সপাহারে জবাই বিল ও পুর্ণভবা নদীতে অতিথি পাখি শিকারীর তৎপরতা বৃদ্ধি

সাপাহার প্রতিনিধি:

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবাই বিল ও সীমান্ত বর্তী পুর্ণভবা নদীতে প্রতিদিন খাবারের সন্ধানে আসা ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি প্রতিনিয়ত শিকারীদের হাতে ধরা পড়ছে। অবাধে পাখি শিকার করায় একদিকে যেমন বিলের সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে অন্য দিকে হুমকির সম্মূখীন হচ্ছে জবাই বিলের জীব-বৈচিত্র।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে একদল শিকারী প্রতিদিন বিল ও নদী থেকে পাখি শিকার করে বিভিন্ন গ্রাম বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রয় করছে। পাখি শিকার যে “আইনত দন্ডনীয় অপরাধ” তা জানা সত্বেও পাখির মাংসের স্বাদ ও টাকার লোভে এক শ্রেনীর মানুষ পাখি গুলো শিকার করছে।

বুধবার জবাইবিল জীব বৈচিত্র সংরক্ষন কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান সবুজ জানান, বর্ষার শেষ ভাগে বিলে পানি কমতে শুরু করার কারণে বিলের জমি জেগে ওঠে। ওই জমিতে অল্প পরিমাণে পানি থাকায় দু-একটি ছোট মাছ ও শামুক, পোকা মাকড় থাকে যা খাওয়ার লোভে অতিথি ও দেশীয় প্রজাতির পাখিরা দল বেধেঁ বিলে ভিড় জমায়। এই সুযোগেই কিছু লোভী শিকারী বিল ও নদীর জলে ফাঁস জাল, বিশেষ ফাঁদ ও দানাদার বিষ দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে পাখি শিকার করে। এ ছাড়া ও বিলে এক শ্রেণীর মৎস্যজীবি মাছের পাশা-পাশি ভোর রাতে কারেন্ট জাল দিয়ে বালিহাস,বক,চাহা সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শিকার করে।

তিনি আরও জানান এবার শীতে অন্যান্য বছরের তুলনায় ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে অতিথি পাখির অবাধ বিচরন দেখা গেছে। জবাই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষন কমিটির সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বিল থেকে বিলুপ্ত ও হারানো প্রজাতীর পাখি পাতি সরালি (উবহফৎড়পুমহধ লধাধহরপধ) আবার বিলে ফিরে আসছে। জবাই বিল ও পূর্ণভবা নদীতে এই পাখিরা দিন রাত বিচরন করছে। জবাই বিল ও পূর্ণভবা নদীর সৌন্দর্য্য বর্ধনে অতিথি পাখির বিচরন এবার নতুন রূপ দিয়েছে। দিনরাত কিচির মিচির কলতানে মুখরিত বিল ও নদী যা দেখে পাখি প্রেমিকদের মন জুড়িয়ে যাবে । অত্যান্ত দুঃখজনক হলেও সত্য এই সুন্দর পাখিগুলো বিভিন্ন সময়ে শিকারীর হাতে ধরা পড়ছে। রাতের আধারে শিকারীরা বিলে ও নদীর জলে জাল পেতে রেখে অবাধে ওই পাখি শিকার করছে।

জবাই বিল জীব বৈচিত্র সংরক্ষন কমিটির সদস্যগণ সম্প্রতি একজন শিকারীকে হাতে নাতে ধরতে সক্ষম হয়। এ সময় শিকারীর নিকট থেকে পাখি ও জাল আটক করা হয়। পরে আটকৃত শিকারী ভুল স্বীকার করায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। জীব বৈচিত্র সংরক্ষনে পরিবেশ বাদী সংগঠনের তৎপরতা ও স্থানীয় বন বিভাগ সহ প্রশাসনের কড়া নজরদারী ও জন সচেতনা মুলক কর্মকান্ড অব্যাহত থাকলে অল্প সময়ে বন্য প্রানী ও পাখি শিকার বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ দিকে তথ্য অনুসন্ধানে জানাগেছে উপজেলার কলমুডাঙ্গা চৌমুহনী বাজারে প্রতিদিন সকালে প্রতি জোড়া চাহা পাখি ১৫০ থেকে ২০০টাকা, বালিহঁস প্রতিটি ৩০০টাকা, বক ও কক পাখি ৩০০টাকা জোড়া হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। জবাই বিল ও পুর্ণভবা নদী এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জবাই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষন কমিটির সদস্যরা অতিথি পাখি শিকার বন্ধে প্রচারণা চালালেও জনসচেতনতার অভাবে পাখি শিকার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, ২০১২ইং সালে এই বিষয়ে আইন পাশ হলেও পাখি শিকার বন্ধে ওই আইনের প্রয়োগ নেই। সরকারি ভাবে পদক্ষেপ গ্রহনের পাশা পাশি জন প্রতিনিধি সহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পাখি শিকার বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।

স/অ