সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ চলমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন। রাজনীতির কথা বলতে গিয়ে তিনি এক বাঘ শিকারীর গল্প বলেছেন।
ঢাকায় একটি আলোচনা সভায় দেওয়া মাসুদের সেই বক্তব্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ শুরুতেই প্রশ্ন তুলে বলেন, ৯৫ ভাগ মুসলিমের বাংলাদেশে কেন আমাদের লড়াই করতে হবে- জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম নিয়ে? ৯৫ ভাগ মুসলিমের দেশে কেন লড়াই করতে হবে একটি জলসা কিংবা মাহফিলের জন্য? ৯৫ ভাগ মুসলমানের দেশে আজকে কেন হুমকি দেওয়া হবে- গণহত্যাকারী আবার রাজপথে নামবে?
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই- গণহত্যাকারীদের বাংলাদেশে কেন, পৃথিবীর আর কোনো জায়গায় এক ইঞ্চি জায়গা দেওয়া হবে না। যারা আজকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, আসেন সবাই আমরা আজ দখল করে ফেলি জিরো পয়েন্ট, আসেন আমরা দখল করে ফেলি উমুক জায়গা- আপনাদের আর দখল করতে হবে না।
জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি আরও বলেন, আপনারা মানুষকে গত ১৭ বছর অন্যায়ভাবে দখল করে রেখেছিলেন। আর গোটা বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল আমাদের তরুণ ছাত্র-যুবকরা তাদের রক্ত-জীবন বাজী রেখে দখল করে নিয়েছে। এই জায়গা ইসলামের বিজয় ছাড়া এক ইঞ্চি জায়গা আমরা ছেড়ে দেব না। সুতরাং ওই সব দখল-বেদখলের হিসাব এখন শেষ। কারণ এই ছাত্র-জনতা যে স্লোগান তুলেছিল- উই ওয়ান্ট জাস্টিস, এটার শেষ প্রান্তে গিয়ে আমরা পৌঁছাব। সেটার শেষ গল্প বলেই আজ শেষ করছি।
ড. মাসুদ বলেন, শহিদ সেনুয়ারের সেই গল্পটি ক্লাস এইটের পড়াকালে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের কাছ থেকে শোনা। সুন্দরবনে বেড়াতে গিয়েছেন উনি। বাঘ শিকারীর সঙ্গে গল্প করছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার বাবা বেঁচে আছেন? -না, উনি বেঁচে নেই। কী হয়েছে তার? বাঘ শিকার করতে করতে গিয়ে বাঘের মুখে পড়ে মারা গেছেন। তাই নাকি! আচ্ছা আপনার দাদা? উনি তো তারও আগে মারা গেছেন। উনি কিভাবে মারা গেলেন? উনিও বাঘ শিকার করতে করতে বাঘের মুখে পড়ে মারা গেছেন। আপনার দাদার বাবা, উনি কি করতেন? ওই একই পেশায় ছিলেন। উনিও বাঘ শিকার করতে করতে বাঘের মুখে পড়ে মারা গেছেন।
তখন তিনি বললেন, আপনারা জেনেশুনে- আপনার বাবা, তার বাবা, তার বাবা, তার বাবা সবাই বাঘের মুখে পড়ে মারা গেলেন; আর আপনি এতটা দুঃসাহসী যে, সেই বাঘের মুখে পড়ে এখনও বাঘ শিকার করতে করতে জীবন পরিচালনা করছেন।
এবার সেই শিকারী ভাবল, এই লোকটিকে একটু শায়েস্তা করা দরকার। উনি তো ভীরু কাপুরুষ; অথর্ব। আমি না হয় অশিক্ষত; উনি তো ঢাকা থেকে আসছেন। এটাকে একটু শায়েস্তা করা দরকার। শায়েস্তা করার মানসিকতা নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন- আপনার বাবা কি বেঁচে আছেন? বলছেন না, (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)। আল্লাহ বেহেস্ত নসিব করুক। কি হয়েছিল তার? অসুস্থ ছিলেন, চিকিৎসা চলছিল- বিছানায় শুয়ে পড়ে মারা গেছেন। আপনার দাদা? ওই একই অবস্থা চিসিৎসা ও রোগে শোকে মারা গেছেন। তার বাবা? ওই একই অবস্থা ডাক্তার দেখেছেন, অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। ওই বিছানাখানা কি এখনও আছে? হ্যা আছে, আমিও সেই বিছানাতেই ঘুমাই।
যেহেতু আপনার বাবা, তার বাবা, তারো বাবা একই বিছানায় শুয়ে রোগে-শোকে মারা গেছেন, সেহেতু আপনিও কেন সেই একই বিছানায় ঘুমান, আপনিও তো সেই শুয়ে পড়ে রোগে-শোকে মারা যাবেন? এতে আপনার ভয় করে না? একথা শুনে তো ভদ্রলোক তাজ্জব!
শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, সেনুয়ারের কথা সেই জন্য বলছি- আমি শফিকুল ইসলাম মাসুদ ছোট মানুষ- আমরা বিছানায় শুয়ে রোগে-শোকে মারা যাব না। আমরা বাঘের মুখে পড়ে মারা যাব- এই বাংলাদেশকে স্বাধীন রাখব এবং এই ফিলিস্তিনকে বিজয়ী করব।
সূত্র: যুগান্তর