড়া-কেনা বেচায় ছিলো মৌসুমী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য। মূল ব্যবসায়ীদের সাথে দামে টক্কর দিয়ে কিনেতে দেখা গেছে পশুর চামড়া।
তবে চামড়া ব্যবসয়ী নেতা ও আড়ৎদারা বলছেন- ‘পড়া-মহল্লায় কোরবানি হওয়া পশুর চামড়া প্রথম পর্যায়ে কেনা-বেচা শেষ হয়েছে। জমা পড়েছে চামড়া ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারদের কাছে। এখন মূল কেনা-বেচা হবে ট্যানারি মালিকদের সাথে। ট্যানারিতে পশুর চামড়া বিক্রির পরেই বোঝা যাবে লাভ লোকসানের বিষয়টি।’
দেখা গেছে- গরুর চামড়ায় আকার ভেদে ব্যবসায়ীরা কিনেছেন ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে। খাসির চামড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আর বকরির চামড়া ১০ টাকা হলেও ভেড়ার চামড়া ২০ থেকে ২৫ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে।
বুধপাড়া গণির মোড় এলাকার মন্ডল হামিদুজ্জামান হেনা জানান, তাদের সমাজে ৯টি গরু, ১৪টি খাসি ও ৫টি বকরি কোরবানি হয়েছিল। শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী কিনেছেন সবগুলো চামড়া। তিনি দাম দিয়েছেন- প্রতিটি গরুর চামড়া সাড়ে ৫০০ টাকা করে। আর খাসির চামড়া ২০ টাকা ও বকরির চামড়া ১০ টাকা দরে।
পুঠিয়ার বেলপুকুরের মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘এবছর গরুর চামড়া প্রকার ভেদে ২৫০ থেকে ৬০০ টাকা দরে কিনেছি। খাসি ২০ থেকে ৩০ টাকা ও বকরির চামড়া ১০ টাকা দরে কিনেছি।’ তিনি আড়তে বিক্রি করেছেন- গরুর চামড়া গড়ে সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। খাসির চামড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। বকরি চামড়া ৩০ টাকা ও ভেড়ার চামড়া ৪০ টাকা দরে। তিনি আরও বলেন, চামড়া কেনাবেচায় লোকসান হবে না। তবে লাভ খুব একটা বেশি হয়নি।
চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাড়া-মহল্লা থেকে পশুর চামড়া কেনার পরে মূল কাজ লবণ দেওয়া। তার আগে চামড়ায় লেগে থাকা মাংস ও চর্বি অপসারণ করতে হয়। এর পরে লবণ দেওয়া হয়, পুরো চামড়ায়। কয়েকদিন পরে আরেক দফা লবণ দেওয়া হয় চামড়ায়। এভাবে কিছু দিনের জন্য সংরক্ষণ হয় পশুর চামড়া।
রাকিবুল ইসলাম নামের এক চামড়া ব্যবসায়ী জানান, ‘গত বছরের তুলনায় এবছর এই কর্মযজ্ঞে বেড়েছে খরচ। শ্রমিকের মুজরি ছাড়া বেড়েছে লবণের দাম। তার উপরে নেই যানবাহন। চামড়া পরিবহণে প্রয়োজন ট্রাক। লকডাউনের কারণে ট্রাকসহ সকল পরিবহণ বন্ধ রয়েছে। তাই চামড়া পরিবহণের জন্য ট্রাক ভাড়া নিতে গেলে গুনতে হবে বেশি ভাড়া।
রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘রাজশাহী অঞ্চলের পশুর চামড়া পুঠিয়ার বেলপুকুর ও নাটোর মোকামে উঠে। এই দুই জায়গা থেকে ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনে নিয়ে যায়। ইদ ও লকডাউনের কারণে ট্যানারিগুলো বন্ধ রয়েছে। ট্যানারি মালিক ও তাদের প্রতিনিধিরা আরও চার থেকে ৫দিন পরে চামড়া কিনতে নামবেন।
তিনি মনে করেন- লকডাউনের কারণে যাওয়া-আসায় বিড়ম্বনায় পড়তে হবে এই ব্যবসায়ীদের। এছাড়া গুনগতমান ঠিক রাখতে হলে ১০-১২ দিনের মধ্যে চামড়া ট্যানারিতে নিতে হবে। তাই চামড়া কিনতে আসা ট্যানারি মালিক ও তাদের প্রতিনিধিদের লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার দাবি করেন এই নেতা। তিনি দাবি করেন- ‘পাড়া-মহল্লায় গরুর চামড়া কেনাবেচা হয়েছে ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায়। খাসির চামড়া ৪০ থেকে ৬০ টাকা ও বকরির চামড়া ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে।’
নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি শরিফুল ইসলাম জানান, ‘সবে চামড়ায় লবণ যুক্তের কাজ শেষ। এখনও ট্যানারি ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে শুরু করেনি। তারা আরও তিন থেকে ৫দিন পরে নামবেন।
চামড়া কেনাবেচায় লকডাউন ও লাভ-লোকসানের বিষয়ে তিনি জানান, লকডাউনে চামড়া পরিবহণে প্রশাসনকে ছাড় দিতে হবে। যেহেতু এটি কাঁচামাল। আর চামড়া কেনা-বেচায় লাভ-লোকসানের কথা এখনও বলা যাচ্ছে না, কারণ ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রির পরেই বোঝা যাবে।’
স/আ