সোমবার , ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

কাউন্সিলরের একগুয়েমি: জমি বিক্রি হচ্ছে না চিকিৎসাও করাতে পারছেন না অসহায় ইব্রাহীম

Paris
সেপ্টেম্বর ২, ২০১৯ ৯:২৩ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: জটিল বোন টিউমার, রক্তনালীর টিউমারসহ নানা রোগে ভুগছেন রাজশাহী নগরীর রামচন্দ্রপুর এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহীম হোসেন হিরা। নিজেকে সুস্থ করতে ভারতে গিয়ে ছয় মাস পর পর চিকিৎসা করাতে হয় তাঁকে। এতে প্রচুর টাকাও ব্যয় হয়। এই টাকা ব্যয় করতে করতে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তিনি। এখন একমাত্র সম্বল স্ত্রীর মালিকানাধীন প্রায় দুই কাঠা পরিমাণ এক খন্ড জমি। সেটিও বিক্রি করতে চান তিনি। কিন্তু স্থানীয় কাউন্সিলর আরমান আলীর একগুয়েমির কারণে ওই জমি বিক্রি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন ইব্রাহীম হোসেন। ফলে নিজের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না ওই ব্যক্তি।

ইব্রাহীম হোসেনের অভিযোগ, জমির বড় একটি অংশ দখল করে প্ল্যান ছাড়াই পায়ে হাঁটার রাস্তা তৈরী করে দিয়েছেন কাউন্সিলর। যায়গা দখল করে রাস্তা নির্মাণ করা হলেও কোনো ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি। আবার মাত্র দুই কাঠা পরিমাণ জমির অধিকাংশ দখল করে রাস্তা করায় ইব্রাহীম হোসেনের জমিটি এখন প্রায় অবিক্রিত হয়ে পড়েছে। কেউ আর সামান্য পরিমাণ ওই জমি কিনতে চাচ্ছেন না। উপায়ন্তর না পেয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ বিভিন্ন দপ্তরে জমিটির সুরাহা চেয়ে একটি লিখিত আবেদনও করেছেন ইব্রাহিম হোসেন। কিন্তু এখনো মেলেনি কাঙ্খিত কোনো সেবা। ফলে নিজের চিকিৎসাও করাতে পারছেন না ওই ব্যক্তি। এই অবস্থায় শেস ভরসা হিসেবে সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকে নিজের পেজ থেকে আকুল আবেদন জানিয়ে একটি পোস্টও করেছেন তিনি।

ওই পোস্টে তাঁর স্ত্রীর জায়গা দখল করে বাঁকা করে নির্মাণ করা পায়ে হাঁটা রাস্তার ছবিও তুলে ধরেছেন ইব্রাহীম হোসেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সদ্য নগরীর রামচন্দ্রপুর বাসাররোড এলাকায় সদ্য নির্মাণ করা পায়ে হাঁটার ওই রাস্তাটি ইচ্ছেকৃতভাবেই ইব্রাহীম হোসেনের স্ত্রী তোহরুন নেসার যায়গা দখল করে সেটি নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ রাস্তাটি করতে হলেও স্থানীয় প্রভাবশালী তাহা মিঞার যায়গার ওপর দিয়ে যেত। কিন্তু তাহা মিঞার প্রভাবের কাছে পরাজিত হয়ে অসহায় স্থানীয় কাউন্সিলর আরমান আলী তোহরুন নেসার যায়গা দখল করে বাঁকা করে রাস্তাটি নির্মাণ করেন। এটি করতে গিয়ে প্রায় এক দশমিক ২৫ কাঠা যায়গা দখল করা হয়েছে তোহরুন নেসার। আর বাকি যে অংশটুকু রয়েছে, সেটিও অবিক্রিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় হযরত আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘যে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে, তার পাশ দিয়েই রয়েছে প্রায় ১৭ ফিট প্রস্থের কার্পেটিং করা পাকা রাস্তা। কিন্তু ওই রাস্তা থাকা সত্তেও কাউন্সিলর একগুয়েমি করে প্রকল্পের নামে টাকা আত্মসাত করতেই অসহায় ইব্রাহীম হোসেনের হিরার স্ত্রীর যায়গা দখল করে রাস্তাটি নির্মাণ করেছেন। আবার রাস্তাটি যদি নির্মাণ করতেই হয়, তাহলে তাহা মিঞার জমির ওপর দিয়ে যেত। কিন্তু তাহা মিঞাদের প্রভাবের কারণে সেটিও না করে কাউন্সিলর ইচ্ছেমতো অসহায় একটি পরিবারের যায়গা দখল রাস্তাটি নির্মাণ করেছেন। এটি নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝেও রয়েছে ক্ষোভ।’

এদিকে ইব্রাহীম হোসেন জানান, ৬ মাস পর পর ভারতে গিয়ে চিকিৎসার জন্য ধার-দেনায় ও এনজিও ঋণে তিনি জর্জরিত। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েও তিনি শোধ দিতে না পেরে এখন খেলাপীর খাতায়। এই অবস্থায় স্ত্রীর ওই জমিটুকু নিজের চিকিৎসা করানো, ঋণ পিরিশোধ করা, সংসার চালানো এবং দুই সন্তানের পড়া-লিখার খরচ যোগানোর হাতিয়ার হিসেবে রয়েছে। জমিটি বিক্রি করারও উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। কিন্তু রামচন্দ্রপুর মৌজা, জেএল-১৪, দাঁগ নং-১২৭৫এর ওই জমিটির অনেকটা অংশ দখল করে পায়ে হাঁটার রাস্তা নির্মাণ করায় সেটি আর বিক্রি করতে পারছেন না তিনি।

এনিয়ে বার বার নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান আলীর কাছে ধর্ণা দিয়েছেন ইব্রাহীম হোসেন ও তাঁর স্ত্রী তোহরুন নেসা। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে রাসিকের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে দেখা করে তোহরুন নেসা গত ২৮ আগস্ট তাঁর জমিটি ফিরে পেতে লিখিত আবেদন করেছেন। মেয়রও আশ্বাস দিয়েছেন বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে। কিন্তু অদ্যবধি সেই আশ্বাসও বাস্তবায়ন হয়নি। তবে এখনো মেয়র লিটনের দিকেই তাকিয়ে আছেন ইব্রাহীম হোসেন ও তাঁর পরিবার।

ইব্রাহীমের স্ত্রী তোহরুন নেসা বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন হয়ে আছে যে, এখন মেয়র সাহেবই আমাদের পরিবারটিকে বাঁচাতে পারবেন। না হলে স্বামীকে যেমন হারাতে হবে, তেমনি দুই সন্তান নিয়ে আমাকে পথে নামতে হবে। এর বাইরে কোনো উপায় নাই আমার। শেষ সম্বল একমাত্র জমিটি কাউন্সিলর জোর করে দখল করে নেওয়ায় যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছি আমি।’জানতে চাইলে কাউন্সিলর আরমান আলী বলেন, প্রয়োজনের জন্যই ওই রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যক্তি স্বার্থ দেখার সুযোগ নাই।’

এদিকে জানতে চাইলে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারটিকে সব ধরনের সহায়তা প্রয়োজনে করা হবে।’

স/আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর