টালমাটাল শেয়ারবাজারে বড় দরপতন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ভয়াবহ বিপর্যয়ের কবলে দেশের শেয়ারবাজার। প্রতিদিনই বড় দরপতন হচ্ছে। সোম ও মঙ্গলবারের অস্বাভাবিক পতনে শেয়ারবাজার রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

২০১০ সালে ধসের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ফিরে গেছে বাজার। পুঁজি হারিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে বিনিয়োগকারীরা।

মামলার ভয় দূরে ঠেলে ভয়াবহ এই পতনের প্রতিবাদে মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) আগের কার্যালয়ের সামনে মঙ্গলবার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে বিনিয়োগকারীরা। ‘বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদে’র ব্যানারে এ বিক্ষোভ হয়।

সোমবারের বড় দরপতনের রেশ না কাটতেই মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ৮৭ পয়েন্ট কমে ডিএসইএক্স নেমে এসেছে ৪ হাজার ৩৬ পয়েন্টে। অর্থাৎ ভিত্তি পয়েন্টের নিচে নেমে গেল সূচক। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৭৫ পয়েন্ট।

এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১ হাজার ৮২৪ পয়েন্ট। সাম্প্রতিক সময়ে সোমবার সবচেয়ে বড় দরপতন ঘটে। মঙ্গলবারও এই ধারা অব্যাহত থাকে।

দুই দিনে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৭৬ বা পৌনে ৪ শতাংশের বেশি কমেছে। প্রধান সূচক প্রায় ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিু হলেও অধিকাংশ শেয়ারের দাম ৯ বছর আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।

বিক্ষোভ থেকে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানায়।

এর আগে দরপতনের প্রতিবাদে দিনের পর দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিনিয়োগকারীরা বিক্ষোভ করায় ২৭ আগস্ট ডিএসইর পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরপর বন্ধ হয়ে যায় বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ। এর মধ্যেই শেয়ারবাজারে চলতে থাকে দরপতন।

সম্প্রতি তা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। শেষ ৮ কার্যদিবসের ৭ দিনই বড় পতন হয়েছে। গত ৭ দিনে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৪০০ পয়েন্টের ওপর। এর মধ্যে মঙ্গলবার কমেছে ৮৭ পয়েন্ট। সূচকের এই বড় পতনের প্রতিবাদে লেনদেন শেষ হওয়ার আগেই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা। আধা ঘণ্টা চলে এ বিক্ষোভ।

২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ডিএসইএক্স ও ডিএস-৩০ সূচক চালু হয়। ওই সময় ডিএসইএক্স সূচকের ভিত্তি পয়েন্ট ছিল ৪ হাজার ৫৫ পয়েন্ট। আর ডিএস ৩০ ছিল ১ হাজার ৪৬০ পয়েন্ট। সোমবার লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি ৮৮ পয়েন্ট কমে নেমে আসে ৫৬ মাস আগের অবস্থানে।

তবে সূচক প্রায় ৫ বছরের কম হলেও অধিকাংশ শেয়ারের দাম ৯ বছর আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। সোমবার লেনদেন শেষে সূচকটির অবস্থান দাঁড়ায় ৪ হাজার ১২৩ পয়েন্ট। মঙ্গলবার আবারও ৮৭ পয়েন্ট কমে।

গত এক বছরের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে এক লাখ কোটি টাকা। গত বছরের ১৪ জানুয়ারি ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ১৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। মঙ্গলবার তা নেমে এসেছে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায়।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতাই পতনের মূল কারণ। সরকারের নানা আশ্বাসেও ভরসা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারবাজার ভালো হবে, হচ্ছে এমন প্রতিশ্রুতি শুনে বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগ করে এখন প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারের সংকট একদিনের নয়। অনেক দিন থেকে চলে আসছে। তিনি বলেন, যে যেভাবেই বিশ্লেষণ করুক, মূল সমস্যা হল এই বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই।

কারণ বিভিন্ন সময়ে যারা বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তাদের বিচার হয়নি। ফলে আস্থা ফিরে আনতে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

অর্থাৎ অনিয়মের সঙ্গে জড়িতরা যত শক্তিশালী হোক এবং যে পদেই থাকুক তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীদের নিশ্চয়তা দিতে হবে, কারসাজির মাধ্যমে কেউ তার পুঁজি হাতিয়ে নিলে তার বিচার হয়। এছাড়া দুর্বল তালিকাভুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

ডিএসইতে এদিন মোট লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। সোমাবার মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৮৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। মঙ্গলবার লেনদেন হয় ২৬২ কোটি ৮১ লাখ টাকা। হাতবদল হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৩২টির, কমেছে ২৯৩টির ও অপরিবর্তিত আছে ৩০টির।

ডিএসইতে এদিন লেনদেনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হল লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড, বিকন ফার্মা, এডিএন টেলিকম লিমিটেড, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, স্কয়ার ফার্মা, রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড, ড্যাফোডিল কম্পিউটারস লিমিটেড ও গ্রামীণফোন। অপরদিকে সিএসইতে হাতবদল হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ২১টির, কমেছে ২০৩টির এবং দর অপরিবর্তিত আছে ২০টির।