জয়পুরহাটে হাতে তৈরি আলুর চিপস সাড়া ফেলেছে দেশে-বিদেশে

এস এম শফিকুল ইসলাম:
সারা দেশের মোট উৎপাদনের অর্ধেকের বেশী পরিমান আলু উৎপাদিত হয় জয়পুরহাট জেলায়। এ জেলাকে আলুর জেলা হিসেবেই চিনেন দেশবাসী। আবার নতুন করে এর সাথে যোগ হয়েছে আলুর তৈরি চিপস্। খেতেও সু-স্বাদ, দেখতেও ভাল তাইতো দেশ-বিদেশে জয়পুরহাটের আলুর চিপস্রে চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে।

প্রতিদিনের চাহিদা অনুযায়ী আলুর চিপস্ তৈরি করতে মৌসুমের শুরু থেকে জেলার আক্কেলপুর উপজেলার শ্রীকৃষ্টপুর ও ক্ষেতলাল উপজেলার ঘোড়শাল গ্রামের প্রায় পাঁচ-শতাধীক পরিবারের নর-নারী ব্যস্ত সময় পার করছেন।

শুধু তাই নয়, ওই পরিবারের সদস্যরা চিপস্ তৈরিতে অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে মোটা অংকের লাভের মুখ দেখছেন। আলুর তৈরি চিপস্ এলাকার চাহিদা মিটানোর পর দেশে-বিদেশে বিক্রি করে এ জেলার দুইটি উপজেলার দু’গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধীক পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদেরকে অনুস্মরণ করে বর্তমানে আশ-পাশের গ্রামগুলোতেও এখন তৈরি হচ্ছে আলুর চিপস্। প্রতিনিয়ত ওই গ্রামগুলোতে পাইকাররা এসে তাদের হাতে তৈরি আলুর চিপস্ ক্রয় করছেন।

আক্কেলপুর উপজেলার শ্রীকৃষ্টপুর ও ক্ষেতলাল উপজেলার ঘোড়শাল গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, ওই দুটি গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের নারী-পুরুষরা আলুর চিপস্ তৈরীর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে কেউ আলু ও পানি ভর্তি পাতিল নিয়ে চুলায় দিয়ে সিদ্দ করছেন, কেউ আলু কাটছেন, আবার কেউ কাঁটা আলুর চিপস্গুলো রোদে শুকাতে দিচ্ছেন। অনেকেই সেগুলো রোদের বিপরিতে উল্টিয়ে দিচ্ছেন। এ ভাবেই চলছে তাদের হাতে তৈরি আলুর চিপস্রে কাজ। এ মৌসুমে যেন তাদের হাতে বাড়তি কোনও সময় নেই বললেই চলে। নিজ গ্রাম বা আশ-পাশের গ্রাম থেকে সরাসরি কৃষকদের নিকট থেকে বড় আকারের কার্ডিনাল আলু প্রতিমন (৪০ কেজি) ওজনে ২৮০ টাকায় দরে বাঁকীতে নিয়ে সেগুলো পাতিলে করে গরম পানিতে সিদ্দ করার পর কেটে রোদে শুকিয়ে তৈরী হচ্ছে আলুর চিপস্। কার্ডিনাল ৪০ কেজি আলু থেকে চিপস্ তৈরী হয় প্রায় ১০ কেজি। শুকানোর পর তা পাইকাদের নিকট বিক্রি হয় ৪ হাজার টাকা মন দরে। অথাৎ ১০ কেজি চিপস্ বিক্রি হয় ১ হাজার টাকায়। এতে পুঁজি ছাড়াই অল্প সময়ে প্রতি মনে লাভ হচ্ছে প্রায় ৭২০ টাকা। এ ভাবেই শতশত মন হাতে তৈরি শুকনো আলুর চিপস্ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন ওই দুই গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার।

স্থানীয় চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি সারা বছর ধরে রাজধানী ঢাকা, রাজশাহী, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে জয়পুরহাটের হাতে তৈরি আলুর চিপস্। এমনকি দেশের বাহিরে বিদেশের মাটি মালশিয়া ও আরব-আমিরাতেও যাচ্ছে। সু-স্বাদু এই মজাদার চিপস্ শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও সারা ফেলেছে।

শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামের চিপস্ ব্যবসায়ী আবু রায়হান বলেন, ৪০ কেজি ওজনে চার মন আলু সিদ্দ করে কেটে সেগুলো রোদে শুকিয়ে এক মন শুকনো চিপস্ তৈরী করা যায়। আর এক মন শুকনো চিপস্ তৈরী করতে খরচ হয় দেড় হাজার টাকা। সময় লাগে দেড়/দুই দিন। শুকনো এক মন চিপস্ বাজারে বিক্রি হয় সাড়ে চার হাজার টাকা। দুই দিনে লাভ হয় তিন হাজার টাকা। বাপ-দাদার আদি ব্যবসা হিসেবে আজও আমরা তা চালিয়ে আসছি। ব্যবসা করে আমরা পরিবারের উন্নতিও করেছি। আমাদের ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে লেখাপড়াও করছে।

ঘোড়শাল গ্রামের ব্যবসায়ী আশরাফ আলী বলেন, এ ব্যবসা করে আজ আমরা গ্রামের সবাই সুখী। আগে এনজিওগুলো থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে আমাদেরকে। এখন আর তা করতে হয়না। তাছাড়া পাইকারেরা এখন বাড়ীতে এসেই নিয়ে যায় চিপস্গুলো। আবার অনেকে অগ্রীম টাকাও দিয়ে যায় চিপস্ নেওয়ার জন্য। অল্প পরিশ্রমে বেশ ভালই লাভ হয়। তাছাড়া হাতে তৈরি আলুর চিপস্ এখন সারা বছর ধরেই চলে। শুকানোর পর পলেথিনে মুড়ে রাখলে সেগুলো নষ্টও হয়না বা পোকাও লাগে না।

বগুড়া জেলার মোকামতলা বাজারের পাইকার তোতা মিয়া বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসার সাথে জড়িত। আগে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হাতে তৈরি জয়পুরহাটের আলুর চিপস্ বিক্রি করতাম। গত ২/৩ বছর থেকে মালশিয়া ও আরব-আমিরাতে এই চিপস্ বিক্রি করছি। বিদেশে এ চিপস্রে ব্যাপক চাহিদা আছে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমি ঠিকমত সরবরাহ করতেই পারিনা।

আক্কেলপুর পৌর সভার মেয়র গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর বলেন, শ্রীকৃষ্টপুর ও ঘোড়শাল গ্রামে চিপস্ তৈরীর ফলে খাদ্য হিসেবে আলুর বহৃবিদ ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া এ জেলার উৎপাদিত আলু থেকে হাতে তৈরি চিপস্ এখন দেশে-বিদেশে যাচ্ছে। সরকার যদি এই শিল্পের সাথে জড়িত পরিবারগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা দেন তাহলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখবে এ পরিবারগুলো।

স/অ