জরুরি হজ টিপস

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বয়স্ক হাজীদের সঙ্গে এজেন্সি যেন স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে দেন : অনেক মুরব্বি একা একা হজে চলে যান। পরে ওখানে গিয়ে অসহায় বোধ করেন। গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কেউ থাকে না। একা একা মসজিদে যাওয়া তার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে। তখন তিনি যাকে অনুরোধ করেন সঙ্গ দেয়ার জন্য, তিনি বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান।

এ জন্য বেশি বয়স্ক অসুস্থ হাজীদের একা যাওয়া উচিত নয়। অবশ্যই পরিবারের কোনো সদস্য, না হলে পরিচিত কারও সঙ্গে যাওয়া জরুরি।

হজে যাওয়ার পর অল্প পরিচিত কাউকে সব সময় সঙ্গ দেয়ার অনুরোধ করলে তাকেও সমস্যায় ফেলে দেয়া হয়। কেননা তিনি হয়তো একা আসেননি, সঙ্গে পরিবারের সদস্য আছেন। তখন অল্প পরিচিত একজন হাজীর দেখাশোনা করা তার ওপর বোঝার মতো মনে হয়।

হজ এজেন্সি যদিও আগে বলে যে, আমরা মুরব্বির দিকে খেয়াল রাখব, কিন্তু বাস্তবে সে রকম দেখা যায় না।

দরকার হলে মুরব্বি থেকে বাড়তি ফি নিয়ে একজন স্বেচ্ছাসেবক তার সঙ্গে রাখতে হবে।

দুপুরে ভাত না খাওয়াই ভালো মক্কায় সব সময় দৌড়ের ওপর থাকতে হয়, বিশ্রাম নেয়ার সময় কম। যাদের দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস, হজ সফরে তাদের খুবই কষ্ট হয়।

কেননা বাংলাদেশের হানাফি মাজহাবে আমরা ৪টার পরে আসরের সালাত আদায় করি। কিন্তু সৌদিতে তিনটার বেশ আগে মসজিদে চলে যেতে হয়। জোহরের নামাজ পড়ে এসে গোসল করে খেয়ে একেবারেই বিশ্রাম নেয়ার সময় হাতে থাকে না। তিনটার দিকে ওখানে জামাত হয়। আগে না গেলে মসজিদে ঢুকতে পারবেন না। তখন কড়া রোদে রাস্তায় নামাজ পড়তে হয়।

তাই যারা দুপুরে বিশ্রাম নিতে না পারলে অসুস্থ বোধ করেন, তারা আসর হোটেলে আদায় করে ফেলবেন। বিশেষ করে মহিলা হাজীদের বেশি কষ্ট করে প্রতি ওয়াক্তে মসজিদে যাওয়ার দরকার নেই। যারা প্রতি ওয়াক্তে মসজিদে যেতে চান, দুপুরে ভাত খাবেন না। রুটি খেলে ঘুম কম পাবে।

* প্লেনে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন : প্লেনে অজু করার ব্যবস্থা থাকে না। সঙ্গে পাক মাটি না থাকলে খুবই অসুবিধায় পড়তে হয়। আর একটা খুব জরুরি কথা মনে রাখবেন : প্লেনে ওঠা আর নামার সময় টয়লেটে যাওয়া মানা। প্লেন যখন গন্তব্যস্থলের কাছাকাছি আসে, তখন এয়ার হোস্টেস এসে আপনাকে বেল্ট বাঁধতে বলবে আর টয়লেটে যেতে চাইলেও যেতে দেবে না।

আমি জানি না কেন হজ এজেন্সি বা এয়ারলাইন্সের কর্মীরা হাজীদের আগেই এসব বলে দেন না। বয়স্ক অসুস্থ হাজীরা অনেক সময় প্লেনের ভেতরেই কাপড় নষ্ট করে ফেলেন। তাদের বিড়ম্বনা দেখলে খুবই লজ্জা হয়, কষ্ট লাগে। এ জন্য প্লেনে ওঠার আগে আর প্লেন থেকে নামার বেশ আগেই টয়লেটের কাজ সেরে ফেলবেন। সফরে পানি একটু হিসাব করে খাবেন।

* আরব আতিথেয়তা : ধরুন আপনি একটা প্রাসাদ বানালেন, যেখানে ৫০০ লোককে আপনি মেহমানদারি করতে পারবেন। সেখানে যদি আপনি ১০ হাজার লোককে দাওয়াত দেন এক মাসের জন্য, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের অনেক অসুবিধা হবে।

হজের সময় সৌদি কর্তৃপক্ষের নানা অব্যবস্থাপনা দেখে আমার বারবার এটাই মনে হয়। যে কজন হাজীকে তারা আতিথেয়তা দিতে পারবেন, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি হাজী থাকাতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েও লাভ হচ্ছে না। বিশেষ করে টয়লেটে যেতে না পেরে যখন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রকাশ্যে কাপড় নষ্ট করে ফেলেন, সেগুলো দেখে ভীষণ কষ্ট হয়।

আরব আতিথেয়তার কথা গল্প-উপন্যাসে পড়েছি কিন্তু সৌদি সরকারের কোনো প্রতিনিধিকে আমি দেখিনি হাজীদের সুবিধা-অসুবিধা এসে তদারকি করতে। তারা বিনা পয়সায় প্রচুর খাবার আর পানীয় বিতরণ করেন। এটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রাকৃতিক প্রয়োজনে সাড়া দেয়ার সময় হাজীদের যে চরম ভোগান্তি হয়, মানুষকে তারা যে চরম লজ্জার মধ্যে ফেলে দেন, এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

বছরের পর বছর একই ব্যাপার চলে আসছে, এ নিয়ে তারা কেন কিছু করছেন না ভেবে পাই না!

মহিলা টয়লেটের সামনে পুরুষরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যান। তখন লজ্জায় মহিলারা সেখানে যেতে পারেন না। এগুলো দেখার কেউ থাকে না।

সৌদি হজ কমিটির কাছে হাজীদের এসব সমস্যা তুলে ধরার দায়িত্ব কার? তারা কি দয়া করে তাদের এই দায়িত্ব পালন করবেন? টয়লেট বিড়ম্বনার কথা মনে পড়লে হজের সুন্দর স্মৃতিতে বিষণ্ণতার ছায়া পড়ে। আশা করি আগামীতে হাজীদের এ সমস্যা আর হবে না।

গায়ে শক্তি থাকতে থাকতে হজে চলে যান। বুড়ো বয়সে হজে যাব, এটা চিন্তাও করবেন না। হজের সময় প্রচণ্ড শারীরিক ধকল যায়, যা বয়স্কদের পক্ষে সহ্য করা কঠিন।

আল্লাহ সবার হজ সফর নিরাপদ করুন, আমিন।

লেখক : ফ্রিল্যান্স প্রতিবেদক