টানা হরতাল-অবরোধে বিপাকে সবজিচাষি

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

শীতকালীন সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতি, অন্যদিকে টানা হরতাল-অবরোধ যেন তাদের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময়মতো সবজি বিক্রি করতে না পারায় তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন তারা। কৃষকরা বলছেন, হাটে ক্রেতা ও বেপারি না থাকায় অর্ধেকেরও কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। একই অবস্থা দুধ, ফুল ও আগাম আমন ধানের ক্ষেত্রেও। লাভ তো দূরের কথা, খরচও উঠছে না। এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরা ছাড়া আর উপায় নাই। এ জন্য সব কৃষিপণ্য হরতাল-অবরোধের আওতার বাইরে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন কৃষকরা।

আড়তদাররা জানান, ভরা মৌসুমেও অবরোধ-হরতালের কারণে পাইকাররা হাটে আসতে না পারায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। কৃষকরা জানান, ভ্যান, রিকশা ও মাথায় করে শাকসবজি বাজারে আনলেও পরিবহন নিয়ে আতঙ্কিত পাইকাররা। বেশি ভাড়াও ট্রাক-পিকআপ পাওয়া যাচ্ছে না। জানা যায়, যেসব বাজারে সবজির ট্রাকের জন্য হাঁটাও দুরূহ ছিল, সেখানে হরতাল-অবরোধের কারণে কোনো ট্রাকই নেই। আছে শুধুই কৃষকদের কিছু মলিন মুখ। শুধু সবজিই নয়, এবার আমন মৌসুমের নতুন ধান বাজারে ওঠতে শুরু করলেও দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। সরকারি গুদামে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে ধান কেনা হলেও বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতে কৃষকের কোনো ভূমিকা নেই। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কৃষিপণ্যের বিপণন হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত রাখা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় সারাদেশে ভেঙে পড়েছে পরিবহন ব্যবস্থা। হাটবাজারে ক্রেতা না থাকায় ধান, সবজি, দুধ, ফুলসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। তাই কৃষিপণ্য অবরোধের আওতামুক্ত রাখা কিংবা ট্রেনে পরিবহনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় শুধু কৃষক নয়, এ খাতের সঙ্গে জড়িত সকলেই বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন।

সবজিচাষিদের অভিযোগ, ২০১৪ সালের টানা হরতাল-অবরোধের ক্ষত এখনো রয়েছে। এরপর করোনাকালেও দফায় দফায় ক্ষতি। এর সঙ্গে রয়েছে জ্বালানি তেল, সারসহ কৃষি উপকরণের বাড়তি দাম। এর মধ্যে আবার নতুন করে হরতাল-অবরোধ যেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া। আমাদের বাঁচতে দিন।

চলমান হরতাল-অবরোধ সারা দেশের মতো খুলনার সবজিভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত ডুমুরিয়া উপজেলার সবজি চাষিদের কপালেও ফেলেছে চিন্তার ভাঁজ। সময়মতো ঢাকাসহ অন্য জেলা থেকে পাইকার না আসায় বিক্রি হচ্ছে না তাদের সবজি। ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দিশেহারা উপজেলার হাজার হাজার কৃষক। দাম কমে যাওয়ায় ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

ডুমুরিয়ার একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবজি চাষে মহাজনদের কাছ থেকে আনা সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচের জন্য জ্বালানি তেলের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না তারা। অবরোধের কারণে শাকসবজি পরিবহনে ট্রাক-পিকআপের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের।

এদিকে বগুড়ার মহাস্থানহাট সবজি, কাঁচা ও পাকা মাল ব্যবসায়ী এবং আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, অবরোধের প্রথম দিনে হাটে সবজির দাম না পেয়ে অনেক কৃষক কেঁদেছেন। এখন কেনা সবজি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট মোকামে পাঠাতে ট্রাক ভাড়া গড়ে ১০ হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। অবরোধের কারণে ঝুঁকি নিয়ে কেউ পণ্য পরিবহন করতে চাইছেন না।

শুধু মহাস্থানহাট নয় এমন অবস্থা সারা দেশের সকল জেলা ও উপজেলায়। বিশেষ করে বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, নাটোর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নরসিংদী, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, জামালপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও বরিশালে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে স্বাভাবিকভাবেই সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক রয়েছে। পরিবহন চলাচল কম এবং ভাড়াও একটু বেশি। যে কারণে চাষিদের কম দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেকই আবার ক্ষেতেই সবজি রেখে দিচ্ছে। এটা আমাদের জন্য কাম্য নয়।