টানা বৃষ্টিতে চাঁপাইয়ের আমের বাজার মন্দা:কমেছে বেচাকেনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ সারাদেশে বন্যা ও বৃষ্টিতে গত ৭ দিন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন আম বাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। সেই সাথে আমের কেনাবেচা। এতে করে আমচাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলের মোকাম থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, এলাকায় বন্যা ও বৃষ্টির কারণে আমের উঠতি দাম নেমে এসে দাঁড়িয়েছে আগের মতই। বাজারে আম নামলেও ক্রেতার অভাবে অনেকেই পানির দরে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

শিবগঞ্জ পৌর এলাকার আম বাজারের আড়তদার মুসলেম জানান, গত ৭ দিন আগেও গড়ে ২/৩ ট্রাক আম বিভিন্ন মোকামে পাঠিয়েছি। কিন্তু ব্যাপারীরা ৭ দিন থেকে আম কিনতে ও পাঠাতে নিষেধ করায় আম পাঠানো এবং কেনা বন্ধ রেখেছি।

কানসাট আম বাজারের আড়তদার সফিকুল ইসলাম জানান, ৬/৭ দিন আগে চট্টগ্রাম ও কিশোরগঞ্জে আম পাঠিয়েছিলাম কিন্তু ট্রাক পৌছলেও বৃষ্টির কারণে ত্রিপাল খুলে আম নামাতে পারেনি। ফলে বিভিন্ন মোকামে পাঠানো আম ২ দিন পর ট্রাক থেকে আম আনলোড করলে দেখা যায় বেশ কিছু আম পেকে ও পচে নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া যেসব মোকামে যারা পাকা আম পাঠিয়েছেন তাদের অবস্থা আরো খারাপ।

আড়তদার সফিকুল আরও জানান, এক সপ্তাহ আগে যে পরিমান আম কিনে মোকামে পাঠিয়েছি এখন তা দাঁড়িয়েছে অর্ধেকে। সিলেট, চট্টগ্রাম, ফেনী ও রাজধানীসহ বিভিন্ন মোকাম থেকেও আম কেনাবেচা কমে গেছে। বৃষ্টির কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দোকান করতে না পারায়।

সদর, ভোলাহাট, রহনপুরের কয়েকজন আম আড়তদার জানান, আমের চাহিদা কেন জানি কমে গেছে। হয়তো বিভিন্ন মোকাম এলাকায় বন্যা ও বৃষ্টি আর ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতার বাইরের কারনে।

আম বাগান মালিক ইসমাইল হোসেন শামীম খাঁন জানান, ৯৫ ভাগ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীই ব্যবসা করেন ফুটপাথে। তারা বৃষ্টিতে দোকান করে বসতে না পারার কারনে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন আম বাজারে আম কেনা বেচা কমে যাবার পাশাপাশি ব্যাপারী ও ক্রেতার সংখ্যাও কমে গেছে। এসময়ে আমচাষিরা গাছে পাকা আম ছাড়া আর কোন আম ভাঙছেননা। গাছে আম পেকে যাওয়া বাধ্য হয়ে বর্তমানে দাম কম থাকলেও আম ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা।

জেলার বিভিন্ন আম বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগে ফজলি আম ছিল ১৬০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা মন। ৫ দিন আগে তা হয় ২৪০০ টাকা থেকে ২৮০০ টাকা মণ। কিন্তু ৫ দিন থেকে আবার তা কমে দাড়াই পূর্বের দামে। পাঁকা আম সব সময়ই কাঁচা আমের চেয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশী হয়। আম ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- ৫ দিন থেকে বাজারে আম নিয়ে আসলেও আগের মতো ক্রেতা ও দাম নেই।
কানসাটের কয়েকজন আম আড়তদার জানান, কানসাট বাজারে ৩/৪ দিন থেকে বৃষ্টির কারনে আম অর্ধেকে নেমে এসেছে। আম চাষিরা বৃষ্টির কারনে আম ভাঙতে পারছেননা।

তারা আরো জানান, বাজারে বর্তমানে ল্যাংড়া, ফজলি, লক্ষনা ও আম্রপালি আম পাওয়া যাচ্ছে। এসব আমের দাম বর্তমানে ১৩০০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা মন। চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বন্যা ও বৃষ্টি না হলে এসব আমের দাম হতো ২৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা মন। এক সপ্তাহের মধ্যে আমের দাম বাড়া কমার কারনে আম চাষিদের মূখে হাসি দেখা শুরু হতে না হতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে।

আম চাষিরা জানান, ১০ দিন আগে আমের দাম তেমন পায়নি। এক সপ্তাহ আগে আমের দাম কিছুটা বাড়লে আমরা আশায় বুক বাধি। এখন আবার কি কারনে জানি আমে দাম গত ৫ দিন থেকে কমে যাওয়া আমরা দুঃচিন্তায় আছি, চাহিদা ও দাম কমা যাওয়া এবং বৃষ্টির কারনে আম ভাঙছিনা। তাছাড়া গাছে আম পেকে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে সেগুলোই ভাঙছি। এমন অবস্থা চলতে থাকলে থাকলে পথে বসা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় থাকবেনা।

 

এবার বিদেশে আম রপ্তানি তুলনামূলকভাবে কম হচ্ছে। সেইসাথে ব্যাপক ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তারা।
স/শ