জয়পুরহাটে ঝুঁকির অজুহাতে চলছে গাছ নিধন

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাটঃ
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত গ্রামের বিভিন্ন স্থানে লাগানো গাছগুলো ঝুঁকির অজুহাতে চলছে নিধন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ, জলবায়ু সহিষ্ণু বাংলাদেশ” গড়ার জন্য সরকার থেকে অপ্রয়োজনে গাছ না কাটা ও পতিত জমিসহ রাস্তার ধারে বেশি বেশি করে গাছ লাগার কথা বলা হলেও সরকারের এই প্রোগামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালিঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জয়পুরহাট জেলার সামাজিক বন বিভাগ এর কর্মকর্তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য গাছ নিধন করছেন।

চেয়ারম্যান সামাজিক বন বিভাগে যে দরখাস্ত দেন তাতে ইউনিয়ন কর্তৃক গাছ কাটার রেজুলেশন ও উপজেলা প্রশাসনের অনুমতির কোন রেজুলেশন কপিও সংযুক্ত করা হয়নি বলে বনবিভাগ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়।

সরেজমিন ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা যায়, গ্রামের রাস্তাতে যানবাহন, মানুষের চলাচল,যান-মালের ক্ষতির অজুহাতে ঝুঁকিযুক্ত গাছকে অপসারণের নামে পাটাবুকা, সুলতানপুর, নওদা এলাকায় বড় দাঁড়ানো গাছও কেটে ফেলছেন বলে জানান এলাকাবাসীরা। অনুমতি পত্রের বেশির ভাগ গাছ কেটে ফেলা হলেও সীমানা জটিলতায় আটকে যাওয়া নওদা এলাকায় রাস্তা থেকে ৩-৪ ফুট দূরে সোজা হয়ে দাঁড়ানো একটি রেইট্রি গাছ দেখে বোঝা যায় গাছগুলো কত ঝুকিপূর্ণ ছিল। ইতিমধ্যেই যার ডাল-পালা কাটা হয়ে গেছে।


বগুড়া বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের (সামাজিক বন বিভাগ) গাছ কাটার অনুমতি পত্র সূত্রে জানা যায়, বালিঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে জয়পুরহাট সামাজিক বন বিভাগে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ গাছের মূল্য নির্ধারনসহ গাছ কাটার দরখাস্ত করেন, সেই সময়ে দরখাস্তে উল্লেখিত স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ গাছের ঘটনাটি আদও সত্য নয় বলে এলাকাবাসীদের তথ্য মতে জানা যায়।
দরখাস্তের প্রেক্ষিতে জয়পুরহাট অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোন প্রকার গাছ পরিদর্শন ছাড়াই ২০১৮ সালের জুন মাসে গাছের সংখ্যা উল্লেখ ছাড়াই কিছু সংখ্যক গাছের মূল্য নির্ধারণের জন্য বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুমতির জন্য পাঠায়। এরই প্রেক্ষিতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ সুবেদার ইসলাম বনজদ্রব্য পরিবহণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০১১ এর বিধি মোতাবেক কিছু শর্তসাপেক্ষে গাছ বিক্রয়সহ কাটার অনুমতি প্রদান করেন।

অনুমতিপত্রের শর্তে দরপত্রের মাধ্যমে গাছ বিক্রির কথা থাকলেও চেয়ারম্যান কোন দরপত্র না দিয়েই ৭০ হাজার টাকাই জনতা ”স’ মিলের কাছে গাছগুলো বিক্রি করেন। প্রতিবেদকের কাছে জনতা ’স’ মিলের স্বত্বাধিকারী মোঃ আলম গাছ কেনার কথা স্বীকার করলেও তিনি বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয়ের অনুমতির পত্র ছাড়া দরপত্রের কোন কাগজই দেখাতে পারেনি। গাছ কাটার পর দ্বিগুণ গাছ লাগার কথা থাকলেও ওই এলাকায় নতুন গাছ লাগানোর কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। এছাড়াও বনজদ্রব্য নিবন্ধনকৃত ডিপো ব্যতীত ”স” মিল এলাকায় কাটা গাছ মজুদ করা যাবে না শর্ত থাকলেও তা না মেনে সরাসরি ”স” মিলে কাটা গাছ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয় কর্তৃক অনুমতি পত্রে গাছের সরকারী মূল্য নিম্ন দাম ধরা হয়েছে পাটাবুকা মকবুল সরদারের বাড়ীর রাস্তার মোড়ের উপর রেইট্রি গাছ ৬২১১ টাকা, পাটাবুকা মকবুল সরদারের বাড়ীর রাস্তার মোড়ের উপর বটগাছ ৩৭৫০ টাকা, পাটাবুকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এর নিকট রাস্তার পাশের বটগাছ ৩০০০ টাকা, নওদা সরদারপাড়া এলাকায় রেইট্রি গাছ ৫৩৬০ টাকা, নওদা হিন্দুপাড়া রাস্তার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের রেইট্রি গাছ ৫৫৩৬ টাকা, কাশপুর সুলতানপুর মুক্তিযোদ্ধা তেজেন মাষ্টারের বাড়ীর পাশের ৬৩৮২ টাকা ভ্যাটসহ মোট ৩৪ হাজার ৭ শত ৯৭ টাকা। গাছের প্রজাতি ও সাইজ অনুপাতে যে সরকারী মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা অবাস্তব বলে এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন।

নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক এলাকাবাসীরা বলেন, গাছগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হচ্ছে কিন্ত এত ঝড়-বৃষ্টি গেল তবুও ত গাছগুলো পড়ে যায়নি, এদিকে গাছগুলো যদি বড়ই না হবে তাহলে ঝুঁকিপূর্ণ হলো কেমন করে, গাছের যে সরকারী মূল্য ধরা হয়েছে গাছের একটা শাখার দাম তাই হবে, এতে করে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। আসলে সবকিছুই চেয়ারম্যান করছেন ক্ষমতার জোড়ে।

গাছ ক্রেতা জনতা ’স’ মিলের স্বত্বাধিকারী মোঃ আলম জানান, সামাজিক বন বিভাগের কাগজের ভিত্তিতে গাছ ক্রয় করেছি, চেয়ারম্যান মোটের উপর মূল্য ধরে আমার কাছে গাছ বিক্রি করেছে, কোন দরপত্রের মাধ্যমে গাছ ক্রয় করেনি।

সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি সদস্য রেজা সরদার ও জহর আলী বলেন, গাছ কাটার রেজুলেশনের ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না, তবে কিছু কিছু গাছ ঝুঁকিপূর্ণ আছে এটা সত্য, যখন এলাকায় গাছ কাটতে আসে তখন জানতে পারি গাছের দরপত্র হয়েছে গাছ কাটার জন্য।

বালিঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুজ্জামান চৌধুরী বিপ্লব জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় এলাকাবাসী ও ইউপি সদস্যদের অনুরোধে রেজুলেশন করে গাছ কাটার অনুমতি চাওয়া হয়েছে এবং দরপত্রের মাধ্যমে গাছ বিক্রয় করা হয়েছে।

সামাজিক বন বিভাগের ফরেষ্টার বাহার উদ্দিন বলেন, চেয়ারম্যানের আবেদনের প্রেক্ষিতে গাছ পরিদর্শন করে মূল্য নিধারণসহ গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মির্জা মাহবুবুল জানান, আমি নতুন এসেছি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না,তবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল আলম জানান, আমি ছুটিতে ছিলাম, গাছ কাটা যদি নিয়ম-মাফিক হয় তবে সমস্যা নেই, নিয়ম-মাফিক না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স/অ