জয়পুরহাটে ইউপি চেয়ারম্যান হত্যা মামলার আসামীরা জামিনে মুক্ত, শংকায় নিহতের পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক,জয়পুরহাট:
জয়পুরহাটে নব নির্বাচিত ইউ’পি চেয়ারম্যান একে আজাদকে গুলি করে হত্যার ঘনটায় সেই আলোচিত মামলার দুই বছর অতিবাহিত হলেও বিচার কাজ শুরু হয়নি আজও। অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশের নিকট থেকে মামলাটি সিআইডিতে পার করা হলেও মামলার কোন অগ্রগতি হয়নি। কর্মকর্তা আসে- যায়, হাতও বদল হয়। কিন্তু আজও ওই মামলার বিচার কাজ শুরু হয়নি। এ কারণেই নিহতের মা সাহারা বেগম ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে আক্ষেপ করে জানান, বিচারটা হয়তো তিনি দেখে যেতে পারবেন না।

নিহতের বড় ভাই আব্দুল হাই বলেন, মামলার মুল আসামীদের ধরা হচ্ছেনা। আসামীদের ধরার ব্যাপারে শুরু থেকেই পুলিশের গরিমসি লক্ষ্য করা গেছে। ধরাপড়া আসামীরা জামিনে মুক্ত হয়ে তাদের হুমকি দিচ্ছে। প্রশাসনের গড়িমসিতে তাদের পরিবার এখন শংকায় আছে। আলোচিত একটি হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিচার না পাওয়ায় তারা এখন আতংকিত।

নিহত চেয়ারম্যানের ছোট ভাই ও মামলার বাদী এনামুল হক জানান, আমার ভাইয়ের হত্যার ঘটনা দুই বছর অতিবাহিত হল কিন্তু আজও মামলার কিছুই হয়নি। বিচার কাজও শুরু হয়নি। এমনকি মুল আসামীরাও ধরা পড়ছেনা। যাও কয়েকজন ধরা পড়েছে, তাড়াও জামিনে বের হয়ে এসেছে। এখন সবাই দিনের বেলায় শহরে ঘুরাফেরা করছে। পুলিশ দেখেও তাদের ধরছে না। তাহলে বিচার কি হবে বলার আর অপেক্ষা রাখে না।

নিহতের আরেক ভাই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন স্বাধীন সিল্কসিটি নিউজকে জানান, ভাই হত্যার বিচারের দাবীতে সবসময় সোচ্চার তারা। হত্যার বিচার দাবীতে মানববন্ধন, সংবাদ সন্মেলনসহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে অনেক আবেদন করেছে তারা কিন্তু কোথাও থেকে কোন সাড়া পায়নি। বর্তমানে মামলাটি সিআইডিতে আছে। সিআইডি কর্মকর্তারাও কিছুই করছেনা। একের পর এক কর্মকর্তা আসে কিন্তু মামলার কোন অগ্রগতি হয়না। হত্যার দুই বছর পার হয়ে গেল আজও মামলার বিচার কাজ শুরু হয়নি। ঈদের পর ভাই হত্যার বিচার দাবীতে বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে বলে জানান তিনি।

মামলার বিবরণ ও পরিবারে লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইউ’পি নির্বাচনের পরপরই ২০১৬ সালের ৪ জুন রাতে জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান আজাদকে একদল সন্ত্রাসী গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধূনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরে সেখান থেকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে নিয়ে তার মাথায় সেলাই করা হয়। এরপর তাকে নেওয়া হয় ঢাকার মেট্রোপলিটন হাসপাতালে। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে অপারেশনের পর তাকে নেওয়া হয় পপুলার ডায়াগনস্টিকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২জুন রাতে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে ওই ঘটনায় চেয়ারম্যানের ছোট ভাই এনামুল হোসেন ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ক’জনকে আসামী করে জয়পুরহাট সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর ওই রাতেই পুলিশ এজাহার ভূক্ত আসামী সৈকতসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে। পরে ধৃত আসামীদের দেওয়া তথ্য মতে সোহেল, হাকিম, সাদ্দাম ও মনিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আজও পলাতক আছে নাজিম, আলীমসহ কয়েকজন।

ওই ঘটনায় পরের দিন ১৩ জুন রাতে সোহেল ও মনিরকে ক্রসফায়ার দেয় পুলিশ। সৈকত, হাকিম ও সাদ্দাম আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার মুল পরিকল্পনাকারীসহ বিস্তারিত জবানবন্দি দেয়। মামলার মুল আসামী মুন্না পারভেজ, নাজিম ও আলীমকে খুজে পায়নি পুলিশ। তবে পরবর্তীতে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা ঢাকার তুরাগ এলাকা থেকে মুন্না পারভেজকে গ্রেফতার করে। ভাদসা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হাতেম আলীর নিকট থেকে ২ লাখ টাকা পেয়ে আসামীরা ওই চেয়ারম্যানকে হত্যা করেছে এমন তথ্য ধৃত মুন্না পারভেজ র‌্যাবের নিকট দিয়েছে।

হাতেম আলী ছিলেন, সে সময়ে একে আজাদের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী। ওই সময় হাতেম আলী নৌকা প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী একে আজাদের কাজে বিপুল ভোটে পরাজিত হন। ওই সময় মুন্না পাভেজকে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। সেই থেকে মুন্না পারভেজ জয়পুরহাট জেলা কারাগারে বন্দী আছে।

সরকার পক্ষের আইনজীবি এ্যাড. নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, মামলাটির বিচারকাজ এখনো শুরু হয়নি। শুরু হলে মুল আসামীরা অবশ্যই শাস্তি পাবে।

 

জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মোঃ রশিদুল হাসান জানান, মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিতে পার করে দেওয়া হয়েছে। সিআইডি মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।
স/শ