জেএমবির সিরিজ বোমা হামলা: ১১ বছর পর সাক্ষ্য দিতে আদালতে পুলিশ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সাবেক প্রধান নেতা শাইখ আব্দুর রহমানের ছেলেসহ সক্রিয় সাত সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করার এগারো বছর পর পুলিশের দুই কর্মকর্তা  বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

 

ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতরে ভারপ্রাপ্ত বিচারক সামসুন্নাহার বেগম এ মামলার বাদী এবং মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক এর সাক্ষ্য নেন।সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক আগামী বছরের ১১ জানুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্য নেওয়ার দিন ধার্য করেন।

 

সাত বছর আগে আদালত সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে এই মামলার বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়।

 

সাত আসামি হলেন–শায়খ আব্দুর রহমানের ছেলে নাভিল বিন আব্দুর রহমান, মো. শোয়েব, এনায়েত ওরফে এনায়েত উল্লাহ, মো. ফয়সাল আহম্মেদ, হাবিবুর রহমান, আরমান বিন আহম্মেদ এবং মনোয়ার হোসেন।

 

পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠান জন্য জেএমবির ৬৩ জেলায় বোমা বিস্ফোরণের অংশ হিসেবে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনের উত্তর পূর্ব রাস্তার কোনায় টাইম বোমার বিস্ফোরণের ঘটানো হয়। পরদিন পুলিশ পল্টন থানায় মামলা করে।

 

বিচারিক কার্যক্রম শুরুর পর আদালত থেকে পুলিশসহ ২৫ জন সাক্ষীর বিরুদ্ধে দফায় দফায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তারপরও কোনো সাক্ষীকে আদালতে হাজির করেনি রাষ্ট্রপক্ষ। তবে ওই সাত আসামির মধ্যে গ্রেফতার তিনজনকে নিয়মিতভাবে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হতো।

 

এ মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা জেএমবির তিন সক্রিয় সদস্য হলেন, শায়খ আব্দুর রহমানের ছেলে নাভিল বিন আব্দুর রহমান, মো. শোয়েব, এনায়েত ওরফে এনায়েত উল্লাহ। এই তিনজনকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হয়। এদের মধ্যে নাভিল বিন আব্দুর রহমান অন্য সদস্যদের শারীরীক কসরত ও ট্রেনিং শেখাতো। আসামিরা সবাই জেএমবির সদস্য।

 

মামলার অপর তিন আসামি আদালত থেকে জামিন নিয়ে পলাতক । এরা হলেন: মো. ফয়সাল আহম্মেদ, হাবিবুর রহমান ও আরমান বিন আহম্মেদ। এই মামলার আসমি মো. ফয়সাল আহম্মেদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এই মামলার অপর আসামি মনোয়ার হোসেন জামিনে রয়েছে।

 

এই মামলার বাদী তৎকালীন পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক (বর্তমানে কুমিল্লা কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক) মো. মজনু মিয়া বলেন, ‘এই প্রথমবার আমি সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতের কাগজ পেয়েছি। আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছি। আরও আগে কাগজ পেলে সাক্ষ্য দিতে আসতাম। মামলাটিও দ্রুত শেষ হতো। আদালত থেকে সাক্ষ্য দেওয়ার কাগজ না পেলে আমি কি করবো?

সাক্ষ্য দেওয়া অপর পুলিশ কর্মকর্তা হলেন, তৎকালীন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. জাহিদ চৌধুরী। তিনি বর্তমানে রংপুর মহানগর গোয়েন্দা পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

 

তিনি বলেন,‘‘এই  প্রথম আমি সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতের কাগজ পেয়েছি। কাগজ পেয়েই সাক্ষী দিতে এসেছি। আদালত থেকে সাক্ষী দেওয়ার জন্য কোন ম্যাসেজ না পাইলে কি করবো ?”

 

বিস্ফোরক আইনে করা এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. আব্দুর রাজ্জাক মামলাটি তদন্ত করে ২০০৫ সালের ২ নভেম্বর জেএমবির আট সক্রিয় সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়।

 

সেটি বিচারের জন্য পাঠানো হয় ঢাকার এক নম্বর অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে।

 

আদালত অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে জেএমবির আটজনের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ৮ নভেম্বর বিচার শুরু করেন। উল্লেখ্য এই মামলার অপর আসামি মাওলানা আতাউর রহমান সানীকে অন্য একটি মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়।

 

এরপর থেকে আদালত সাক্ষীর বিরুদ্ধে প্রথমে সমন জারি করে। কিন্তু কোনও সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়নি। এরপর থেকে আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

 

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মো. সাহাবুদ্দিন মিয়া মাকসুদ বলেন, “সাত বছর আগে আদালত জেএমবির সাতজনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করেন। বিচার শুরুর পর আদালত থেকে সাক্ষীদের নামে প্রথমে সমন পাঠানো হয়। পরে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়। আদালতে সাক্ষী হাজির করা পুলিশের দায়িত্ব। আদালত সাক্ষীদের প্রতি নিয়মিত সমন জারি করেছেন। কিন্তু পুলিশের অবহেলার কারণে সাক্ষীরা আদালতে আসেন না। কেন এত দিন সাক্ষীরা আদালতে হাজির হননি তা বলতে পারব না।”

 

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ কাছে দাবি করেন, “এগারো বছর ধরে আসামিরা কারাগারে আছেন। রাষ্ট্রপক্ষের ব্যার্থতার কারণে কোনও সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়নি । আসামিরা নির্দোষ। বিনা বিচারে আসামিরা ১১ বছর কারাগারে। এত বছর পর পুলিশের দুই কর্মকর্তা আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা যদি আরও আগে আসতো তাহলে মামলাটি অনেক আগেই শেষ হতো।”

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন