টাকা পাচার বন্ধে ব্যাংকগুলোকে কঠোর বার্তা অর্থমন্ত্রীর

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার বন্ধে কঠোর বার্তাসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে ৬ দফা নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মুনাফা অর্জনে ব্যর্থ ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বোনাস বন্ধ করে দেয়া হবে।

ব্যাংকের টাকা বিদেশে পাচারকারীদের দমন করা হবে শক্তহাতে। এছাড়া ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা, ব্যাংকে ‘সেবা কেন্দ্র’ স্থাপন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ হ্রাস করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে বৈঠকে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠকের কার্যবিবরণী সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

জানা গেছে, ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠকে উল্লেখিত নির্দেশ ছাড়াও পরোক্ষভাবে আরও কয়েকটি নির্দেশনা দেয়া হয়। বিশেষ করে নতুন ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে বলা হয়, গ্রাহকের সঠিক যাচাই-বাছাই করে ঋণ দিতে হবে।

এজন্য কোম্পানির ব্যালেন্সশিট পরীক্ষাসহ আয়কর সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করতে হবে। পাশাপশি ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের অতীতের রেকর্ড ও অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসব। সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। দেশের ব্যবসায়ীরা চান ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আসুক।

এটি বাস্তবায়ন না করতে পারলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ে। ফলে ঋণগ্রহীতা ও ব্যবসায়ী উভয়কে লাভবান করতে আমরা এ কাজটি করতে চাই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, অর্থমন্ত্রীর নির্দেশগুলো নীতিবাক্য। ব্যাংকগুলোর প্রতি এসব নির্দেশ থাকতে পারে। কিন্তু এতে ফলপ্রসূ কোনো কাজ হবে না।

ব্যাংকের অনিয়ম সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে একটি করে কেস ধরে অপরাধের জন্য শাস্তি দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ মানি লন্ডারিংয়ের জন্য একটি, ঋণ জালিয়াতিতে সহায়তার জন্য একটি এভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে এ ধরনের নীতিবাক্য আগেও হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে কিন্তু সুফল আসবে না।

জানা গেছে, ২২ জুলাই রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি ও বিশেষায়িত ২টি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের সার্বিক অবস্থা নিয়ে বৈঠক করে অর্থমন্ত্রী। এতে সার্বিক দিক আলোচনা ও পর্যালোচনার পর অর্থমন্ত্রী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কয়েকটি নির্দেশ দেন।

সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে শ্রেণিকৃত ঋণর পরিমাণ কমেছে। তবে আরও খেলাপি ঋণ কমানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ঋণের সুদের হার সরল ও সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ব্যাপারে প্রয়োজনী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

আর কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান মুনাফা অর্জনে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বোনাস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ব্যাংক থেকে কোনো প্রকার মানি লন্ডারিং ঘটনা না ঘটে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

আর যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার বা অন্য কোথাও সরিয়ে রেখেছে তাদের কাউকে ছাড় না দেয়ার নির্দেশ দেন। সেখানে বলা হয়, যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে এ ধরনের কাজ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং তা অব্যাহত রাখতে হবে।

ওই বৈঠকে বেসিক ব্যাংক নিয়ে আলোচনা হয়। বেসিক ব্যাংকের এমডি রফিকুল আলম বলেন, ব্যাংকের বর্তমান আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। এনপিএল ৬০ শতাংশ।

তবে আগামী ৬ মাসের মধ্যে তা ২০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন। বর্তমান ব্যাংকটিতে ৩৩টি লোকসানি শাখা রয়েছে। যা আগামী ৬ মাসের মধ্যে ২৩টিতে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে জানানো হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিরা নিজ নিজ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আগামী ৬ মাসের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও লোকসানি শাখার পরিমাণ কমিয়ে আনার আশ্বাস দেয়া হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ওই বৈঠকে ব্যাংকিং খাতের সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধ আনার ওপর জোর দেয়া হয়। বিশেষ করে বলা হয়, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উত্তরোত্তর বাড়ছে।

এর সঙ্গে তাল মিয়ে ব্যাংকিং খাতের পর্যাপ্ত নগদ থাকা দরকার। তিনি আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী যেসব নির্দেশ দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা হবে। ব্যাংকগুলো এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করছে কিনা বাংলাদেশ ব্যাংক তা মনিটরিং করবে।