জাকাতের নিসাব ও হিসাব

জাকাত ইসলামী সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অনন্য প্রতিষ্ঠান। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়টি হচ্ছে জাকাত। ইমানের পর নামাজ এবং তারপরই জাকাতের স্থান। কোরআন মাজিদের ৩২ জায়গায় জাকাতের কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে ২৮ জায়গায় নামাজ ও জাকাতের কথা একত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাকাত দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়ের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও রমজান মাসেই বিত্তবানরা দান-সদকা ও জাকাত প্রদানে উৎসাহী হন। কেননা রমজান মাসে যেকোনো ধরনের দান-সদকা করলে অন্য সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সাওয়াব পাওয়া যায়।

জাকাত স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক এমন মুসলিম নর-নারী আদায় করবে, যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে। তবে এর জন্য শর্ত হলো—এক. সম্পদের ওপর পূর্ণাঙ্গ মালিকানা থাকতে হবে। দুই. সম্পদ উৎপাদনক্ষম ও বর্ধনশীল হতে হবে। তিন. নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে। চার. সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকলেই কেবল জাকাত ফরজ হবে। পাঁচ. জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ঋণমুক্ত হওয়ার পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে। ছয়. কারো কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলেই কেবল সে সম্পদের ওপর জাকাত দিতে হয়।

জাকাতের নিসাব

ক. সোনা ৭.৫ তোলা=৯৫.৭৪৮ গ্রাম প্রায়। খ. রুপা ৫২.৫ তোলা=৬৭০.২৪ গ্রাম প্রায়। (আহসানুল ফতোয়া : ৪/৩৯৪, আল ফিকহুল ইসলামী : ২/৬৬৯)

দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যের নিসাব নির্ধারণে সোনা-রুপা হলো পরিমাপক। এ ক্ষেত্রে ফকির-মিসকিনদের জন্য যেটি বেশি লাভজনক হবে সেটিকে পরিমাপক হিসেবে গ্রহণ করাই শরিয়তের নির্দেশ। সুতরাং মুদ্রা ও পণ্যের বেলায় বর্তমানে রুপার নিসাবই পরিমাপক হিসেবে গণ্য হবে। তাই যার কাছে ৫২.৫ তোলা সমমূল্যের দেশি-বিদেশি মুদ্রা বা ব্যবসায়িক পণ্য মজুদ থাকবে, তার ওপর জাকাত ফরজ হবে। যে সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ, তার ৪০ ভাগের একভাগ (২.৫০%) জাকাত দেওয়া ফরজ। সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করে শতকরা আড়াই টাকা, হাজারে ২৫ টাকা বা লাখে আড়াই হাজার টাকা হারে নগদ অর্থ কিংবা ওই পরিমাণ টাকার কাপড়চোপড় অথবা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দিলেও জাকাত আদায় হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৭২; সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬২৩)

যদি একই ব্যক্তির কাছে শুধু স্বর্ণ থাকে, রুপা বা জমা টাকা না থাকে, তাহলে ৭.৫ তোলা=৯৫.৭৪৮ গ্রাম (প্রায়) স্বর্ণ না হওয়া পর্যন্ত জাকাত ফরজ হবে না। এই পরিমাণ হলে টোলাল স্বর্ণের ৪০ ভাগের একভাগ বা এর সমমূল্য জাকাত দেওয়া ফরজ।

যদি শুধু রুপা থাকে, স্বর্ণ বা জমা টাকা না থাকে, তাহলে ৫২.৫ তোলা=৬৭০.২৪ গ্রাম (প্রায়) রুপা না হওয়া পর্যন্ত জাকাত ফরজ হবে না। সাড়ে বায়ান্ন তোলা বা তার বেশি রুপা থাকলে জাকাত ফরজ হবে।

যদি একই ব্যক্তির কিছু স্বর্ণ, কিছু রুপা থাকে, আর কোনো জমা টাকা না থাকে, তখন স্বর্ণ-রুপা উভয়টাকে অর্থমূল্যে নিয়ে এলে যদি ৫২.৫ তোলা=৬৭০.২৪ গ্রাম (প্রায়) রুপার মূল্য সমপরিমাণ হয়ে যায়, তাহলে জাকাত ফরজ হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে পুরো টাকার ৪০ ভাগের একভাগ বা এর সমমূল্য জাকাত দেওয়া ফরজ।

যদি একই ব্যক্তির কিছু স্বর্ণ, কিছু রুপা থাকে এবং কিছু জমা টাকাও থাকে, তাহলেও সবগুলোকে অর্থমূল্যে নিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে অর্থমূল্যে নিয়ে এলে যদি ৫২.৫ তোলা=৬৭০.২৪ গ্রাম (প্রায়) রুপার মূল্য সমপরিমাণ হয়ে যায়, তাহলে জাকাত ফরজ হয়ে যাবে।

আর যদি কারো কাছে কোনো স্বর্ণ ও রুপা না থাকে; কেবল জমানো টাকা বিদ্যমান থাকে, সে ক্ষেত্রে তা যদি ৫২.৫ তোলা রুপার সমমূল্য হয়ে যায়, তাহলে তার ওপরও জাকাত ফরজ হয়ে যাবে।

লেখক : সিইও, সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনমিকস বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা