‘টাইটানিক’-এর নায়ক জ্যাক সহজেই বেঁচে যেত, জানা গেল অঙ্কের হিসেবে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

১৯৯৭ সালের হলিউড এপিক ‘টাইটানিক’ কি এখনও আপনাকে আলোড়িত করে? টিভিতে ‘টাইটানিক’ দিলে কি নাওয়া-খাওয়া ভুলে বসে পড়েন আপনিও? বিশ্বের অধিকাংশ সিনেমা-প্রেমিকই এর উত্তরে হ্যাঁ বলবেন। জেমস ক্যামেরন পরিচালিত এই ব্লকবাস্টারটি দুই দশক অতিক্রম করেও আজও তুমুল জনপ্রিয়। একেবারে নতুন প্রজন্মের ছেলেময়েরাও এক বা একাধিক বার দেখেছে ‘টাইটানিক’। কিংবদন্তির সেই জাহাজে চড়ে স্বপ্নের পাড়ি দিয়েছে কল্পলোকে। আধুনিক ট্র্যাজেডির প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায় এই ছবি। বিচ্ছেদ, আরও ভাল ভাবে বললে চিরবিচ্ছেদের এই মর্মান্তিক কাহিনির মধ্যে কোথাও চিরায়ত সত্যের সন্ধান পান দর্শকরা। তাই আজ আর ‘টাইটানিক’ নিছক কোনও সিনেমার নাম নয়, একি একটি ফোনোমেনন, আধুনিক পৃথিবীতে ‘সুন্দর’-এর এক নিরালা উদাহরণ।

মুক্তির পর থেকে জীবন কুড়ি কুড়ি বছরের পার হয়ে বহে গেলেও ‘টাইটানিক’ কিন্তু আজও ভেসে রয়েছে গণমানসে। বহমান রয়েছে ছবিটিকে নিয়ে বিতর্কও। ২০১৭-এর গোড়ার দিকে অনেকেই বলতে শুরু করেন, এই ছবির নায়ক জ্যাক(ভূমিকায় লিওনার্দো দিক্যাপ্রিও)-কে মোটেই মরতে হত না। নায়িকা রোজ(ভূমিকায় কেট উইনস্লেট)-এর সঙ্গে তার দিব্বি মিলন ঘটতে পারত। পরিচালক ক্যামেরন চেয়েছিলেন বলেই জ্যাককে মরতে হয়েছে। ছবির অন্তিমে টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পরে একটা ভাঙা দরজাকে ভর করে জ্যাক ও রোজ ভাসছিল রাত্রির অন্ধকার হিম সমুদ্রের মাধখানে। রোজ ছিল দরজাটায় ভর করে আর জ্যাক জলে সাঁতরাতে সাঁতরাতে ভাসিয়ে রাখছিল রোজ-সমেত সেই দরজাটাকে। এক সময়ে গভীর ঠান্ডায়, শারীরিক অবসন্নতায় জ্যাকের মুঠো শিথিল হয়ে আসে। ক্রমে সে ডুবে যায় অতলান্তিকের গহীনে। রচিত হয় চিরবিচ্ছেদের এক অনুপম আখ্যান। কিন্তু, কমবেশি দুই প্রজন্মের দর্শক ২০১৭-এর গোড়ার দিকে রব তোলেন— জ্যাক অনায়াসে ভাসমান দরজাটায় ভর করে ভেসে থাকতে পারত। সে ও রোজ দু’জনেই বেঁচে যেত এতে।

তর্ক এমন এক জায়গায় পৌঁছয় যে, স্বয়ং পরিচালককে এসে নামতে হয় বিতর্কের কেন্দ্রে। তিনি জানান, ওই দরজার পাটাতনে যদি জ্যাক ও রোজ দু’জনেই চড়ে বসত, তা হলে নির্ঘাত ওই পাটাতন ডুবে যেত। এবং দু’জনের একজনও বাঁচত না। আর রোজ না বেঁচে থাকলে চিত্রনাট্যটাই সম্ভব হতো না। তার স্মৃতি থেকেই তো নির্মিত হয় এই ছবির কাহিনি।

ব্যাপার তখনকার মতো মিটে গেলেও পরে বছরের শেষে আবার এই বিতর্ককে চাগিয়ে তুলল যারা, তারা একান্ত ভাবেই এই প্রজন্মের। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য মিরর’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডেলেইডের ওয়েস্টমিনস্টার স্কুলের ১০ ছাত্রী অঙ্কের হিসেব দাখিল করে জানাল— জ্যাককে রীতিমতো বাঁচানো যেত।

এই ছাত্রীদের বক্তব্য— জ্যাক আর রোজ যদি তাদের শরীরে লাইফ জ্যাকেট চড়িয়ে পাটাতন ধরে ভেসে থাকত, তা হলে কারোকেই মরতে হতো না। এই ১০ ছাত্রীর দলটি অক্টোবরে ন্যাশনাল ম্যাথস ট্যালেন্ট কোয়েস্ট-এ অংশ নেয়। তারা জানায়, দরজার প্লবতাকে হিসেব করে তারা দেখেছে, যদি তার উপরে লোক চড়ে বসে, তবে তার ভেসে থাকার ক্ষমতা কমে না। বরং তা বেড়ে যায়। সুতরাং, জ্যাক ও রোজ দু’জনেই বেঁচে থাকত বহাল তবিয়াতে। আর ছবিতে দেখা গিয়েছে, জ্যাক তলিয়ে যাওয়ার খানিক পরেই রোজকে উদ্ধার করে একটি লাইফ বোট। সুতরাং জ্যাক পাটাতনে থাকলে সেও উদ্ধার পেত। ক্যামেরন চাননি বলেই তাকে মরতে হয়।

এহেন অকাট্য গণিতের সামনে পরিচালক ক্যামেরন কী বলবেন, জানা নেই।