জয়পুরহাটে একই পরিবারের ৮ জনের আগুনে মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট:
জয়পুরহাট শহরের আরামনগর এলাকায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে একই পরিবারের ৮ জনের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তিনটি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।রিপোর্টে ‘বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট’ থেকেই ওই বাড়িতে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়ার দাবি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন স্থানীয় সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
গত ৭ নভেম্বর বুধবার রাতে জয়পুরহাট শহরের আরামনগর এলাকার মুরগি ব্যবসায়ী আব্দুল মোমিনসহ তার পরিবারের ৮ সদস্য ঘুমন্ত অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হন।ওই রাতেই ঘটনাস্থলে ৩ জন ও পরে উন্নত চিকিৎসা জন্য ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ন ইউনিটের উদ্দেশে নেয়ার পথে পরিবারের অপর ৫ সদস্যের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় জয়পুরহাট জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল। তাছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঢাকা থেকে আসা সিভিল ডিফেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের একটি পৃথক টিম তদন্ত করে।
সম্প্রতি এ তিনটি কমিটিই তাদের স্ব স্ব কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়। তাদের সবকটি রিপোর্টেই ‘বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট’ থেকেই ওই বাড়িতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিল বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়, ওই বাড়ির বৈদ্যুতিক ওয়ারিং খুবই দুর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ ছিল। বাড়ির ভেতরে থাকা বৈদ্যুতিক লাইনের একাধিক সুইচ বোর্ডে ব্যবহৃত পুরনো ও নিম্নমানের বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে র্দীঘদিন ধরে ৩টি ফ্যান, ৫টি লাইট (বাল্ব), রাইস কুকার, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়মিত ও নিরবচ্ছিন্ন ব্যবহার করা হচ্ছিল।
ফলে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন ওই বাঁশের চাটাইয়ের তৈরি সিলিংয়ে লেগে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডটি ঘটে। তাছাড়া বাড়ির গেটের কাছে প্রচুর গরুর গোবরের জ্বালানি (ঘুটা) স্তূপাকারে মজুদ করে রাখা ছিল।
রাত ৯টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের সময় সবাই ঘুমিয়ে ছিল এবং বাড়ির মেইনগেটে ভেতর থেকে তালা দেয়া ছিল। অগ্নিকাণ্ডের পর ওই তালার চাবি খুঁজে পাননি তারা। বাড়ির মেইন গেটের পাশে প্রচুর জ্বালানি (গোবরের তৈরি) ছাড়াও বিভিন্ন প্রকারের দাহ্য পদার্থ থাকায় দ্রুত আগুন ধরে ছড়িয়ে পড়ায় বাড়ির কোনো সদস্যই ওই গেট দিয়ে বাইরে বের হতে পারেননি।
অগুন লাগার পর বাড়ির ভেতরে আটকেপড়া মানুষের আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে বাইরে থেকে বাড়ির গেট ভাঙতে না পেরে শাবল দিয়ে ওই বাড়ির রান্নাঘরের জানালা ভেঙে মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় তাদের উদ্ধার করেন।
ওই জানালা ভাঙার জন্য শাবলটি অনেক দূরের একটি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে আনতে ৩০-৪০মিনিট লেগে যায়। তাছাড়া বাড়িতে প্রবেশের গলি (পথ) অনেক সরু হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে সময় লাগে। আর এমন বিলম্বের কারণেই ছড়িয়ে পড়া আগুনে বাড়ির ভেতরেই ৩ জন ও পরবর্তীতে মারাত্মক অগ্নিদগ্ধ হওয়া ৫ জন চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পথে মারা যান। এ অগ্নিকাণ্ডে ওই বাড়ির আনুমানিক ৬ লাখ টাকার বিভিন্ন মালামাল পুড়ে গেছে বলেও তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
স/শা