জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে ঝড়ের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, আহত ৩০ (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট:
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বাগুয়ান, নওদাপাড়া, সরদারপাড়া, পারইল, হাজিপুর, বালিঘাটা, সালাইপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের উপর কাল বৈশাখী ঝড় তাণ্ডব চালিয়েছে। এ সময় কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎই কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডব শুরু হয়। ঝড়ে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার জাহিদুল ইসলাম (২৭), জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বাগুয়ান গ্রামের জুয়েল (৩০), কাউছার (৩০), আনিছুর (৪০), সাজ্জাদ (২০), আফজাল (৩৫), মাহমুদা (৪০), মীম (২৮), শুভ (২০), শরিফ (৭০), নওদাপাড়া গ্রামের আসলাম (৩০), আব্দুল মতিন (৩২), আব্দুস সাত্তার (৪০), শমসাবাদ গ্রামের ফারুক (২০), দমদমা গ্রামের মুনছুর (৫০), পাঁচবিবি শহরের শামীম (২০), গদাইপুর গ্রামের জবেদা (৪৫), কালাই উপজেলার বানদিঘি গ্রামের জায়বর (৪০), পুনট গ্রামের মুনছুর (৪৬), গাইবান্দার পানিতলা গ্রামের ইদ্রিস (৫০) কে উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বাগুয়ান গ্রামের জুয়েল হোসেন জানান, দুপুরের দিকে পাড়ার কোন মানুষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝড় শুরু হয়। ঝড়ের সময় বাড়িতে ঢুকার কোন সুযোগ ছিল না। তাই জিনিসপত্র কিছু বের করতে পারা যায়নি।
একই গ্রামের আমেনা বিবি জানান, দুপুরে রান্নার পর খাওয়ার সময়টুকু পায়নি তারা। বাড়ির মধ্যে যা ছিল তার সব কিছু উড়ে নিয়ে গেছে ঝড়। বাড়িতে এক বেলা খাবার কোন কিছু ও নাই এখন।
ঝড়ে আহত সাজ্জাত হোসেন জানান, ঝড় শুরুর পর বাড়ির মধ্যেই ছিল তারা। একের পর এক পাকা দেয়াল ভাঙতে থাকে ঝড়ে। নিজেকে লুকানোর সময়ও দেয়নি। দেয়ালের ইট পড়ায় আহত হয়েছেন তিনি।
ঝড়ে জয়পুরহাট হিলি সড়কের নওদা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যালয়টির কয়েকটি কক্ষ ভেঙে পড়েছে এবং পুরো বিদ্যালয়ের টিনের চাল উড়ে গেছে। সেই সাথে গাছপালাও উপড়ে পড়েছে। নওদাপাড়া বাজারের সবক’টি দোকানের টিনের চালা উড়ে গেছে এবং ইটের দেয়াল ভেঙে পড়েছে।

ধরঞ্জী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। ৫ মিনিটের ঝড়ে এ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ধরঞ্জী ইউনিয়নের বাড়িঘর ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে বেশি। গাছপালা ভেঙ্গে তছনছ। গ্রামে গ্রামে এখন শুধুই কান্না। তিনি প্রশাসনের কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য দ্রুত সাহায্যের আবেদন জানান।

পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিবুল আলম জানান, মঙ্গলবার বিকেলে কাল বৈশাখী ঝড়ে উপজেলার বাগুয়ান, সরদারপাড়া, নওদাপাড়া ও বালিঘাটাসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের কাঁচাপাকা ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গাছপালা, দোকানপাট লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। খবর পেয়েই তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন এবং ওইসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলেন। তিনি বলেন, ওইসব গ্রামের ৪০০ শতাধিক ঘরবাড়ি ও কিছু দোকানপাটের টিনের চাল উড়ে যায়। ঝড়ের কবলে পড়ে এ উপজেলার ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগ, কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করছেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ ও সাহায্য পৌছানোর চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।

ভিডিও…

স/শা