জুলাইয়ে খুলছে কুয়াকাটায় পর্যটনের দ্বার

সাগরকন্যা খ্যাত পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় প্রায় সাড়ে তিন মাস পরে পর্যটনের দ্বার উন্মুক্ত হতে চলেছে।

আগামী পহেলা জুলাই থেকে করোনা মোকাবিলায় সরকারের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে কুয়াকাটার হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক বরাবর বৃহস্পতিবার কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম এ আদেশ দেন।

এর আগে গত ৫ জুন পর্যটকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে ব্যবসা পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলের হলরুমে পর্যটন ব্যবসায়ীদের নিয়ে ৩ দিনের এবং আবাসিক হোটেল ম্যানেজারদের একদিনের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

এতে সহযোগিতা করেছেন কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল মালিকদের সংগঠন ‘কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।’ এ ছাড়া প্রতিটি আবাসিক হোটেলে রুম সার্ভিসের জন্য পিপিই, থার্মাল স্ক্যানার, অক্সিমিটার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক ইত্যাদি রাখার পাশাপাশি পর্যটকদের যানবাহন জীবাণুনাশক স্প্রে করে জীবাণুমুক্ত করারও ব্যবস্থা নিয়েছে আবাসিক হোটেলগুলো।

জানা গেছে, করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়লে গত ১৭ মার্চ কুয়াকাটার পর্যটনের সবকিছু বন্ধ রাখার আদেশ দেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক। এর পরই সাগরকন্যা কুয়াকাটায় দীর্ঘ ৩ মাস ১৩ দিন বন্ধ থাকে পযর্টন সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা-বাণিজ্য। ফলে ৭শ’ কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ে এখানকার ট্যুরিজম ব্যবসায়ীরা।

এ সবের মধ্যে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, বিনোদন পার্ক, ওয়াটার বাস, ট্যুরিস্ট বোট, আচার ও ঝিনুকের দোকান, সৈকতের ছাতা বেঞ্চ, শুঁটকির দোকান, কাঁকড়া ফ্রাই, শপিংমল, রাখাইন মহিলা মার্কেট, পর্যটক পরিবহনের যানবাহনসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

কেবল আবাসিক হোটেলগুলো অন্তত দুইশ’ কোটি টাকা লোকসানে পড়েছে বলে দাবি হোটেল মালিক সংগঠনের। এ সব ব্যবসা বন্ধ থাকায় ইতিমধ্যে বেকার হয়ে পড়েছেন সহস্রাধিক লোক।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের একটি প্রতিনিধিদল পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করলে তিনি আগামী ১ জুলাই পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবাসিক হোটেলসহ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিয়েছেন। এ আশার বাণী কুয়াকাটায় পৌঁছলে ব্যবসায়ীদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।

শুক্রবার সকাল থেকে দেখা যায়, বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ধোয়া-মোছার কাজ শুরু হয়েছে। নতুন করে সাজানো হচ্ছে পর্যটকদের বরণ করে নিতে।

কুয়াকাটা সি ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসের পরিচালক জনি আলমগীর বলেন, এই মহামারীতে আমাদের ব্যবসা বন্ধে ব্যাপক ক্ষতির মুখে আমরা।

আবাসিক হোটেল কানসাই ইন’র এমডি মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের হোটেল বয়দের স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, আমরা চেষ্টা করব পর্যটকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে।

কুয়াকাটা ইলিশ পার্কের এমডি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, মহামারী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি মাথায় রেখেই পর্যটকদের জন্য ইলিশ পার্ক খোলা রাখার ব্যবস্থা নিয়েছি।

কুয়াকাটা পর্যটনের ইয়ুথ ইন কমপ্লেক্সের ম্যানেজার সুবাস নন্দী বলেন, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন থেকে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কুয়াকাটার পর্যটন মোটেল পর্যটকদের জন্য খুলে দিতে চিঠি হাতে পেয়েছি। আমরা আগামী ১ জুলাই থেকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রাখার প্রস্তুতি নিয়েছি পর্যটন মোটেল ও ইয়ুথ ইন কমপ্লেক্স।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরিফ বলেন, আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক ১ জুলাই সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার নির্দেশনা দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকারের দেয়া শেষ প্রজ্ঞাপনের শর্তাবলী মেনে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরা তাদের হোটেল খোলা রাখতে পারতেন।

কিন্তু তারা স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কর্মচারীদের ট্রেনিং করিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে খুলতে যাচ্ছেন, এ জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। পহেলা জুলাই থেকে সরকারের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র চালু থাকবে।