জমেনি কানসাট আম বাজার, ক্ষিরসাপাতের বাজার চড়া

কামাল হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ


বছরের মে হতে আগস্ট মাস আম কেনাবেচার ভরা মৌসুম হলেও এবার চিত্রটা সম্পূর্ন উল্টো। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষ হতে চললেও এখনো জমে উঠেনি আমের রাজধানী খ্যাত উত্তর বঙ্গের বৃহত্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কানসাট আম বাজার।

তবে আমের বাজার তেমন জমে না উঠলেও দাম অন্যন্য বারের চেয়ে বেশী বলছেন ক্রেতারা। স্থানীয় আম ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারনে এবার প্রথম দিকে আমের বাজার কিছুটা খারাপ হলেও ধীরে ধীরে চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছর আম পাড়ার সময়সীমা বেঁধে না দেওয়া হলেও অপরিপক্ব আম পাড়া ও বাজারজাতকরণে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

করোনা পরিস্থিতির কারণে আম বেচাকেনায় উদ্বুদ্ধ করতে এবং অন্য জেলার অপরিপক্ব আম চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বলে বদনাম হওয়ার কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথমবার মঙ্গলবার (২ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের মাধ্যমে শুরু হয়েছে আম পাড়া, বাজারজাতকরণ ও পরিবহন।

কানসাট আমবাজার চত্বরে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জেলার আম পাড়া, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের উদ্বোধন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল।

কিন্তু উদ্বোধনের পর ১৪দিন পেরিয়ে গেলেও দেশের বৃহত্তম কানসাট আমবাজারটি আম শূন্য লক্ষ্য করা গেছে। কৃষকরা জানায়, বাজার জমজমাট না হওয়ায় পরেও এবার গোপালভোগের ফলন কম হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বাজারে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় গুটি আমের পাইকারি দর ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা।

অপরদিকে ক্ষিরসাপাত (হিমসাগরের) বাজার দর অন্যবারের চেয়ে অনেক চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারের বিভিন্ন আড়ত ঘুরে দেখা যায়, এদিন ক্ষিরসাপাত ৩৫০০ থেকে ৪০০০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সীমিত আকারে গুটি জাতের গোপালভোগসহ কয়েকটি জাতের আম পরিপক্ব হওয়ায় পাড়া শুরু হয়েছে।

তবে কৃষি বিভাগ জানায়, জুনের শেষদিকে ক্ষিরসাপাত, ল্যাংড়াসহ অন্যান্য আম ওঠলে কানসাট বাজারে কেনাবেচা জমে ওঠবে। এদিকে করোনার কারণে কানসাটের অধিকাংশ আড়ত এখনও প্রস্তুত হয়নি আম কেনাবেচার জন্য। অনেক আড়তে আবার মেরামতের কাজ করতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে শিবগঞ্জের আমচাষি জাহাঙ্গির আলম বিশ্বাস জানান, তিনি কানসাট আম বাজরের পরিবেশ দেখার জন্য এসেছেন। জেলার বাইরের ক্রেতা না থাকায় এবং আড়ৎগুলো এখনও সচল না হওয়ায় তিনি আম পাড়ার সিদ্ধান্ত এখনও নেননি।

আর ঢাকার বাদামতলি এলাকার এক আম ক্রেতা জানান, এবছর করোনার কারণে তারা ২ জন এসেছেন আম কিনতে। কিন্তু গত বছর তারা একসঙ্গে ১০ জন এসেছিলেন আম কেনার জন্য।

কানসাট হাট ও বাজারের লিজ গ্রহীতাদের অন্যতম অংশীদার ও কানসাট হাট ও আম বাজার কমিটির সহ সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বাবু ক্ষোভের সঙ্গে জানান, প্রায় আড়াই কোটি টাকায় কেনা হাটটিতে এ বছর আমের বাজার ঠিকমত না শুরু হলে এবং বর্তমান অবস্থা বিরাজ করলে পুঁজি হারিয়ে তাদের পথে বসতে হবে।

এদিকে শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার এস এম আমিনুজ্জান রতন আম বাজার জমে না ওঠার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অতিবৃষ্টির কারণে এ বছর দেরিতে আম পরিপক্ব হয়েছে। আমের উৎপাদন কম হওয়ার পাশাপাশি করোনার প্রতিকূল পরিবেশের কারণে সাময়িক এ সমস্যা হয়েছে। তবে আগামী সপ্তাহে এ সমস্যা কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জেলার অন্যান্য বাজার সদর উপজেলার তোহাবাজার, গোমস্তাপুরের রহনপুর এবং ভোলাহাটের আম বাজারেও একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। জানা যায়, এ বছর আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টন।

স/অ