জেসমিনের মৃত্যু খতিয়ে দেখতে রাজশাহীতে র‌্যাবের তদন্ত দল

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :

নওগাঁ থেকে আটকের পর হেফাজতে মারা যাওয়া সুলতানা জেসমিনের (৪৫) মৃত্যুর অভিযোগটি গুরুত্বসহকারে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাব।

তদন্তের অংশ হিসেবেই অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থল নওগাঁয় গেছেন র‌্যাব সদর দপ্তরের তদন্ত দল। তারা ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেবেন।

র‌্যাব সূত্র জানায়, যে কোন অভিযোগ তদন্তে র‌্যাব সদর দপ্তরের নিজস্ব ইন্টারনাল ইনকোয়ারি সেল (আইইসি) রয়েছে। সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর বিষয়টি তদন্তে সেই সেলের অধীনে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।

র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বুধবার (২৯ মার্চ) র‌্যাব সদর দপ্তরের গঠিত কমিটির সদস্যরা নওগাঁ পৌঁছেছেন। এই কমিটি সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ, তাকে আটকের প্রক্রিয়া এবং সবশেষে অসুস্থ্য হওয়ার পর তার মারা যাওয়ার বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে খতিয়ে দেখে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবেন।

তিনি আরও বলেন, গত ২২ মার্চ ওই অভিযানে যারা ছিলেন, সেই ১১ জনকে তদন্তের প্রয়োজনে র‌্যাব-৫ এর ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে ডেকে ঘটনার বিস্তারিত জানা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা আবার স্ব কর্মস্থল জয়পুরহাট ক্যাম্পে ফিরে যাবেন।

র‌্যাব সদরদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, র‌্যাব আইন মেনেই যে কোনও অভিযান পরিচালনা করে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আটকের পর অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুলতানা জেসমিন মারা যান। প্রাথমিকভাবে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে র‌্যাবের অভিযানে কোনও দুর্বলতা পাওয়া যায়নি।

তবে যেহেতু এটা নিয়ে একটি অভিযোগ উঠেছে, তাই বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমলে নিয়েছে র‌্যাব সদর দপ্তর। ইন্টারনাল ইনকোয়ারি সেলের অধীনে গত ২৭ মার্চ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এই কমিটি অভিযানে অংশ নেওয়া কোনও সদস্যের গাফিলতি আছে কি-না, বা কারও কোনও অনৈতিক ইনভলভমেন্ট আছে কি-না তা খতিয়ে দেখবে। তদন্তে কারও কোনও গাফিলতি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ২৮ মার্চ দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছিলেন, নওগাঁয় র‍্যাব হেফাজতে আটক নারীর অসুস্থ হওয়া ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

র‌্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যুতে র‌্যাব সদস্যদের কারো দায়িত্বে অবহেলা ছিল কি না জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত যুগ্ম সচিব এনামুল হকের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে, ফেক আইডি ব্যবহার করে তার নামে চাকরি দেওয়া ও বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছিল।

গত ১৯ ও ২০ মার্চ নিজ কার্যালয়ের সামনেই তার নাম ব্যবহার করে প্রতারক চক্র অর্থ লেনদেন করে। এ খবর পেয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতারণায় আল-আমিন নামে একজনের যোগসাজশ রয়েছে। এরপর তিনি খবর পান জেসমিন নামে এক নারীর জড়িত থাকার কথা।

কমান্ডার মঈন বলেন, তিনি (এনামুল হক) সেদিন অফিসে যাওয়ার পথে র‌্যাবের টহল টিমকে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। এরপর তার সামনেই অভিযুক্ত নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় নারী সদস্যরা ছিলেন। সাক্ষী ছিলেন, অভিযোগকারী এনামুল হকও ছিলেন।

সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আটক জেসমিন অকপটে সব অভিযোগ স্বীকার করেন। তার মোবাইলে চলমান অবস্থায় এনামুল হকের নামে খোলা ফেক ফেসবুক আইডি দেখা যায়। তার মোবাইলে সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া যায়। যেখানে লাখ লাখ টাকা জমা রশিদের তথ্য পাওয়া যায়।

পরে জব্দ আলামত নিয়ে একটি কম্পিউটারের দোকানে প্রিন্ট করা হয়। এরপর সেখান থেকে থানায় মামলার উদ্দেশে যাওয়ার পথে ওই নারী অসুস্থ বোধ করেন। তখন র‌্যাব মামলার চেয়ে তাকে হাসপাতালে নেওয়াকেই অধিক গুরুত্ব দেয়।

কমান্ডার মঈন বলেন, র‌্যাব শুধু নয়, প্রত্যেকটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নারী ও শিশু অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সিরিয়াস। আমরা ওই নারীকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাই। তিনি গাড়ি থেকে নেমে নিজে হেঁটে হাসপাতালে ঢোকেন। তার আত্মীয়-স্বজন ও তার এসিল্যান্ডসহ ভূমি অফিসের তার সহকর্মীদের খবর দেওয়া হয়।

সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্ট্রোক সন্দেহে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নারীকে স্থানান্তর করে। সেখানে সিটি স্ক্যানে স্ট্রোকের আলামত আসে। তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

২২ মার্চ সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে রওনা হন সুলতানা জেসমিন। পথে সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের নওযোয়ান মাঠের সামনে পৌঁছালে সাদা রঙের মাইক্রোবাসে করে এসে তাকে আটক করে নিয়ে যায় র‍্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্পের সদস্যরা। আটকের প্রায় ২ ঘণ্টা পর দুপুরে সুলতানাকে অসুস্থ অবস্থায় নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে র‍্যাব। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত চিকিৎসাধীন থাকার পর তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। রামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়।