গাজীপুরের সাফারি পার্ক, ঢাকার জাতীয় চিড়িয়াখানা ও রংপুর চিড়িয়াখানায় সম্প্রতি একের পর এক প্রাণীর মৃত্যুর খবর সবাইকে হতাশ করেছে। সাফারি পার্ক ও চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এর মধ্যে মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় নতুন দুই অতিথির খবর কিছুটা স্বস্তির বটে।
চিড়িয়াখানার বাঘ দম্পতি শিউলি-কদমের সংসারে দুটি মেয়ে শাবকের জন্ম হয়েছে।
তিন মাস আগে তারা জন্ম নিলেও গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কর্তৃপক্ষ এই খবর প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানায় বাঘের সংখ্যা ১০-এ দাঁড়াল।
জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক আব্দুল লতিফ বলেন, নতুন অতিথিদের এখনো নাম রাখা হয়নি। ছয় মাস পার হলে তাদের নাম রেখে জন্ম নিবন্ধন করা হবে। তারা সুস্থ-সবল আছে। প্রথম মাস দেড়েক খাঁচার ভেতরের ঘর থেকে তারা বের হয়নি। এখন বের হওয়া শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ‘এখন মাংসের ছোট টুকরা দিচ্ছি। সেগুলো অল্প করে চাটছে তারা। সাড়ে পাঁচ মাস বয়স পর্যন্ত তারা মায়ের দুধ খাবে। ছয় মাস বয়স হলে তারা পুরোদমে মাংস খাওয়া শুরু করবে। ’
শাবক দুটি এখন মায়ের সঙ্গে থাকে। তাদের জন্মের ১৫ দিন আগে বাবাকে (কদম) আলাদা করা হয়েছে। শাবক দুটির বয়স পাঁচ মাস হওয়া পর্যন্ত কদম আলাদা থাকবে।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, এখন দিনে একবার শিউলিকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হচ্ছে। শাবক দুটি দুধ খাচ্ছে কি না, ঠিকমতো নড়াচড়া করছে কি না, তা দেখতে এবং মা বাচ্চাদের প্রতি কোনো ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করছে কি না, ছাদে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে তা নজর রাখা হচ্ছে। দিনে দুইবার করে মশা-মাছির ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। তাদের বাসস্থান মশারি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রতি ইঙ্গিত করে পরিচালক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘প্রাণীদের জন্ম-মৃত্যুর সংবাদ আমাদের কোনো না কোনোভাবে কখনো আনন্দিত, উদ্বেলিত করে; আবার কখনো উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ’ নতুন অতিথিদের দর্শনার্থীরা কখন দেখতে পারবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের বয়স যখন পাঁচ মাস পার হবে তখন থেকে দর্শনার্থীরা দেখতে পারবে। ’
গত বছরের ২৬ মে জাতীয় চিড়িয়াখানায় বেঙ্গল টাইগার দম্পতি টগর আর বেলির ঘরে জন্ম নেয় ছেলে শাবক দুর্জয় আর মেয়ে শাবক অবন্তিকা। গত ১৬ আগস্ট দুর্জয়-অবন্তিকার নাম রেখে জন্ম নিবন্ধন করার অনুষ্ঠানটি বেশ ঘটা করেই পালিত হয়। কিন্তু জন্মের প্রায় ছয় মাস পর দুর্জয়-অবন্তিকা মারা যায়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ‘সেটসি ফ্লাই’ নামে এক ধরনের মাছির কামড়ে ট্রাইপেনোসোমা রোগে এদের মৃত্যু হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গণমাধ্যমের কাছে ওই মৃত্যুর বিষয়টি এক সপ্তাহ গোপন রাখা হয়েছিল।
গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গত জানুয়ারি মাসে ১১টি জেব্রা, একটি বাঘ ও একটি সিংহের মৃত্যু হয়। প্রাণীর মৃত্যু নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন এবং তদন্তের স্বার্থে পার্কের শীর্ষ পর্যায়ের তিন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া সম্প্রতি জাতীয় চিড়িয়াখানায় দুটি জেব্রার বাচ্চা, একটি জিরাফ, একটি আফ্রিকান সিংহ মারা যায়। অন্যদিকে রংপুর চিড়িয়াখানায় একটি সিংহী মারা গেছে।
বিশ্বে বর্তমানে মাত্র ১৩টি দেশে বাঘ টিকে আছে। এর মধ্যে ছয়টি দেশ বাঘকে জাতীয় পশুর মর্যাদা দিয়েছে। বাংলাদেশ তার অন্যতম। বিশ্বের ৭০ শতাংশ বাঘের বাস ভারতবর্ষে। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ জলাভূমিকে বিবেচনা করা হয় বাঘ বিচরণের অভয়ারণ্য হিসেবে।
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ
