জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নগদ টাকার প্রবাহ বেড়েছে

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

জাতীয় নির্বাচন ঘিরে নগদ টাকার প্রবাহ বেড়েছে। পাশাপাশি টাকা উত্তোলনের হিড়িক পড়েছে ব্যাংকগুলোয়। এতে বড় ধরনের চাপ পড়েছে ব্যাংকে সংরক্ষিত অর্থের ওপর।

যে কারণে একই সময়ে কমেছে ব্যাংকের সঞ্চিত অর্থের পরিমাণও। অর্থনৈতিক সূচক নিয়ে তৈরি করা বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে ওঠে আসে এসব তথ্য। প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

টাকার প্রবাহ বৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কার প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট) মো. জাফর উদ্দীন যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের কারণে টাকার প্রবাহ বাড়তে পারে। তবে এতে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা থাকবে না। কারণ টাকার প্রবাহের পাশাপাশি খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য পণ্য পর্যাপ্ত সরবরাহ হচ্ছে। ফলে মানুষের হাতে টাকা আসার পর সেটি দিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য নির্ধারিত মূল্যেই ক্রয় করতে পারছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে টাকার প্রবাহ বেড়েছে ৮ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে দশমিক ৮০ শতাংশ। এ সময়ে বাজারে টাকা সরবরাহের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ লাখ ১৮ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নির্বাচনের ব্যয় মেটাতে প্রার্থীসহ নানাভাবে অর্থ ব্যয়ের প্রভাব পড়েছে ব্যাংকগুলোর কাছে গচ্ছিত অর্থের ওপর। ১৫ নভেম্বরের হিসাবে সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ ছিল ব্যাংকগুলোর কাছে ২২ লাখ ৬ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। কিন্তু ৩১ অক্টোবর এই অর্থের পরিমাণ ছিল ২২ লাখ ৭ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। গত জুনের তুলনায় সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ কমেছে ২ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় এই অর্থের পরিমাণ কমেছে ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

সূত্র জানায়, রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানাভাবে টাকা ব্যয় করছেন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৭৮, বিএনপির ৫৫৫ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের পক্ষে এরই মধ্যে টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এসব প্রার্থী বিভিন্ন কৌশলে তা ব্যয় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ভোটারদের কাছে টানতে টাকা, উপহার, প্রলোভন, অনুরোধ ও ভয় থেকে শুরু করে নানা রকম চেষ্টা চলছে এলাকাভেদে। এসব প্রার্থী এরই মধ্যে প্রচার-প্রচারণা, ভোটার সমাগম করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমার মতো কাজে তারা অনেক টাকা ব্যয় করছেন।

গ্রামগঞ্জের চায়ের স্টলে, তরুণদের আড্ডায়, ভোটারদের বিয়ে-শাদি, অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে কৌশলে প্রার্থীরা এ অর্থ ব্যয় করছেন। এছাড়া প্রার্থীদের সংবর্ধনা, প্রার্থীদের শুভেচ্ছা জানানোর নামে আলোচনা সভা করা হচ্ছে। ওই আলোচনা সভা ব্যয়ের একটি অংশ মেটাচ্ছেন প্রার্থীরাই। পাশাপাশি অনেক দিনমজুর ও স্বল্প আয়ের মানুষ এই সুযোগে আয়-রোজগারে পথ বেছে নিয়েছেন নির্বাচনকে। ঢাকা থেকে এরই মধ্যে অনেকে চলে গেছেন গ্রামে। বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে নিয়মতি কাজ করছেন। বিনিময়ে দিন শেষে হাজিরাও পাচ্ছেন। তবে এ বছর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেশি অর্থ ব্যয় করবেন। কারণ তারা জয়ী হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নামবেন মাঠে।

টাকার প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম একটি উদাহরণ সম্প্রতি ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক। টাকা উত্তোলনের পরিমাণ এতই বেশি যে, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার বা কলমানি থেকে ধার করে চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। সূত্রমতে, মাত্র ৫ দিনে ৫ হাজার ৩৩০ কোটি টাকার বেশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে ব্যাংকগুলো।

এতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে চাপ তৈরি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। ব্যাংকগুলো টাকার চাহিদা আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ধার করে মেটাতে পারছে না। ফলে দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তাদের হাতে থাকা বন্ড জিম্মায় রেখে মাত্র ৫ দিনে ৫ হাজার ৩৩০ কোটি ৭১ লাখ টাকা ধার করেছে। এর মধ্যে ৬ শতাংশ সুদে ৪ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা এবং ৯ শতাংশ সুদে ৬৫৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা ধার করেছে। ব্যাংকাররা মনে করেন, এই চাহিদার বড় একটি কারণ নির্বাচন।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আসনে একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ খরচ করতে পারবেন ২৫ লাখ টাকা। তবে একজন প্রার্থী একজন ভোটারের পেছনে সর্বোচ্চ ১০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবে। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৩০০টি নির্বাচনী আসনে প্রতিটিতে সম্ভাব্য তিনজন করে প্রার্থী থাকেন। ওই হিসাবে প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৯০০ জন। প্রতিজন প্রার্থী বৈধভাবে ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করলে আর্থিক পরিমাণ দাঁড়াবে ২২৫ কোটি টাকা।

কিন্তু একজন প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় কখনোই ২৫ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। নিম্নে প্রতিটি আসনে ১ কোটি থেকে ৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এতে প্রার্থীদের ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯০০ কোটি থেকে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পুরোটাই ভোটারদের কাছে আসবে। ফলে সারা দেশের জেলাগুলোয় এখন থেকেই শুরু হয়েছে অর্থের ব্যবহার। বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে বিভিন্ন এলাকায় টাকা লেনদেন আরও বেড়ে যাবে। এ নির্বাচনে ভোটাররা অংশগ্রহণ করবে। ফলে ভোট কেনাবেচা হবে এবং টাকা-পয়সার একটা ভূমিকা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।