জয়পুরহাটে বারো শিবালয় মন্দিরে শিবলিঙ্গ ভাঙচুর

জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ
জয়পুরহাটের জয়পুরহাট সদর উপজেলার বেল আমলা গ্রামে অবস্থিত  প্রায় ৫শ’ বছরের প্রাচীন- ঐতিহ্যবাহী বারো শিবালয় মন্দিরের ১২টি শিবলিঙ্গসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রাচীন মুর্তি ভাংচুর করেছে দূর্বৃত্তরা। গত (শুক্রবার) মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা মন্দিরের প্রাচীর টপকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে পরিকল্পিত ভাবে এ ভাংচুরের ঘটনা ঘটানো হয়েছে দাবি মন্দির পরিচালনা কমিটির  । শনিবার সকালে ভক্তরা পুজা-অর্চনা করতে গিয়ে এসব ভাংচুর দেখতে পায়। এ ঘটনায় সাধারন ভক্তদের মাঝে এখন আতংক বিরাজ করছে।

 
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, শনিবার ভোর ৬টার সময় ঐতিহাসিক বারো শিবালয় মন্দিরের পুরোহিত ভক্তসহ মন্দিরে পুজা-অর্চনা করতে গিয়ে ভেতর থেকে মন্দিরে গেটে তালা মারা এবং মন্দির বিহরাঙ্গন চত্বরের গাছের ডালপালা ভাঙা দেখতে পেয়ে মোবাইল ফোনে বিষয়টি মন্দির পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন। পরে পুলিশ সহ মন্দির পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দরা এসে মন্দিরে ভেতরে প্রবেশ করে ১২টি শিব লিঙ্গ সহ বিভিন্ন মূর্তি ভাঙ্গা অবস্থায় দেখতে পান। এর  মধ্যে  প্রধান শিবলিঙ্গে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া এবং  মূল মন্দিরের গেটে অবস্থিত-  ‘হনুমানজি মন্দিরে’র মূর্তিটিতে দড়ির ফাঁস লাগিয়ে বাইরে বের করে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। ভারী ও শক্ত রড জাতীয় কোন অস্ত্র দিয়ে শিবলিঙ্গ ও অন্যান্য মূর্তিতে আঘাত  করা হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।


ভাংচুরের খবর পেয়ে জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. সামছুল আলম দুদু, জেলা প্রশাসক মোকাম্মেল হোসেন, জেলার পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান রকেট, পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলাম, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ফরিদ হোসেন সহ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং দ্রুত দোষীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে মন্দির ভাংচুরের ঘটনায় স্থানীয় জনমনে ব্যাপক আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। তবে কে বা কারা এসব তান্ডব চালিয়েছে তা এখনো চিহ্নিত হয়নি।

 
জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. সামছুল আলম দুদু ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, এটি একটি পরিকল্পিত আক্রমন এর সাথে যেই জড়িত থাক, যে দলের বা মতেরই হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

 
জেলা প্রশাসক মোকাম্মেল হোসেন সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, মন্দিরের যে গুলো ক্ষতি হয়েছে সে গুলো মেরামত করার জন্য তাৎক্ষনিক ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছি। এধরনের ঘটনা ন্যাক্কারজনক। অবিলম্বে দোষীদের খুজে বের করা হবে। মন্দিরের নিরাপত্তা জোরদারের ও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।


পুলিশ সুপার মোঃ রশিদুল হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, দুবৃত্তরা এখানে নাশকতার পরিকল্পনা নিয়েই এসেছিল। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে এবং তদন্ত  শুরু করেছে। অবিলম্বে দুর্বৃত্তদের খুজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। পুলিশ সুপার আরো জানান, এর প্রায় ২ মাস আগে একই মন্দিরের একটি বেদীতে আংশিক অগ্নিসংযোগসহ কয়েকটি ক্ষুদ্রাকৃতিরব্রোঞ্জ মুর্তি চুরির ঘটনা ঘটে। তবে অদৃশ্য কারনে কিছু দিন পর চুরি যাওয়া মুর্তিগুলো ওই মন্দিরেই আবার ফেরৎও দিয়ে যায় দূর্বৃত্তরা।

বারো শিবালয় মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক অনিল কুমার আগরওয়ালা সিল্কসিটি নিউজকে জানান, এ আঘাত তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে আঘাত। এতে তারা অত্যন্ত মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ। তারা দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানান।

 
মন্দিরের সেবায়েত মিতু মোহন্ত জানান, ভাঙ্গা মুর্তিতে পুজা করা যায়না। দুর্বৃত্তরা এটা জেনেই একাজ করেছে। এখন নতুন করে মুর্তি বানানো ছাড়া আর পুজা করা যাবেনা।

 
এদিকে মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় সাধারন ভক্তদের মাঝে এখন আতংক বিরাজ করছে। ভক্তরা জানান, দীর্ঘদিনের এই মন্দিরে ভাংচুর করায় তাদের পুজা দেওয়া এখন কঠিন হয়ে পড়বে। রাতের বেলায় এই মন্দির এলাকায় আসতেও তারা এখন ভয় পাচ্ছেন বলে।

স/শ