জিহাদিদের মুখে কেন এই প্রশান্তির হাসি?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

তথাকথিত ইসলামিক স্টেট যে পাঁচজন জিহাদির ছবি প্রকাশ করেছে তাদের দেখে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বিস্মিত হয়েছেন।

 

এই জিহাদিরা ঢাকার গুলশানে শুক্রবার রাতে একটি রেস্তোরাঁয় অতিথিদের জিম্মি করে ২০ জনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে হত্যা করেছে।

 

বাংলাদেশে এধরনের একটি হত্যাকাণ্ডের ঠিক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কোন একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে জিহাদিদের ছবি এরকম ঘোষণা দিয়ে প্রকাশের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।

 

ফলে এটা পরিষ্কার জিহাদিদের ছবি প্রকাশের মধ্য দিয়ে আইএস যে বার্তাটি দিতে চেয়েছে সেটি অত্যন্ত জোরালো এবং স্পষ্ট।

 

স্পষ্ট ঘোষণা

বিশ্লেষকরা বলছেন, জিহাদিদের কাছে এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিলো অত্যন্ত পরিষ্কার। কিভাবে সেটা করতে হবে সেবিষয়েও তাদের ধারণা ছিলো স্পষ্ট।

 

সেনাবাহিনীর সাবেক একজন কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাখাওয়াৎ হোসেন বলেছেন, “ছবিগুলোতে হামলাকারীদের অভিব্যক্তিতে এটা স্পষ্ট তারা পরিষ্কার করেই জানতো তারা কোথায় যাচ্ছে, কি করতে যাচ্ছে এবং তাদের পরিণতি কি হতে পারে। তারা জানতে যে এই অভিযান শেষে তারা সেখান থেকে পালিয়েও যাবে না।”

 

আইএসের পোশাক

ছবিগুলোতে দেখা যায় সবাই কালো পাঞ্জাবি পরে আছে। দেখতে একই রকমের পাঞ্জাবি। এসব পোশাক হয় একই জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে অথবা একই দর্জির কাছে বানানো হয়েছে।

কালো এই জামাটি আইএসের পোশাক।

 

সাখাওয়াৎ হোসেন বলেছেন, “পশ্চিমা নাগরিকদের শিরোশ্ছেদ করে হত্যার যেসব ভিডিও আইএস ইন্টারনেটে ছেড়েছে সেগুলোতে জিহাদিদেরকে এরকম কালো রঙের পোশাক পরে থাকতে দেখা যায়। এটা আইএসের জল্লাদ বা একজিকিউশনারের ইউনিফর্ম।”

 

এই কালো রঙের আরেকটি অর্থ হচ্ছে আত্মত্যাগ। অর্থাৎ তারা যে তাদের জীবন উৎসর্গ করতে যাচ্ছে সেটা তাদের পোশাকের মধ্যেও ঘোষণা করা হচ্ছে।

 

“খোরাসান ব্রিগেডের সদস্যরাও প্রতীক হিসেবে এধরনের পোশাক পরিধান করতো,” বলেন মি. হোসেন।

 

পেছনে কালো পতাকা

দেখা যাচ্ছে, অস্ত্র হাতে এই তরুণরা তাদের পেছনে আইএসের পতাকা রেখে দাঁড়িয়ে আছে।

কালো পতাকায় শাদা রঙে লেখা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু।’

 

তাদের মাথায় আরবদের মতো করে ফেটি বা কেফেয়া বাঁধা।

 

মি. হোসেন বলেন, “আরব যোদ্ধারা এই কেফায়া পরে থাকে। রণক্ষেত্রে যারা যুদ্ধ করে তাদের কাছে এটি একটি প্রতীকের মতো।”

 

পেশাদারি কায়দায়

প্রত্যেকটি ছবিতে দেখা যায়, পাঁচজন জিহাদি প্রায় একই কায়দায় অস্ত্র ধরে হাস্যমুখে তাকিয়ে আছে ক্যামেরার দিকে।

 

দেখে মনে হয় তাদের সবার হাতে একটাই অস্ত্র। অত্যন্ত পেশাদারদের ভঙ্গিতে তারা সেই

অস্ত্রটি ধরে রেখেছে।

 

নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাখাওয়াৎ হোসেন বলেছেন, তাদের হাতে যে অস্ত্রটি দেখা যাচ্ছে সেটি একে মডেলের।

 

মধ্যপ্রাচ্যে জিহাদিদের লড়াই-এ এখন এই অস্ত্রটির প্রচুর ব্যবহার হচ্ছে।

160702170305_bangladesh_is_attackers_640x360_site_nocredit

তিনি বলেন, “বর্তমানে সন্ত্রাসীদের কাছে সবচে পছন্দের অস্ত্র হচ্ছে এই একে ফোরটি সেভেন। তাদের হাতে যে অস্ত্রটি দেখা যাচ্ছে সেটি একে ফোরটি সেভেন না হলেও, একে সিরিজের।”

দেখা যাচ্ছে, একজন বাদে বাকি প্রত্যেকেরই হাতের আঙ্গুল বন্দুকের ট্রিগার থেকে দূরে।

 

“এই পজিশনের অর্থ হচ্ছে তারা পুরোপুরি প্রস্তুত। হাত ট্রিগারের বাইরে। রাইফেলটা এমনভাবে রাখা যে এটিকে শুধু একটু উপরের দিকে তুলে গুলি করতে হবে ব্যাস এতোটুকুই,” বলেন মি. হোসেন।

 

প্রশিক্ষণ

বলা হচ্ছে, এই তরুণদের কেউ কেউ চার পাঁচ মাস ধরে নিখোঁজ ছিলো। ধারণা করা হচ্ছে, এই সময়ে তাদেরকে বড়ো ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

 

সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, “শুধু মগজ ধোলাই করা নয়, এরকম একটি অভিযানের জন্যে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পুরোপুরি প্রস্তুতও করা হয়েছে।”

 

সূত্র: বিবিসি বাংলা