টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য যৌক্তিক জ্বালানি মূল্য থাকতে হবে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

গত ১০ বছরে দেশের অর্থনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক প্রায় সব সূচকেই বেশ অগ্রগতি হয়েছে। আর এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হলে যৌক্তিক জ্বালানি মূল্য ঠিক রাখতে হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ। তবেই দেশ সমৃদ্ধির দিকে এগোবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, ‘এ সময় দারিদ্র্যের হার, মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, রপ্তানি আয় ও জনপ্রতি আয়।’

গতকাল শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘এলএনজি মূল্য নির্ধারণ : ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে এর প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য রহমান মুরশিদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা প্রায় ৯০ শতাংশ।’ এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎসের বহুমুখীকরণ আবশ্যক বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়েছে যথাক্রমে প্রায় ৬৩ ও ১১৫ শতাংশ। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পাশের দেশগুলো থেকে একই দামে বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব হলে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের শিল্প-কারখানাগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হবে এবং এ লক্ষ্যে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার ইতিমধ্যে ভারত থেকে প্রায় এক হাজার ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সার্ক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে যৌথভাবে হাইড্রো পাওয়ার ও সোলার পাওয়ার ব্যবহারের লক্ষ্যে একটি সার্ক সোলার গ্রিড স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন।

তিনি বলেন, এলএনজি আমদানির পর তার দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে দেশের ব্যাবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় যেন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি না পায়, সেদিকে সরকারকে যত্নবান হতে হবে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য রহমান মুরশিদ বলেন, ‘জ্বালানি নিরপত্তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাই বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলএনজির গুরুত্ব রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদও পর্যাপ্ত নয়।’

তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিতে গ্যাসের ভূমিকার ওপর একটি গবেষণা পরিচালনা করা প্রয়োজন। এতে কোন খাতে কী পরিমাণ গ্যাস বরাদ্দ করা হবে, তা নির্ণয় সম্ভব হবে।

দেশের শিল্প-কারখানার জন্য যৌক্তিক মূল্যে জ্বালানি প্রাপ্তির বিষয়টি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ডিসিসিআইর সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘আমাদের শিল্প-কারখানার অগ্রগতির চাকাকে সচল রাখার ক্ষেত্রে সম্প্রতি গ্যাসের স্বল্পতার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রতিদিন আমাদের গ্যাসের উৎপাদন প্রায় দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট, যেখানে আমাদের চাহিদা রয়েছে তিন হাজার ৪০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট এবং চাহিদা মেটানোর জন্য প্রাথমিকভাবে ৫০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা আশাব্যঞ্জক।’

আবুল কাসেম খান বলেন, ‘আমাদের শিল্প খাতে এলএনজি আমদানির প্রভাব ৭২-৯৩ শতাংশ, বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে প্রায় ২০৬ শতাংশ এবং ক্যাপটিভ পাওয়ার খাতে প্রায় ৬৬ শতাংশ হবে।’

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ ফওজুল কবির খান। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘১৯৯৮ সালের পর আমরা নতুন কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করতে পারিনি, ফলে বর্তমানে যে পরিমাণ গ্যাস মজুদ রয়েছে তা ছয়-সাত বছরের মধ্যে ফুরিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে এবং এমনই বাস্তবতায় আমাদের এলএনজির পাশাপাশি অন্যান্য উৎসসমূহ ব্যবহারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’ তিনি এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে স্থলভিত্তিক টার্মিনাল এবং সমুদ্র এলাকায় ভাসমান টার্মিনাল স্থাপনের মধ্যে সমন্বয় সাধন আবশ্যক বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, ‘এলএনজি আমদানি ব্যয়বহুল হওয়ায় আমাদের গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। তবে সেটা যেন কোনোভাবেই আমাদের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে, সেদিকে সরকারকে যত্নবান হওয়া দরকার।’

এ ছাড়া বক্তব্য দেন ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি হোসেন খালেদ, পরিচালক হুমায়ুন রশিদ, এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লা এম আমজাদ হোসেন, বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মো. শহীদুল্লাহ প্রমুখ।